গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী
নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায়
আদালতে সাক্ষ্য দিলেন সেই নারী। এ সময় মামলার দুই আসামি দেলোয়ার হোসেন দেলু ও আবুল কালাম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকালে জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জয়নাল আবেদিনের আদালতে সাক্ষী দেন তিনি। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু। বাদী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন এবং আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদল। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ লাবলু। তিনি বলেন, স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতে উপস্থিত থাকা আসামিদের পুনঃরায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৩ আগস্ট পরবর্তী শুনানীর দিন দার্য করা হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার আদালতে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর আসামিদের ভিডিও ধারণ করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হয় আসামিরা। পুলিশের উপস্থিতিতে তারা গণমাধ্যমর্কীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এবং মারধরের চেষ্টা করে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর নির্যাতিতা ওই নারী বাদি হয়ে দেলোয়ার হোসেন ও আবুল কালামকে আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্থানীয় সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনী স্বামীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে প্রহার করে। সেই দৃশ্য মোবাইলফোনে ধারণ করেন অভিযুক্তরা। আহত ওই নারী চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে জেলা সদরে তার বোনের বাসায় পালিয়ে যান। সেখানে গিয়েও অভিযুক্তরা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। গৃহবধূ এতে রাজি না হওয়ায় আগের ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশ প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। তখন নারী নির্যাতন মামলার পাশাপাশি বেগমগঞ্জ থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ইসরাফিল, শামছুদ্দিনসহ সাতজনের নামে মামলা হয়। মামলার তদন্ত ভার পায় পিবিআই। তদন্ত শেষে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ইসরাফিল, শামছুদ্দিন ও এজাহারের বাইরের নুর হোসেন রাসেল ও জামাল উদ্দিন ওরফে প্রবাসী জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করল পিবিআই। প্রমাণ না মেলায় এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারী নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের পর গড়ে উঠা আন্দোলনে আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার দাবিটি প্রদাণ হয়ে উঠে। যে দাবি মেনে নেয় সরকার।