ভুল চিকিৎসায় সন্তানসম্ভবা মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ
আবদুল মামুন,সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পৌরসদরে অবস্থিত সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে এক সন্তানসম্ভবা মায়ের মৃত্যু হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টায় সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ ও থানায় মামলা দায়ের এর প্রস্তুুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় প্রসব বেদনা উঠলে মিরসরাইয়ের ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের বালিয়াদী গ্রামের শাহনেওয়াজের স্ত্রী ফারিয়া আক্তার বর্ষা (২১)কে সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ১ঘণ্টা পর নরমাল ডেলিভারিতে একটি নবজাতক ছেলে সন্তান প্রসব করেন। ফারিয়া সন্তান প্রসবের পর মা ও নবজাতক ২জনই সুস্থ ছিলেন। বেলা ১০টা ৩০ মিনিটের সময় প্রসব ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের নার্সরা ফারিয়াকে স্যালাইন দেয়ার কথা বলে অন্য কক্ষে নিয়ে যান।স্যালাইন দিয়েই ফারিয়ার শরীরে গাইনী ডাক্তার একটি ইনজেকশন পুশ করেন।ইনজেকশন পুশের ৩০ মিনিট পর তার মৃত্যু হয়। এদিকে মৃত্যুর বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে শহরে রেফার করে। এসময় ফারিয়াকে নগরীর প্রাইভেট হাসপাতাল ইপিকে ভর্তি করা হলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার দুই ঘণ্টা আগে ফারিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। বর্তমানে বালিয়াদী গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।সন্তানসম্ভবা মায়ের এক আত্মীয় জানান, সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে মৃত্যুর কারণ জানাতে পারেনি। কিন্তুু পরবর্তীতে জানিয়েছেন খিঁচুনী উঠার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।আমরা শহরে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় জেনারেল হাসপাতালে। অথচ তারা বিষয়টি আমাদের বলেনি। নরমাল ডেলিভারি ও ডেলিভারির দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পরে কিভাবে সুস্থ সন্তানসম্ভবা মায়ের মৃত্যু হয়?তাদের অবহেলা রয়েছে চিকিৎসায়। তারা সঠিকভাবে রোগীকে চিকিৎসা দেননি।আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমরা ওসি কে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেছি। আমরা ডাক্তার ও হাসপাতালের এমডিকে আসামী করে মামলা দায়ের করব। এদিকে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে সীতাকুণ্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মোঃ মাঈনুদ্দিন জানান, এসব বিষয়ে আপনি ডাক্তারের বক্তব্য নিলে ভালো হবে। কেসটি ডাক্তার মাহবুবা আক্তার বর্ণা ও ডাক্তার সাহেদ সম্পূর্ণ করেছে। রোগীরা ডাক্তারের তত্ত্বাবধানেই থাকে। ফোনে সবকিছু বলা যায় না।আমার বক্তব্য হচ্ছে রোগী ডেলিভারির পর তার অবস্থা ভালোই ছিল। ডাক্তারা তাকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তুু হঠাৎ করে রোগীর খিঁচুনি উঠে যাওয়ায় তার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। তখনি আমরা ৫ মিনিটের মধ্যে তাকে রেফার করি। আমাদের হাসপাতালে কেন রোগীর মৃত্যু হবে? রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাদের হাসপাতালে রাখার কোন সুযোগ নেই। তবে ডাক্তারের বক্তব্য নেয়ার পরামর্শ দিলেও ডাক্তার মাহবুবা আক্তার বর্ণার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে নিহত সন্তানসম্ভবা মায়ের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে বলেও দাবি করেন এবং এসব কোন সমস্যা হবেনা বলেও উল্ল্যেখ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল করার প্রমাণ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ