সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন এখন মরণ ফাঁদ যে কারণে
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন এখন মরণ ফাঁদ যে কারণে
আবদুল মামুন,সীতাকুণ্ড ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
চট্রগ্রামের সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একের পর এক এসব দুর্ঘটনায় ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ। কিন্তু দুর্ঘটনা রোধের দায়িত্ব যে স্টেশন মাস্টারের কাঁধে, দায়িত্ব পালনে তিনি গাফিলতি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (৯সেপ্টেম্বর) সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশনেই এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মাহবুব(২০) নামের এক যুবক।যিনি পাহাড়ি ঝর্ণা বিশাল সমুদ্র সৈকত আর নয়নাভিরাম ঝাউবাগানের হরিণদের দূরন্তপনা দেখতে ছুটে এসেছিলেন সীতাকুণ্ডে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সীতাকুণ্ডের মাটিতে পা রাখাতেই ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন তিনি। নিমিষেই যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মাহবুবের সাথে সীতাকুণ্ডে আসা ১০পর্যটকের মাথায়। কিন্তু কেন, কিভাবে ঘটেছিল সে দুর্ঘটনা? ঘটনাস্থলে উপস্থিত যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা মেইল নামক ট্রেইন থেকে শত শত যাত্রী নামার সময় বিপরীত দিক থেকে পাশ ঘেঁষে ছুটে আসা সূবর্ণ এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মাহবু্ব নিহত হন।
এসময় আরও কয়েকজন ব্যক্তি আহত হয়।ঘটনার সময় ঢাকা মেইল ট্রেনটি তখন মেইন লাইনের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। স্থানীয়রা জানান প্রতিদিন শত শত পর্যটক ঢাকা মেইল যোগে সীতাকুণ্ডে আসে।নিয়মিত ভোর সাড়ে ৬টায় যখন এ ট্রেনটি আসে তখন একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে ঢাকামুখী দ্রুতগামী সূবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটিও এ স্টেশন অতিক্রম করে। এসময় ঢাকা মেইল যদি মেইন লাইনে দাঁড় করানো হয় সেক্ষেত্রে শত শত যাত্রী নামতে গিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে আসা সূবর্ণ এক্সপ্রেসের সাথে ধাক্কা লাগা বা চাপা পড়ার সম্ভবনা থাকে। এজন্য অনেক সময় ঢাকা মেইলটি কে সীতাকুণ্ড স্টেশনের ৪নং লাইন অথবা প্ল্যাটফর্ম লাইনে দাঁড় করানো হয়ে থাকে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার খামখেয়ালি করে ঢাকা মেইল কে মেইন লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। আর এতেই ঘটে দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছরে এধরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ৯সেপ্টেম্বর দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তোফাজ্জল হোসেন ঢাকা মেইল ট্রেনটি মেইন লাইনে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আসলে মেইন লাইনে থাকা অবস্থায় এত লোক ওঠা-নামা করা সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা মেইলে নিয়মিত যাতায়ত করেন এমন একজন যাত্রী নুর মুহাম্মদ জানান, প্রয়াত স্টেশন মাস্টার মতিলাল বড়ুয়া থাকা অবস্থায় ঢাকা মেইলটি প্ল্যাটফর্ম লাইনে দাঁড় করানো হতো। এতে নারী পুরুষসহ অসুস্থ রোগীদের ওঠা-নামা করতে অনেক সুবিধা হতো। এবিষয়ে সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাহমুদুর ইসলাম ভুইয়া জানান, ঘটনা যা ঘটার তা তো ঘটেই গেছে। এটাই হয়তো তার নিয়তি। রেলওয়ে পূর্বঅঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত জানান, প্ল্যাটফর্ম বা মেইন লাইন যেখানেই দাঁড় করানো হোক সেটা স্টেশন মাস্টারের এখতিয়ার। পিছনে অন্য কোন ট্রেন না থাকলে মেইন লাইনে দাঁড় করানো যাবে। যদি রেলওয়ের স্বাভাবিক নিয়ম প্ল্যাটফর্ম খালি থাকলে লোকাল ট্রেন প্ল্যাটফর্ম লাইনে দাঁড় করানো হয়।