আর জাতীয় পতাকা উড়বে না স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে—শামীম
আর জাতীয় পতাকা উড়বে না স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে—শামীম
কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণে সংবিধান অনুযায়ী এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সেই নির্বাচনে আপনারা তাদের বর্জন করবেন, ঘৃণা করবেন, যারা রাজাকারের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছিল।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘কে ফোর্স’-এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনামুল হক শামীম এসব কথা বলেন। এ সময় পানি সম্পদ উপমন্ত্রী বলেন, ‘আর যেন কখনও রাজাকারের গাড়িতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা লাল সবুজের পতাকা না ওঠে। দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বিশ্বাস করি, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবং সচেতন মানুষ আর কখনও রাজাকারের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেবে না। স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়বে না।’ দেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল উল্লেখ করে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের ইন্ধন ছিল। হত্যা পরবর্তী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে খুনিদের বক্তব্যেই তা প্রমাণ হয়েছে।’ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার শাসনামলেও খুনিচক্রের প্রধান রশিদকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৬ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত করা হয়। বিরোধীদলের আসনে বসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে কুখ্যাত রাজাকার নিজামী, মুজাহিদের গাড়িতে পতাকা দিয়ে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা আর যেন রাজাকারের গাড়িতে না ওঠে, সেজন্য সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’
খালেদ মোশাররফের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে উপমন্ত্রী শামীম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং ‘কে ফোর্সের’ অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করতে যে তিনটি ফোর্স গঠন করা হয়েছিল, এর একটির অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ। তাঁর নামের আদ্যক্ষর দিয়েই নাম হয় ‘কে ফোর্স’। স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েকদিন আগে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সিনিয়র মেজর থাকা অবস্থায় তাঁকে শমসেরনগরে বদলি করা হয়। যুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি সৈনিকেরা যাতে সংগঠিতভাবে পাল্টা আক্রমণ করতে না পারে, সে পরিকল্পনা থেকেই মূলত খালেদ মোশাররফকে সরিয়ে দেয় পাকিস্তানিরা। শত-সহস্র ষড়যন্ত্র করেও খালেদ মোশাররফকে থামানো যায়নি। ২৫ মার্চের পাকিস্তানিদের গণহত্যার প্রতিবাদ করতেই পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে মেজর শাফায়াত জামিলসহ বিদ্রোহী সৈন্যদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন খালেদ মোশাররফ। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার খালেদ মোশাররফকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পঁচাত্তরের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকচক্রকে হটিয়ে দিয়ে খালেদ মোশাররফ যখন মুক্তিযুদ্ধের মূল স্রোতধারায় গণতান্ত্রিক সরকার-রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন, তখন ৭ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে আরেক অভ্যুত্থানে তাঁকে হত্যা করা হয়।’ খালেদ মোশাররফের মেয়ে ও ‘কে ফোর্স’-এর সভাপতি মাহজাবিন খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ‘কে ফোর্স’-এর উপদেষ্টা ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন, যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, যুবলীগের উপ-মহিলা সম্পাদক সৈয়দা সানজিদা মহসিন, সদস্য আসাদুজ্জামান আজম প্রমুখ। এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।