সীতাকুণ্ডে সমুদ্র থেকে অবৈধভাবে বালি উওোলন করে বেড়িবাঁধের পাশে জমি ভরাট
আবদুল মামুন, সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৫নং বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূল থেকে অবৈধভাবে নির্বিচারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কয়েক একর নিচু জমি ভরাট করেছে ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়াম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রায় এক হাজার মিটার লম্বা জোড়া পাইপ বসিয়ে সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রতিষ্ঠানটি।দিন-রাত সমুদ্রে চষে বেড়াচ্ছে একাধিক বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারও।প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করার দাবি করলেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদন পায়নি বলে জানা যায়। প্রশাসনের চোখ এড়াতে তাই রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কয়েক একর নিচু জমি ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কাছ থেকে কিনে নেয় পার্শ্ববর্তী এনবি স্টিল লিমিটেড নামে আরেক প্রতিষ্ঠান। কেনার সময় তারা ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামকে শর্ত দিয়েছিল জায়গাটি ভরাট করে দিতে হবে। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক জায়গাটি ভরাট করতে সমুদ্র থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়াম। এ কাজে তাদের সহযোগিতা দিচ্ছে এনবি স্টিলও। বাড়বকুণ্ড মাহমুদাবাদ সমুদ্র উপকূলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশ ঘেঁষে অবস্থিত প্রায় দুই শতক কৃষি জমিতে মাটি কেটে স্তূপ করেছে এনবি স্টিল। চতুর্পাশে ন্যায় মাটি স্তূপ করা হলেও মাঝখানে করা হয়েছে বিশালাকার খাদ। সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলন করে ফেলা হচ্ছে সেই খাদে। আর এই কাজের ইজারা নিয়েছে ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামের লোকজন। এসব কিছু দেখভালে যৌথভাবে নিয়োজিত রয়েছে ক্যাপিটাল ও এনবি স্টিলের শ্রমিকরা।

স্থানীয়রা জানান, ক্যাপিটাল এলপি গ্যাস ও এনবি স্টিল মিলে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে সমুদ্র থেকে বালু উত্তোলন করছে। এতে কৃষি জমির বিনাশসহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজী বলেন, আমি যতটুকু জানি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে। আমার এলাকায় যে কোম্পানি আসুক তাদের সহযোগিতা করব আমি।একটি ইন্ডাস্ট্রি হলে আমার এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এনবি স্টিলের কর্ণধার মোঃতছলিম উদ্দিন বলেন, জায়গাটি আমরা ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়াম থেকে কিনে নিয়েছি। বালু উত্তোলন করে জায়গাটি ভরাট করার দায়িত্বও তাই ক্যাপিটালের। এ বিষয়ে ক্যাপিটালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন জানান, বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। শুধু সমুদ্র থেকে এনে নিচু জমি ভরাট করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির জন্য আমরা যোগাযোগ করছি। এদিকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়ে গত সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং উপকূলীয় বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত দুটি পাইপ কেটে দেয়ার পাশাপাশি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত দুই শ্রমিক আটক করে।পরে ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মোঃফেরদৌস আনোয়ার বলেন, বালি উত্তোলনের বিষয়ে আমাদের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। আমরা অভিযোগ পেয়ে কয়েকদিন আগে পরিদর্শনে গিয়ে বালি উত্তোলনের পাইপ কেটে নিয়ে আসি। নিষেধাজ্ঞা অমান্যের খবর সত্য হলে আবারও অভিযান চালিয়ে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ