সীতাকুণ্ডে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে দোকান ভাড়া দিলো মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ
আবদুল মামুন, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রতিনিধিঃ
সীতাকুণ্ড পৌরসদর প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার। চারপাশে নানা স্থাপনা গড়ে উঠায় শত বছরের প্রাচীন এ মাদ্রাসাটি এখন অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে পড়েছে।তবে মাদ্রাসার উওর সম্মুখ অংশের সীমানা প্রাচীর এখনো দ্বীনি এ বিদ্যাপীঠটির কথা জানান দেয়। মাদ্রাসার সামনের সীমানা প্রাচীরের উওর কোণ ঘেঁষেই রয়েছে বৈদ্যুতিক জোড়া খুঁটির ট্রান্সফরমারটি। এর পাশেই বাজারের জনসাধারণের চলাচলের ফুটপাত। ঝুঁকিপূর্ণ ও জনদূর্ভোগের হলেও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটির নিচের পাঁচ ফুট জায়গাতেই চা-দোকান ভাড়া দিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এতে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধাসহ ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজারের ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয় বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে দোকান ভাড়া দেওয়ায় মাদ্রাসার সুনামও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে জানান একাধিক শিক্ষক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার সীমানা প্রাচীরের উওরে অবস্থিত বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার খুঁটি।আর এ ট্রান্সফরমার খুঁটির নিচেই স্থাপন করা হয়েছে চা-দোকান। এতে সীমানা প্রাচীরের সামনের ফুটপাত দখল হয়ে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে পাশের সড়কে মিনিবাস থামার স্থান বলে যাত্রীদের উঠা নামায়ও পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ।

জানা গেছে, ছোট দোকানটি ভাড়া দিতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নগদ এক লাখ টাকা অগ্রীম সেলামী নিয়েছে ঐ দোকানির কাছ থেকে। বিষয়টির সত্যতা মিলেছে দোকানির বক্তব্য ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ওসমান গণি স্বাক্ষরিত টাকা গ্রহণের রশিদে।এদিকে ঝুঁপড়ি দোকান ভাড়া দিতে এক লাখ টাকা অগ্রীম নেওয়ার ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ফুটপাতে দোকান ভাড়া দেওয়াকে তেরপাল বাণিজ্য আখ্যা দিয়ে এটিকে লজ্জাজনক বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীতাকুণ্ড বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দোকান ভাড়া দিয়েছে কেবল তা নয়। নগদ এক লাখ টাকা সেলামী নেয়া হয়েছে। এই দোকানি ভাড়া নিতে যদি এক লাখ টাকা মাদ্রাসাকে দিতে হয় তাহলে কি আর বলার আছে।তাছাড়া দোকানটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ট্রান্সফরমারে প্রায় সময় আগুন লাগে। বাজারে অন্যতম এ ট্রান্সফরমারে বৃষ্টির সময় বেশি বৈদ্যুতিক শর্টের ঘটনা ঘটে। যার কোন স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি। এমন ঝুঁকিপূর্ণ ট্রান্সফরমারের গোড়ায় কিভাবে দোকান দেওয়া সম্ভব।ঐ দোকানির জন্যও এটা ঝুঁকিপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্য জানান, মাদ্রাসার কি অভাব পড়েছে টাকা পয়সার?জনগণের চলাচলের ফুটপাত চলতে হবে কেন? যেখানে ভাড়া দিয়েছে সেটি রাস্তা ফুটপাত।তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে কিভাবে দোকান ভাড়া দেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এমনিতেই ট্রান্সফরমারটিতে প্রায় সময় আগুন লাগে। সেখানে আবার প্লাস্টিক দিয়ে দোকান দেওয়া হয়েছে। আগুনের ছিঁটকা পড়লে সাথে সাথে বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।দোকানটি দিতে নগদ এক লাখ টাকা অগ্রীম নিয়েছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এতে মাদ্রাসার ভাবমূর্তি ক্ষুণ হচ্ছে।একই সাথে বিষয়টি সম্পূর্ণ বেমানান। এতে জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে সীতাকুণ্ড আলিয়া কামিল এম এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওসমান গণি বলেন, দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে সত্য। এক লাখ টাকা নগদ অগ্রীম নেয়া হয়েছে মাদ্রাসার অফিস রশিদে সেটিও সত্য। তবে পুরো ব্যাপারটি কমিটির নির্দেশে হয়েছে। আমি একক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা।গভর্ণিং বডি আমাকে চালায়।তাদের কথা আমাকে শুনতে হয়। দোকানটি ভাড়া দেয়া ঠিক হয়নি জানিয়ে অধ্যক্ষ আরও বলেন, আপনারা গভর্ণিং বডির সাথে কথা বলেন। গভর্ণিং বডির নির্দেশেই এটি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, দোকান ভাড়া দেয়া ঠিক হয়নি। এটি দেখতেও সুন্দর নয়। এভাবে ফুটপাতে দোকান ভাড়া দিতে পারে কিনা আমার জানা নেই। চলাচলের পথে দোকান ভাড়া না দেওয়ায় উচিত ছিল। তাছাড়া এটি বৈদ্যুতিক খুঁটি। সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বাহার বলেন, কিভাবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দোকান ভাড়া দিয়েছে আমাদের জানা নেই। এতে জনগণের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে। কারণ সেখানে আট নং মিনিবাস এসে থামে। এছাড়াও দোকানটি করা হয়েছে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে। এখানে প্রায় সময় শর্ট হয়ে আগুন লাগে। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মাদ্রাসার যেখানে বড় বড় মার্কেট রয়েছে সেখানে ফুটপাতে দোকান ভাড়া দিতে হবে কেন?ফুটপাতে কোন দোকান ভাড়া দেওয়ার নিয়ম নেই। এব্যাপারে আমরা আমাদের মতো ব্যবস্থা নিবো। এবিষয়ে বাড়বকুণ্ড বিদ্যুৎ বিক্রয় বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার গুলো সরকারি জায়গায় স্থাপিত। এখানে দোকান ভাড়া দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের জায়গাগুলো দখলে মেতে উঠেছে। এসবের ফলে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে আমরা দায়ী থাকব না। দোকান করার ফলে খুঁটিতে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন উঠতেও সমস্যা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে দোকান স্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। এবিষয়ে সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্যানেল মেয়র হারাধন চৌধুরী বাবু বলেন, পুরো পৌরশহরে ফুটপাত দখলের মহোৎসব চলছে। যে যেভাবে পারছে দখল করছে।এসব দখল জনদূর্ভোগ বাড়িয়ে যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে দোকান স্থাপন এটি আরও ভয়াবহ। যেকোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটবে। আমরা এবিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ