চাঞ্চল্যকর বৃদ্ধা খু‌নের রহস্য উদঘাটন আসা‌মী গ্রেফতার
ময়মন‌সিংহ জেলা প্রতি‌নি‌ধিঃ
ময়মন‌সিং‌হের নান্দাইল উপ‌জেলার মোয়া‌জ্জেমপুর ইউ‌নিয়‌নের ৭৩ বছ‌রের বৃদ্ধা খু‌নের রহস‌্য উদঘাটন ক‌রে‌ছে পি‌বিআই। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে নান্দাইল উপ‌জেলার ২নং মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অনুমান ৩০০ ফুট দূরে অজ্ঞাতনামা পুরুষের গলাকাটা মৃতদেহ পাওয়া যায়।অজ্ঞাতনামা আসামীরা ডিসিস্টকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা ক‌রে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়। মাত্র ৬দিনের মধ্যে উক্ত চাঞ্চল্যকর, ক্লুলেস নৃশংস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা। ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধান ও পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এর সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই ময়মনসিংহ টিম উক্ত হত্যাকান্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করে।

তদন্তকালে পিবিআই এর ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে অজ্ঞাত মৃত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত পূর্বক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার ২৮ সে‌প্টেম্বর সকাল ১০ টায় হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী আবুল হাসানকে নরসিংদী জেলার মাধবদী থানাধীন ফুলতলা গ্রামের জনৈক চাঁন মিয়ার ভাড়া বাসা হতে গ্রেফতার করে এবং আসামীর নিকট হতে লুন্ঠিত ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকার মধ্যে নগদ ৮,০০০/- (আট) হাজার টাকা, ০২ (দুই) টি মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড ও মৃতের কাপড় সহ ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে আসামীর সনাক্তমতে নান্দাইল এলাকার ঘটনাস্থলের পাশের ধান ক্ষেত হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার হয়। ইতোমধ্যে উক্ত ঘটনায় নান্দাইল থানাধীন কালেঙ্গা গ্রামের চৌকিদার মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে নান্দাইল থানার মামলা নং-২৬, তাং-২৮/০৯/২০২১ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃ দায়ের করেন। মৃতের নাম মোঃ ফজলুল হক (৭৩), পিতা-আঃ ছাত্তার, সাং-তেলিয়া, থানা-শিবপুর, জেলা-নরসিংদী । মৃত ফজলুল হক তার স্ত্রী সন্তানসহ শ্বশুর বাড়ীতে থাকতেন। গত অনুমান সাত বছর পূর্বে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হলে একাই তার নিজ বাড়ী নরসিংদী সদর থানাধীন খাটেহারা পূর্বপাড়ায় বসবাস করতে থাকেন।হত্যাকারী আবুল হাসান (৩৫), পিতা-মৃত গিয়াস উদ্দিন, সাং-কালিয়া পাড়া, থানা- নান্দাইল, জেলা-ময়মনসিংহ ডিসিস্টের বাড়ীতে স্ত্রী নাজমিন আক্তারকে নিয়ে দেড় বছর যাবত ভাড়া থাকত। ভাড়া থাকার সুবাদে ফজলুল হক এর সাথে আবুল হাসানের সুসম্পর্ক হয়। হত্যাকারীর স্ত্রীর সিজারের জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সে ফজলুল হকের নিকট হতে ৭,০০০/- (সাত হাজার) টাকা ধার নেয়। হত্যাকারীর ধারণা ফজলুল হকের নিকট অনেক নগদ টাকা-পয়সা থাকে। এ ধারণা থেকে আবুল হাসান পুনরায় তার নিকট আবারো টাকা ধার চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করে। এতে হত্যাকারী আবুল হাসান ফজলুল হকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং পুরো টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরবর্তীতে কৌশলে ফজলুল হককে হত্যাকারীর নিজ বাড়ী নান্দাইলে বেড়াতে নিয়ে আসার পথে রাত অনুমান ০৭.৪০ ঘটিকার সময় বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে ধান ক্ষেতের আইলে ফজলুল হককে ধারালো দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে এবং ঘটনাস্থলেই হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি ঢিল দিয়ে ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়। ফজলুল হককে হত্যার পর হত্যাকারী আবুল হাসান মৃতের সাথে থাকা নগদ ৩০,০০০/- (ত্রিশ) হাজার টাকা ও ০২ (দুই) টি মোবাইল নিয়ে পলাতক হয়। হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য এবং আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী আবুল হাসানকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে মামলাটি পিবিআই কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। মামলাটি অধিগ্রহণান্তে গ্রেফতারকৃত আসামীকে আগামীকাল ২৯সে‌প্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ