বাবা অপহরণে ছেলেসহ অপহরণকারী গ্রেফতার ৬
এরশাদ হোসেন,বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া পাড়া
গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা রাশেদ (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের সময় ছেলেসহ ৬ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গত ৫ অষ্টোবর মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোস্তফা রাশেদের বড় ছেলে খালেদ মাহমুদ (২৫), রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার বালিয়াপুকুর গ্রামের মৃত আব্দুল মাজিদের ছেলে মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৬), একই উপজেলার কয়েরদারা বিলপাড়া গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩৬), একই জেলার কাশিয়াডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে অলি (৪২), পাবনা সদর উপজেলার পৈলানপুর গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নোমান আরাফাত (২৫), একই উপজেলার ছাতিয়ানী গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে আজিজুর রহমান সুমন (৪৪) ও একই উপজেলার লস্করপুর গ্রামের রেহেজ শেখের ছেলে ড্রাইভার মানিক শেখ (৩২)। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পোড়াপাইকর গ্রামের মৃত আবেদ আলী প্রামাণিকের ছেলে মোস্তফা রাশেদ সেনাবাহিনীর
একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেণ্ট। পোড়াপাইকর গ্রামের পৈতৃক বসতভিটা ছাড়াও
শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়নের মাঝিড়াপাড়া গ্রামে ৩ শতক জমির উপর মোস্তফা রাশেদের একটি বাড়ি আছে। ২০১৫ সালে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর স্ত্রী ও ৩ ছেলেকে নিয়ে পৈতৃক ভিটেমাটি পোড়াপাইকর গ্রামেই বসবাস করতেন মোস্তফা রাশেদ। অপরদিকে শাজাহানপুরের মাঝিড়া পাড়ার বাড়ি ভাড়াদেয়া ছিল। এখন থেকে প্রায় ২ বছর আগে সম্পত্তি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে বিবাদ শুরু হয় মোস্তফা রাশেদের। ওই বিবাদের কারণে গত ২ মাস যাবত পরিবার ছেড়ে মাঝিড়া পাড়ার ৪ কক্ষ বিশিষ্ট বাড়ির ১’টি কক্ষে একাকি বসবাস শুরু করেন মোস্তফা রাশেদ। বাড়ির অপর ৩’টি কক্ষে ৩ জন ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া বসবাসকরছেন।

সেই সাথে সিএনজি চালিয়ে এবং বাড়ি ভাড়া ও পেনশনের টাকা জমিয়ে প্রতি মাসে স্ত্রী সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাতেন তিনি। এদিকে বাবার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে ছেলে খালেদ মাহমুদ (২৫) তার বাবাকে অপহরণ পূর্বক হত্যা ও গুম করার পরিকল্পনা করে বলে মামলায় উল্লেখ করেন বাবা মোস্তফা রাশেদ। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক গত সোমাবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় একটি অজ্ঞাত মোবাইল ফোন থেকে মোস্তফা রাশেদকে জানায় যে, বাংলা লিংক কোম্পানী থেকে গিফ্ট এসেছে, সেটি শাজাহানপুর উপজেলার সি-ব্লক এলাকা থেকে নিতে হবে। রাত সাড়ে ১০ টায় একই নাম্বার থেকে আবারও ফোন আসে গিফ্ট মাঝিড়া স্ট্যান্ড থেকে নিতে হবে। সবশেষে রাত ১২’টার দিকে ফোন করে জানায় যে, গিফ্ট দেওয়ার জন্য মোস্তফা রাশেদের বাসাতেই তারা আসছেন। রাত সাড়ে ১২’টার দিকে মোস্তফা রাশেদ দেখতে পান তার ছেলে খালেদ মাহমুদ ৬ জন সহযোগিকে নিয়ে ঘরে অনধিকার করে শাজাহানপুর থানা পুলিশের পরিচয় দেয় এবং তাদের সাথে থানায় যাইতে বলে। তাতে রাজি না হলে মোস্তফা রাশেদের দুই হাত রশি দিয়ে বেঁধে এবং মুখ চেপে ধরে কোলে তুলে নিয়া মাঝিড়া বাজারের পাশে রাস্তার উপর নিয়ে যায়। সেখানে অপহরণের জন্য তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো চ ১১-৫৪১৫) মোস্তফা রাশেদকে উঠায়। মাইক্রোবাস স্টার্ট দেয়ার মুহুর্তে মোস্তফা রাশেদের বাড়ির ভাড়াটিয়া নাজমুল, ওমর ফারুক, হেলাল উদ্দিন অপহরণের বিষয়টি বুঝতে পেরে দৌড়ে মাইক্রোবাসের সামনে গিয়ে হাজির হয় এবং থানায় খবর দেয়। সংবাদ পেয়ে দ্রুত থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোস্তফা রাশেদকে উদ্ধার করে এবং মাইক্রোবাস সহ অপহরণের সাথে জড়িত ৭ ব্যক্তিকে আটক করে। আপরদিকে গ্রেফতারকৃতদের স্বজনরা জানিয়েছেন, মোস্তফা রাশেদকে মানসিক রোগী উল্লেখ করে তার চিকিৎসার জন্য পাবনা সদরের মাসুম বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘আলোর পথ’ নামক একটি মানসিক/মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ফোন করে মোস্তফা রাশেদের বড় ছেলে খালিদ মাহমুদ। সেই ফোন পেয়ে আলোর পথ মানসিক/ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মাইক্রোবাসে করে মোস্তফা রাশেদকে নিতে এসেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মিরা। রোগী নিতে এসে তারা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ফেঁসে গেছেন। ‘আলোর পথ’র নির্বাহী পরিচালক মো: আলভী আদনান জানিয়েছেন, রোগি নিতেই তার কর্মিরা মাইক্রোবাস নিয়ে বগুড়ার শাজাহানপুরে এসেছিল। শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানিয়েছেন, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে খালিদ মাহমুদ তার বাবা মোস্তফা রাশেদকে অপহরণের পর হত্যা ও গুম করার পরিকল্পনা করেছিল মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় খালিদ মাহমুদ সহ তার ৬ সহযোগিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও আটক করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ