নারিকেল জিঞ্জিরা ভ্রমণ
প্রদীপ দত্ত
দীর্ঘ সাগর পাড়ি না দিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো উপায় নেই ১৭ বর্গকিলোমিটার প্রবাল দিয়ে তৈরি এ দ্বীপ তৈরি হয়েছে আস্তে আস্তে কয়েকশত বছর ধরে ছেড়া দ্বীপ, প্রবাল দ্বীপ এখনো তৈরি হচ্ছে আবার ভাঙছেও কোথাও কোথাও। এই আইসল্যাণ্ডে ঢুকতেই প্রথম চমক লাগে এর নীলজল দেখে আমি দীর্ঘদিন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে চাকুরী সুত্রে বসবাাস করলেও এই আইসল্যাণ্ডে গিয়ে সত্যি সেখানকার প্রেমে পড়ে গিয়েছি। তবে অব্যবস্থাপনাও যেন সমানতালে গ্রাস করার চেষ্টা করছে দ্বীপটিতে যা মনুষ্য সৃষ্ট। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এ আইসল্যাণ্ড রাস্তাঘাট নেই বললেই চলে, বড় জোয়ারে প্রায় সব জায়গা তলিয়ে যায়, নেই ভাল রেস্তোরাঁ এমনকি ভাল রিসোর্টেরও অভাব রয়েছে। যদি কোন কারণে অসুস্থ হন কোনো ডাঃ পাবেন না, বড় জোর ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে খেতে পারেন।এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের অনেকেরই পূর্বপুরুষ মায়নমার থেকে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছেন, নেই কোন হাইস্কুল, কলেজ কিছু মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে যে গুলোর অর্থসংকট রয়েছে বোঝা যায়। এখানকার মানুষ ট্যুরিস্টদের পছন্দ করে এখানকার মানুষের উপার্জনের ৮০% ই এ খাতের, কিছু চাষাবাদও হয় ধান, তরমুজ ও অল্পকিছু সবজি। তবে বেশিরভাগ পন্যই এখানে পৌঁছাতে সাগর পাড়ি দিতে হয় ট্রলারগুলোকে তাই মূল্য সব কিছুরই একটু বেশি।

ট্যুরিস্ট বান্ধব এ আইসল্যাণ্ডের মানুষ আপনাকে স্বাগত জানাবে সব রকম সহযোগিতা করবে তারা জানে ট্যুরিস্টই তাদের লক্ষী উপার্জনের উপায় এরা কমবেশি রিসোর্টগুলোর মালিক এবং এখাতে তারা প্রচুর উপার্জন করে। কিছু রিসোর্টের মালিক বাইরের, এক ছোট ভাইকে পেলাম মেজবাহ সে গোপালগঞ্জের মানুষ পছন্দ করে সাগর, পাহাড়, বই পড়তে পছন্দ করে একটি রিসোর্ট চালাচ্ছে লিজ নিয়ে খুবই আপ্যায়ন করলো রাতে একসাথেই খাওয়া দাওয়া হলো বড় এক কোরালমাছের বারবিকিউ। দারুণ সময় কাটলো হুমায়ুন আহমেদের সমুদ্র বিলাস দেখতে গিয়ে দেখলাম সমুদ্র জোয়ার সেটাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে এভাবে চললে এটা ভাঙনে পড়বে এখানকার মানুষ হুমায়ূন আহমেদ কে খুবই পছন্দ করে। তিনিই প্রথম এজায়গাটাকে মানুষের সামনে তুলে ধরার পথিকৃৎ। মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলো, বাজারে গিয়ে কোনো মিষ্টির দোকান পেলাম না শুধু জিলাপী পেলাম ভালোই। এখানে গরু কম মিস্টি তৈরির ময়রা নেই এমনকি কোন হিন্দু স্থায়ী পরিবার নেই যা দুএকঘর ছিলো তারাও চলে গেছে বা মরে গেছে সন্তানরা জমি জিরাত বেচে চলে গেছে, শেষ একঘর নরসুন্দর রয়েছে। মায়নমারের সীমান্ত ঘেষা এ দ্বীপে কোস্টগার্ড ও বর্ডারগার্ড রয়েছে আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। জেলা পুলিশের একটি ক্যাম্প।এখানে স্থাপনা করা নিষিদ্ধ তবু অগোচরে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। খুব একটা ক্রাইম এখানে নেই কিছু মাদক ব্যবসায়ী আছে মায়নমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে, কিছু আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ে, সারি সারি সুস্বাদু নারিকেল গাছে ঘেরা এ দ্বীপকে স্থানীয়রা বলে নারিকেল জিঞ্জিরা। মায়ানমার তাদের ম্যাপে এজায়গাটিকে তাদের দেখায় সাগরের নীল জলে নৌবাহিনীর জাহাজ দেখলাম প্রহরারত, এখানে সাবমেরিন ও আসে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ৫/৬ টি জাহাজ নিয়মিত যাতায়াত করে, কিছু ট্রলার পন্য নিয়ে সাগর পার হয় আমি অবশ্য বেওয়ান নামে একটি ক্রুজ শিপে গিয়েছিলাম সেখানে অনেক আয়োজনের মধ্যে শিল্পি রাজেশ রনির গান শুনতে শুনতে গেলাম, ভাল গান করে সে। এক রাতের জন্য সেন্টমার্টিনে রুম ভাড়া আপনাকে দিতে হবে ২/৩/৪ হাজার টাকার মতো। তবে আগে থেকে রিজার্ভেশন করে গেলে ভালো করবেন। খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন অনেক মাছ পাবেন বড়বড় সামুদ্রিক মাছ বললে বারবিকিউ করে দিবে তবে সব মাছ টাটকা নয় একটু বেছে নিবেন। চলে আসার সময়ে আপনার চোখ ছলছল করবে কি যেন এক জাদু আছে এ আইসল্যাণ্ডে আপনাকে বারবার ডাকবে ফিরে যেতে। আসার সময়ে দুই নম্বর সতর্ক সংকেতএ পড়লাম রাতে পৌঁছে দেখি জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়েগেছে। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো সাগর তনয়া।

সেন্টমার্টিন
৪-১২-২১

নিউজটি শেয়ার করুনঃ