কর্ণফুলীতে সন্তান-স্ত্রীদের অমানবিক নির্যাতন অত্যাচারের অভিযোগে বৃদ্ধ মায়ের সংবাদ সম্মেলন
কর্ণফুলী উপজেলা প্রতিনিধিঃ
কর্ণফুলী থানার দক্ষিণ শিকলবাহা গ্রামের মাওলানা আব্দুল জব্বারের বাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান মরহুম নুরুল ইসলামের স্ত্রী আছিয়া খাতুন গতকাল(১২মার্চ) শনিবার ১২টায় কর্ণফুলী থানার কলেজ বাজারস্থ একটি হলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। ৭২ বছর বয়সে এসে অসহায়, ক্লান্ত শরীরে অবাধ্য দুই সন্তান ও তাদের স্ত্রীদের অমানবিক নির্যাতন, নীপিড়ন এবং অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। সম্পত্তি নিয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের মারধরের শিকার হয়েছি একাধিকবার। আমাকে ঘর থেকে অত্যাচার করে বের করে দিয়েছে ছেলে মো. লোকমান ও তার স্ত্রী ইয়াছমিন আকতার। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে হত্যার হুমকি পাচ্ছি প্রতিদিন। মামলায় সাক্ষী দিতে আদালতে যাওয়ার পথে অত্যাচার করে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন সন্তান নামের কুলঙ্গাররা। আমার স্বামী ১৯৯৭ সালে মারা যান। গর্ভজাত ৪পুত্র ও ৪মেয়ে রয়েছে। আমার স্বামী ও বাপের বাড়ি থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির উপর দৃষ্টি পড়ে দুই সন্তান মোহাম্মদ লোকমান(৩৮), তার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার (৩২) এবং অপর সন্তান মোহাম্মদ ওসমান(৪৬)। গত ২-৩বছর যাবৎ আমার সম্পত্তিগুলো তাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তাদের নামে আমার সম্পত্তিগুলো লিখে না দেওয়ায় প্রথমে আমার থাকার রুমে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর গত ৭মাস আগে নির্যাতন করে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেন। নিরুপায় হয়ে আমার অসচ্ছল ছেলে মোহাম্মদ ইমরান(৩০) এর কাছে আশ্রয় নিই। এতে লোকমান ও তার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আমাদের পুঁড়িয়ে মারার উদ্দেশ্যে গত বছরের ২৭আগষ্ট’২১ইং সকাল ১১টায় ইমরানের লাকড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় ইয়াছমিন আক্তার। বিষয়টি এলাকাবাসী দেখে ফেলে এবং এগিয়ে এসে তাৎক্ষণিক আগুন নিভায় এলাকাবাসী। এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানায় একটি অভিযোগ করি (অভিযোগ নং-১৬০৯)। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে সন্তানদের কথা ভেবে অভিযোগটি আপোষ-মিমাংশা করে নেয়।

কিছুদিন পর আবারও তারা আমার ছোট ছেলে ইমরানকে ঘর-বাড়ি ছাড়া করতে ষড়যন্ত্র করতে থাকে লোকমান ও তার স্ত্রী ইয়াছমিন আকতারকে জিজ্ঞেস করলে ২০২১ সালের ১০সেপ্টেম্বর আমার উপর হামলা করে। লোকমান আমাকে হত্যা করার জন্য গাছের বাটাম দিয়ে পিটে আঘাত করে, অপর সন্তান ওসমান আমার গলাচেপে ধরে। এসময় লোকমানের স্ত্রী আমাকে বেদড়ক পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। আমার চিৎকার শুনে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও হুমকি প্রদর্শন করে তারা। পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মা হয়ে দুই ছেলে ও বউয়ের নির্যাতন আর সইতে পারছি না। এ ঘটনায় মোহাম্মদ লোকমান, তার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং অপর সন্তান মোহাম্মদ ওসমানের বিরুদ্ধে আমি এডিশনাল চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট চট্টগ্রামের আদালতে একটি ৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬ (২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করি (সিআর মামলা নং-২৪১/ ২০২১)। আদালত ৫/১০/২০২১ তারিখে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কর্ণফুলী থানাকে নির্দেশ দেয়। থানার উপ পরিদর্শক দিদারুল আলম তদন্ত শেষে ঘটনার সত্যতার বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি বলেন, গত ১মার্চ আমার মামলার আদালতে শুনানী ছিল। আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে সব কিছু ঠিকটাক করে রাখলাম। সকালে আদালতে যাব, কিন্তু মামলার আসামি পক্ষের লোকজন আমার মেঝ ছেলের বাসায় পৌছে আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ঘর থেকে বের হলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।আদালতে শুনানীর দিন উপস্থিত হতে না পারায় মামলার আসামিরা জামিন নিয়ে নেয়। সন্ত্রাসী দিয়ে পাহারা দিয়েছে। বর্তমানে আমি থানায় কিংবা আদালতে যেতে পারছি না। মামলাটি স্থগিত করতে আমাকে চাপ দিচ্ছে তারা। অন্যথায় তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন বলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কাদুঁন সুরে বলেন তিনি। সম্প্রতি আমার সন্তান ইমরানকে জড়িয়ে একটি মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে তারা সাংবাদিকদের বলেছেন ইমরান নাকি তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করেছেন, মেনে না নেয়ায় আমি আমার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
আমি প্রশ্ন রাখতেই, ইমরান তার কোন বোনের মেয়েকে বিয়ে করেছেন? আসলে ইমরান ইসলামী শরীয়া মোতাবেক এক নারীকে বিয়ে করেছেন। কোন ভাগিনিকে নয়, এলাকাবাসীর আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে ছেলে ইমরান, এহসান উদ্দিন মামুনসহ এলাকাবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ