ভাইয়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েও চলে গেল তানিয়া
ভাইয়ের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েও চলে গেল তানিয়া
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নোনাঘাট এলাকার, মুনছুর খানের মেয়, তানিয়া খাতুন(২৫) তার শশুর বাড়িতে বিষখেয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১ অক্টোবর (শুক্রবার) ভোর ৫টার সময় এঘটনা ঘটে। পরিবার সূত্রে জানাযায়, গত পাঁচ বছর আগে পারিবারিক ভাবে, তানিয়ার পার্শবর্তী খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা গ্রামের, মিলশ্রমিক মোঃ তরিকুলের সাথে বিয়ে হয়।
এবিষয়ে তানিয়ার বড় ভাই ইমরান বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমার বোন ফোন করে কেঁদে কেঁদে আমাকে বলেছিলো। ভাইয়া ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ভাইয়া একটু তাড়াতাড়ি আয়, ওরা মেরে ফেলবে। “ সন্ধ্যার আগে ছোট বোন শ্বশুর বাড়ি থেকে এমন আঁকুতি জানিয়েছিল। আমি দুরে থাকায় ছোট ভাই মামুন খানকে দ্রুত ফোন করে বোনের বাড়িতে যেতে বলি। ছোট ভাই তখন বোনকে রক্ষার জন্য পাগলের মত ছুটে যায়। কিন্তু অসহায় এ ভাই পারেনি প্রাণপ্রিয় বোনকে রক্ষা করতে। বাড়ি পৌছানোর আগেই খবর পায় বোনের অবস্থা খারাপ, বিষ পান করেছে। তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছেন প্রতিবেশীরা। পথিমধ্যে এমন খবর পেয়ে ছোট ভাই মামুন ফিরে আসেন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।বোনের অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় ডাক্তারদের পরামর্শে বোনকে নিয়ে ছুঁটে যান খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে পৌছানোর পর দ্বায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহত তানিয়ার পরিবার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে, তার স্বামী তরিকুল। বিয়ের সময় সোনার গহনাসহ সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর না পেরোতেই সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। স্বামী ঠিকমত কাজ না করে বাউন্ডুলেপনা করায় সংসারে অভাবের কারনে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকতো।উপয়ান্তর না পেয়ে তানিয়ার দুই ভাই ইমরান খান ও মামুন খান বোনের সংসারের খরচ বহন করা শুরু করে। কিন্তু তাতেও শান্তি ফেরেনা তানিয়ার কপালে।
প্রায়ই তানিয়াকে মারধর করতো বলে অভিযোগ করে মেয়ের স্বামী তরিকুলের শাস্তি দাবি করেন। এবিষয়ে নিহত তানিয়ার ছোট ভাই মামুন খান অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের তিন বছর পর তানিয়া জানতে পারে তরিকুলের এক নারীর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক রয়েছে। ততদিনে তানিয়ার কোল আলো করে এসেছে তাজ (৩) নামের এক ছেলে সন্তান। পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে তানিয়া অনেকবার তার মা-ভাইকেও বলেছে। পরকীয়া সম্পর্কে প্রতিবাদ করলেই তানিয়ার উপর নেমে আসতো ভয়াবহ নির্যাতন। এক পর্যায়ে বোন ও ছোট্ট শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে এলাকা থেকে একটু দুরে দুই ভাই তাদের জন্য বাড়ি করে দেন। যাতে পরকীয়ার প্রভাবটা কমে, কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। তথাপি ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে তানিয়া সবকিছু নিরবে সয়ে আসছিলো। হঠাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলে পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে ও বাড়ি বাজারঘাটের খরচ না দেয়া নিয়ে তানিয়া কথা বলতেই তাকে চরমভাবে নির্যাতন করে তরিকুল। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে বোন ফোন দিয়ে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। কিন্তু বোনকে রক্ষা করতে পারেনি বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ঘটনার পর থেকে তরিকুলের পরিবার গা-ঢাকা দিয়েছে। বাকরুদ্ধ হয়ে আছে তানিয়ার পরিবার। ৩বছরের ছোট্ট শিশুটি এখনও জানেনা তার মা আর কোনদিন কোলে তুলবে না। স্থানীয়দের মুখে কেবল একটিই কথা কি হবে ছোট্ট শিশু তাজের? এদিকে নিহত তানিয়ার পোস্টমডেম সম্পূর্ণ হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সবশেষে তাকে নিজ পিতার বাড়িতে দাফন সম্পূর্ণ করা হয়েছে। এরিপোর্ট লেখা পযন্ত, মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে পরিবার সূত্রে জানিয়েছেন। এবিষয়ে নিহত তানিয়ার স্বামী ও তার পরিবার গা-ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।