বিয়ে পাগলা কথিত সাংবাদিক রাজু অঢেল সম্পত্তির মালিক
নব দেশ বার্তা নিউজ ডেস্কঃ                         শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজু (৪৩)। আগে ছিলেন চা বিক্রেতা। তারপর ছিলেন ট্রাফিক পুলিশের টেন্ডল হঠাৎ করে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে কোনো ধরনের সাংবাদিকতায় না থাকলেও এখন নামের আগে পদবী লাগান সাংবাদিক ও সম্পাদক। কখনও মফস্বলের সাংবাদিক, আবার কখনও নগরের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন সে। তার ফেসবুক আইডির রাজ পিংকি একটি আইডিতে তার একাধিক নারীর সাথে আপত্তিকর বিভিন্ন ছবি পাওয়া গেছে। অন্যদিকে স্থানীয় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে এই ভুয়া সাংবাদিক। এসব কার্ড দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষকে হুমকিসহ বিভিন্ন উপায়ে চাঁদা দাবি করে চলেছে সে। এতে বিপাকে পড়ছেন পেশাদার সাংবাদিকরা। সাংবাদিকতার মতো একটি মহান পেশার মর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে। বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকরা। হঠাৎ করে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে যাওয়া কথিত সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজু নোয়াখালীর জেলার সুধারাম থানার ভাটিরটেক গ্রামের কৃষক আবদুল মালেকের ছেলে। বর্তমানে তার বাবা বেকার। রাজু বিয়ে করেছে ৪টা। একটা বউ থাকে মাদারবাড়ি, নোয়খালীতে একটা, বাকি একটা ফটিকছড়িতে এবং আরেকটি বউ দুই ছেলে রেখে মৃত্যু বরন করেন। অভাব অনটনের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। টানাপোরেনের সংসারে রহস্যজনকভাবে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যান রাজু। অভিযোগ রয়েছে, সল্টগোলা ক্রসিংয়ে চা আনা নেয়ার ফাঁকে পুলিশের সাথে পরিচয় ঘটে। তখন থেকে আর থাকে পিছনে পিঁড়ে থাকাতে হয়নি। পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশে কখনও সে ট্রাফিক পুলিশ, কখনও ট্রাফিকের টেন্ডল (ক্যাশিয়ার), কখনও আবার কথিত ‘অনলাইন টিভি’র চেয়ারম্যান এমন সব পরিচয়ে বিস্তৃত করেছেন চাঁদাবাজির জাল।

জমি দখল, দোকান দখল বিভিন্ন উর্ধ্বতন পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে সুবিধা আদায় ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সে এ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে যান বলে এলাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের বাসায় সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনায় গোপন বৈঠককালে বিয়ে পাগলা শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজুকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তিন মাস কারাভোগের পর বেরিয়ে ফের নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং মোড়ে টেন্ডল হিসেবে যোগ দেন রাজু। টেন্ডল রাজু ইংরেজিতে “রাজপাখি’ নামে ফেইসবুক আইডি খোলে বিভিন্ন সময় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার, বিষোদগার এবং বিএনপির গুণকীর্তন গেয়ে ফেইসবুক পোস্ট দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এরপর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে আগ্রাবাদের চৌমুহনীর হোটেল হক টাওয়ারের এক পোশাককর্মীকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে শাহাদাত হোসেন রাজু। নগরীর ডবলমুরিং থানায় এ ঘটনায় ধর্ষিতা নারী বাদী হয়ে শাহাদাত হোসেন রাজুর নামে মামলা করে। মামলার পর আটক হওয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন গাড়ী থামিয়ে গাড়িতে চোরাই মালামাল রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গাড়িতে থাকা লোকজনদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। টাকা না দিলে ছবি তুলে পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলে তা প্রকাশ করা হবে বলে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবী করে। দীর্ঘ কারাভোগের পর একটি অনলাইন পোর্টাল “এন প্লাস টিভি” খুলে যার সম্পাদক রাজু আর টেন্ডল রাজু। সে চট্টগ্রামে শত শত গাড়িতে ভুয়া অনলাইন এন প্লাস ‘টিভি’র স্টিকার সেঁটে ট্রাফিক টেন্ডল রাজুর চাঁদাবাজি নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রচারিত হয়েছে। তবে সচেতনমহল বলছেন, জাল কার্ডধারী সাংবাদিকরা নানা অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছে। নিজেদের কখনো সাংবাদিক কখনো বা মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন প্রতারণা চালিয়ে আসছে একটি প্রতারকচক্র।সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে যারা প্রতারণা করছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক এমনটাই দাবি জানিয়েছেন সচেতনমহলসহ ও সাংবাদিকরা। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তাদের ব্যাপারে নীরবতা পালন করছেন। কেউ এসব দেখেও দেখেন না। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, আগে সল্টগোলা মোড়ে সে চা বিক্রি করতেন, এখন সে কীভাবে সাংবাদিক হয়ে গেলেন। তা আমাদের বোধগম্য নই। কথিত ওই বিয়ে পাগলা সাংবাদিকের ক্ষমতা ও অর্থের উৎস কি? শাহাদাত হোসেন ওরফে রাজুর সঙ্গে কথা বললে, সে জানায় আপনারা যা খুশি লেখেন, আমার বিরুদ্ধে লিখলে কিছু হবে না। সে নিজেকে সরকার দলীয় একজন হোমড়া-চোমড়া হিসেবে পরিচয় দেন। দলে পদ পদবী না থাকলেও নিজেকে সরকারী দলের সদস্য দাবি করেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ