দীর্ঘদিন লকডাউন শেষে পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে দর্শণার্থীদের উপচে পড়া ভীড়
আবদুল মামুন,সীতাকুণ্ড ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্যে গড়া চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। সমতল ভূমির ক্ষুদ্র অংশের মাঝে লোনা জল মিশ্রিত নদীর জল তরঁঙ্গ ও গুল্মলতায় মুড়ানো পাহাড়ি বনভূমির মাঝে পুরোনো সভ্যতাকে আলিঙ্গন করে আছে সনাতনী সম্প্রদায়ের আদি নিদর্শন মঠ-মন্দির। হাজার বছরের পুরোনো তীর্থ ভূমি দেব-দেবতাদের পূণ্য স্থানের স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্বদরবারেও দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার বছর ধরে। মূঘল, ইংরেজ, পাকিস্থান শাসন থেকে ক্ষুদ্র জনবসতি জড়িয়ে গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চল আজও বিরাজমান। পর্যটন কেন্দ্রের সাথে কর্মসংস্থানের পরিপূর্ণতা পাওয়া দেশী-বিদেশী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের রয়েছে তীঘ্ন দৃষ্টি। শিল্পাঞ্চলের সাথে পর্যটনের নাম-ডাক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠে ঐতিহ্য নির্ভর সীতাকুণ্ড। ফলে আমাজন বনের সুদৃশ্য পাহাড় ঘেরা প্রকৃতি সৃষ্ট সৌন্দর্য্য অবলোকনে ভীড় জমিয়ে পাহাড় ও সমুদ্রে উপচে পড়ছে পর্যটকরা। ইকোপার্ক, গুলিয়াখালী, ছোট দারগারহাট সহস্রধারা ঝর্ণা, চন্দ্রনাথ ধাম, ভাটিয়ারী সানসেট পয়েন্ট, কুমিরা ফেরী ঘাট ব্রীজ ও পোর্টকানেকটিং বীচসহ সকল পর্যটন কেন্দ্রে বছর জুড়ে থাকছে পর্যটকের ভীড়ে সরগরম। প্রকৃতির নিজস্ব সাজে গড়া পাহাড় ও সমুদ্রের সৌন্দর্য্য অবলোকনে দিনপার। প্রত্যান্ত অঞ্চল হতে পৌরসদরে পা ফেললে ৩ কিলোমিটারের ব্যবধানে মিলবে ৩ টি পর্যটন কেন্দ্র। স্থানীয় যানবাহনে ১ কিলোমিটার দক্ষিণের পথে ফকিরহাট হতে পূর্ব রাস্তায় হেটে চললে দৃশ্যমান হয়ে উঠে পাহাড় ঘেরা বোটানিকেল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। কোলাহল মুক্ত নির্জনতার মাঝে এলোমেলো পথের শুরুতে চোখ জুড়াবে বনবিভাগের অফিসের চারপাশের সু-দর্শন গোলাপ বাগান, কাজী নজরুল ভাস্কর্য, শিশুপার্ক ও চন্দ্রধামের ইকোপার্কেও মানচিত্র। এরপর উচু-নিচু টিলা বেয়ে উপরে উঠতে মন জুড়িয়ে পাগল করে তুলবে দেশী-বিদেশী বৃক্ষের মাঝে স্থাপিত বিশ্রামগার ও সহস্রধারা ঝর্ণা। প্রায় ৩’শ সিড়ির উপরে পাহাড় বেধ করে বেরিয়ে আসা মনমুগ্ধকর ঝর্ণা ধারার দৃশ্য। এটি দেখতে ভূল করলে মিস করতে হবে পার্কে ঘুরার স্বাধ। ভ্রমণের পরিপূর্ণতা লাভে শত কষ্টের মাঝেও ঝর্ণায় পাড়ি জমাতে পিছ-পা হয় না শিশু, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ।

এছাড়া পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ি পথে চলতে চলতে চোখ জুড়িয়ে ভেসে উঠে সবুজের মাঠ আর সাগরের লোনা জ্বলের ঝিলিক। সে সাথে লাল আবায় ডুবে যাওয়া সূর্যও মনে তাক লাগানো দৃশ্য চির স্থায়ী হয়ে গাঁথবে হৃদয়ের মনি কুটায়। এভাবে ভূতুড়ে পথ পাড়ি দিয়ে উচ্চ শিখরে পৌঁছালে উকি-ঝুকি দিয়ে অবতির্ন হবে প্রাচিন সভ্যতার নিদর্শন চিহ্নিত হাজার বছরের পুরোনো দেব- দেবতাদের আবাসস্থল চন্দ্র নাথ ধাম। চন্দ্রনাথ ধামের নির্জনতার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মঠ-মন্দির জগত সৃষ্টির কালের সাক্ষী। যা যুগের পর যুগ খোঁজ থাকলেও শেষ হবার নয়। শিক্ষা নেয়া ও দেখার শেষ না হতে সন্ধ্যার ঝাঁপসা আলোয় নেমে পড়তে হবে থাকা-খাওয়া ও নিরাপত্তা জনিত কারণে। পাহাড়ের আনন্দের সমাপ্তি ঘটিয়ে গুলিয়াখালী বীচের লোনা জলের শোঁ শোঁ শব্দের বহমান বতাস ঘ্রান পেতে নিতে হবে প্রস্তুতি। বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের একদল ছাত্রের পেইস বুক লাইভের ভাইরালে ফুটে উঠা বীচের সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ছাত্রদের চোখে ঘাস মুড়ানো সবুজ ছাদও হয়ে উঠে ব্যতিক্রমী দৃশ্য। এছাড়া ঘাস মুড়ানো বিছানার পাশে ছোট ছোট গর্তে পানির হলি খেলা ব্যাকুল করে তুলে মনমন্দির। প্রকৃতির এই শিল্প কর্ম ভিন্ন অভিজ্ঞার সঞ্চার করে দেশী-বিদেশী বিনোদন প্রেমীদের কাছে। আবেগে জড়িয়ে থাকা মানুষদের উপভোগ্য স্থানে পরিণত হওয়ায় লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠেছে গুলিখালী সমুদ্র সৈকত। এই বীচে নেই বিড়ম্বনা ও টিকেট না থাকায় এবং যাতায়াত সহজতর হওয়ায় রাত অবধি ঘুরপাক খেতে সমস্যা নেই দর্শনার্থীদের। উপকূলের পথ ধরে চলতে থাকলে কেউড়া বাগানে মাঝে উকি ঝুঁকি মারা মায়া হরিণের ঝাঁক চোখে-মুখে জাগায় শিহরণ। সে সাথে নানা জাতের পাখির কল-কাকলির সুর লহরীর গুঞ্জনে ব্যাতি-ব্যস্ততা সময় কাটে সহজভাবে। জেলের ডিঙ্গী নৌকার সারি ভাঁসিয়ে নিবে স্বপ্নের অজানা এক রাজ্যে। আর মন মাতানো হওয়ায় কাটানো দিনের সব টুকু সময় গুজারালেও মায়া জড়ানো বীচ ছেড়ে আসা হয়ে যাই দুষ্কর। যদি সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে হোটেল রির্সোটের ব্যবস্থা থাকলে জোৎসনার আলোয় চোখ মেলে রাতের মিতালী দেখা সম্ভব হত। তবে সে আশাও একদিন পূরনের সম্ভবনাময় দ্বার খুলবে বলে আশা পর্যটক ও স্থানীয়দের। সমূদ্র শেষে পাহাড়ের শিখরে দাঁড়িয়ে সানসেটের অপরুপ দৃশ্য দেখতে যেতে হবে ভাটিয়ারীর সেনাবাহিনী সংরক্ষিত বিনোদনের কেন্দ্রে। পাহাড়ি টিলার মাঝে আকা-বাকা সৌন্দর্য্য বর্ধক লেক সহার মানাবে অতীতের সকল সৌন্দর্য্যকে। পাহাড়ের গভীর অরণ্যে উচু টিলা বেধ করে নেমে আসা ছোটদারগারহাটের স্বহস্র ধারা ঝর্ণা সৌন্দর্য্য বর্ণনাতীত। মেঠো পথ বেয়ে সকল প্রকার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে স্বীকার করে গন্তব্য শেষে আনন্দের আত্নতৃপ্তি মুছে দেবে পথের কষ্ট। উপজেলার নানা স্থানে পাহাড়–সমুদ্র পর্যটনের মাধ্যম হলেও থাকা–খাওয়ার সু-ব্যবস্থা অভাবে বিশ্রামের অভাববোধ করতে হয়। তবে পৌরসদরে রয়েছে আবাসিক ও খাওয়ার হোটেলের সু-ব্যবস্থা থাকায় জটিলতা থেকে মুক্তি পান দূর-দুরান্তের দর্শনার্থীরা। ইকোটুরিজমের স্বীকৃতি মিললে সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলে মনে করেন নাগরিক কমিটির সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দীন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ