যমুনার উজানের ঢল বগুড়ায় ৫৮ গ্রামের ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
গেল কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ২৯ আগস্ট রোববার সকাল ৬টা নাগাদ সেই পানি বিপদৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নিচু এলাকার বসত-বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দূরবর্তী চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদী ফুলে ফেঁপে ওঠায় সারিয়াকান্দি উপজেলা এলাকায় ৬১ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ৫৬টি গ্রামের ৯ হাজার ৫০০টি পরিবাররের ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। পাশের ধুনট উপজেলায় এখনও ফসলি জমি আক্রান্ত না হলেও চর বেষ্টিত দু’টি গ্রামের শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানেও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জল মগ্ন হয়ে পড়েছে। পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাসনিয়া জানান, আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকেই যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। তবে ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পাউবো’র বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, উজানে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে যমুনায় আরও কয়েকদিন দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে তার দাবি পানি বাড়লেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙ্গণের কোন আশঙ্কা নেই। এ কারণে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিয়েছেন।

সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদী তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলের মোট ৫৬টি গ্রামে পনি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৪টি গ্রামে পানি ঢুকেছে চরবেষ্টিত সংলগ্ন বোহাইল ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে। তার পাশের কাজলা ইউনিয়ন এবং দূর্গম চর চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি করে আরও ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাশের সোনাতলা উপজেলা সংলগ্ন হাটশেরপুর ইউনিয়নের ৮টি, পাশের সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের ৬টি, চর বেষ্টিত কর্ণিবাড়ি ইউনিয়নের ৫টি এবং পাশের ধুনট উপজেলা সীমান্ত সংলগ্ন চন্দনবাইশা ইউনিয়নের আরও ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বাকি একটি মাদ্রাসা। চর কার্ণিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দেলবর রহমান জানিয়েছেন, চরাঞ্চলের বসত-বাড়িগুলো উঁচুতে থাকায় সেগুলোতে এখনও পানি ঢোকেনি। তবে তাদের ফসলি জমিগুলো তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদরের বাসিন্দা আকবর আলী জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন নিচু জমিতে তিনি আমনের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’ সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, বন্যায় ৫০ হেক্টর রোপা আমনসহ এ পর্যন্ত ৬১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোয় বিতরণের জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তা উত্তোলনও করেছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রোববার থেকে তা বিতরণ শুরু হবে। ধুনটে যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে এর আগে ধ্বসে যাওয়া ভাঙ্গণ প্রতিরোধক বানিয়াযান স্পারের মেরামত কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, কৈয়াগাড়ি এলাকার তিনটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। আর পানি ঢুকতে শুরু করছে শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, বানিয়াযান, বরইতলী, কৈয়াগাড়ি, ভান্ডারবাড়ি, পুকুরিয়া ও ভুতবাড়ি গ্রামের বাড়িঘরগুলোতে। গোশাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, যমুনা নদীর পানি যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যেই ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বন্যার আশঙ্কায় অনেকে তাদের বাড়ি-ঘরের সামনে বাঁশের মাচা তৈরিসহ নিকটবর্তী বাঁধে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে বগুড়ার ধুনটে বানিয়াযান এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত যমুনা নদীর ভাঙ্গণ প্রতিরোধক স্পার-এর কোন ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে কি’না এমন প্রশ্নের জবাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান জানান, ধ্বসে যাওয়া অংশ এরই মধ্যে মেরামত করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে আর কোন ভাঙ্গনের আশঙ্কা নেই।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ