দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধ করা গেলে সাক্ষরতার সফলতা অর্জন করা সম্ভব
হোসেন মিন্টুঃ
“বাংলাদেশে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৫.৬ শতাংশ। এখনও ২৪.৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। সংখ্যার হিসেবে এটি বিশাল। বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাবঞ্চিত রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করা দূরূহ। সেইসাথে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অব্যবস্থাপনা দূর করা গেলে শিক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব।” মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। ‘স্বাক্ষর’ শব্দের অর্থ দস্তখত। ‘স্বাক্ষর’ করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি শুধুমাত্র নাম দস্তখত করতে পারেন। তার সাক্ষর হওয়ার যোগ্যতা নাও থাকতে পারে। অন্যদিকে সাক্ষর বলতে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিকে বোঝায়। অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন বলতে বোঝায় পড়া, লেখা ও হিসাবনিকাশ করতে পারা। সুতরাং ‘সাক্ষর’ মানে সেই ব্যক্তি যিনি একাধারে পড়তে, লিখতে ও হিসাবনিকাশ করতে পারেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (জেএসইউএস) ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ বাস্তবায়নে মানবকেন্দ্রিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল দক্ষতার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল বিভাজন মোকাবেলা যুব ও প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এডভোকেসি করার পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর সাক্ষরতা কর্মসূচির প্রসারে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতার জন্য এডভোকেসি করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটস্থ ‘গ্যালারি হলে’ অনুষ্ঠিত হয় এক মতবিনিময় সভা।

জেএসইউএস ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ও পরিচালক কবি সাঈদুল আরেফীনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সূচিত এ মতবিনিময় সভা সভাপতিত্ব করেন জেএসইউএস নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমীন পারভীন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নারী নেত্রী, উন্নয়ন সংগঠন ইলমা’র নির্বাহী পরিচালক জেসমিন সুলতানা পারু, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক প্রশিক্ষক শামসুদ্দিন শিশির, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক অঞ্চল চৌধুরী। জেএসইউএস প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এসডিপি) আরিফুর রহমানের সঞ্চালনা মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, স্বপ্নীল’র প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী শিকদার, স্যুট’র প্রধান নির্বাহী জেবুন্নেছা বেগম চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ উত্তম কুমার আচার্য্য, ড্যাম’র জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তাইজুল ইসলাম, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, এসএমসি সদস্য আনিস খোকন, শিক্ষক প্রতিনিধি প্রিয়া ভট্টাচায্য, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মোস্তাকিমুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মাঞ্জুরুল আরেফীন, থানা প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওওএসসি, জেএসইউএস। সভায় বক্তাবগণ নানা বিষয়ে সুপারিশমালা পেশ করেন। যার মধ্যে ছিল, বিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হলেও স্বল্প পরিসরে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ প্রদান, ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সর্বোপরি ডিজিটাল বিষয়ের অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জেএসইউএস নির্বাহী পরিচালক সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘গণসাক্ষরতা অভিযান ও জেএসইউএস’র আয়োজিত এ সভা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে, যা পরবর্তীতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে এ্যডভোকেসি’র একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সর্বোপরি এ আয়োজনের সকলের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে শিক্ষার উন্নয়ন এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে তিনি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।”

নিউজটি শেয়ার করুনঃ