উৎসাহ আনন্দে শেষ হল তিন দিনের “পটিয়া উৎসব”
উৎসাহ আনন্দে শেষ হল তিন দিনের “পটিয়া উৎসব”
হোসেন বাবলা,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় সর্বস্তরের মানুষের জাঁকজমক উপস্থিতিতে, বর্ণিল আয়োজন এবং রত্ম মরণোত্তর ৩২ জনকে স্বর্ণ স্মারক, ১১জনকে স্বর্ণ প্রদান এবং আরো ৩৫ কৃতিকে সম্মাননা, মোট ৭৮ গুণী ও কৃতিজনদের সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পটিয়া উৎসব। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পটিয়া ফাউন্ডেশন এর তত্ত্বাবধানে পটিয়া স্কুল মাঠে বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠান ছিল যেন মিলন মেলা। পটিয়ার বিভিন্ন বয়সীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আনন্দ আবেগ সৃষ্টি করে। বিগত প্রায় দুই’শ বছরে পটিয়ায় জন্ম নেয়া দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পেশায় অবদান রেখেছেন এমন ৭৮জন কে সম্মানিত করা হয়। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন মঙ্গলবার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, রমেশ চন্দ্র গুপ্ত, মাওলানা আবদুস সোবহান, আস্কর আলী পন্ডিত, আব্দুল গফুর হালীসহ ৩২জন কে পটিয়ার রত্ন ঘোষণা করে মরণোত্তর স্বর্ণ স্মারক প্রদান করা হয়। তিন দিনের অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ও মরণোত্তর স্বর্ণ স্মারক প্রদান করেন প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার দ্বিতীয় দিনে পটিয়ার আরো তৃতীয় গুণী ১১জন কে পটিয়ার রত্ন ঘোষণা করে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। তাঁরা হচ্ছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ফজলুল করিম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সচিব এ জেড এম নাসিরুদ্দিন, সমাজ বিজ্ঞানী ডঃ অনুপম সেন, বিচারপতি জে বি এম হাসান, নারীনেত্রী ও সাবেক সাংসদ লায়লা সিদ্দিকী, সাবেক সচিব নসরুল্লাহ খান, সাবেক সচিব ড. অপরূপ চৌধুরী, বর্তমান মুখ্য সচিব আহাম্মেদ কায়কাউস, শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে মীর আহমেদ সওদাগর, খলিলুর রহমান ও সাইফুল আলম মাসুদ। তাদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৃহস্পতিবার শেষ দিনে বর্তমান সময়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আরও ৩৫ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। শেষ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি। উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহারুল ইসলাম চৌধুরী তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন। পটিয়ার বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে তৃতীয় জনদের আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কবি সাংবাদিক রাশেদ রউফের সম্পাদনায় একটি স্মারক গ্রন্থ ও উৎসব কমিটির সৌজন্যে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেন। এই উৎসব উপলক্ষে এলাকার ৫০ জন বেকার যুবক কে ৫ হাজার টাকা করে পূঁজি সহ আয়ের এর উৎস সৃষ্টিতে একটি করে রিকশা-ভ্যান প্রদান করা হয়। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমী ছিল বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ, সুধী সমাজ অংশ নেন। বরেণ্য ব্যক্তিদের ইতিহাস জানাতে স্কুল মাঠে বড় বড় প্লে কার্ড স্থাপন করা হয়। পুরো মাঠকে সাজানো হয় রংবেরঙে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছিল আতশবাজি উৎসব। সন্ধ্যায় ছিল পটিয়ার বর্ণের শিল্পীদের ও সংগঠনের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসাহ-উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের লোকজন এর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ মিলন মেলায় পরিণত করেন। পটিয়ার গুণী ও কৃতজনদের জাঁকজমক উৎসব আয়োজন করে সম্মাননা প্রদানে পুরো এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় আয়োজন পটিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। বিশেষ করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রতিষ্ঠায় এসব গুণীজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার প্রেরণা সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন স্কুল কলেজ পর্যায়ে এ বিষয়টি নিয়মিত চর্চা করেন শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রতি দুই বছর অন্তর পটিয়া ফাউন্ডেশন এর তত্ত্বাবধানে উৎসব অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।