২৫ বছর দাপটের সাথে পলিথিন ব্যাবসা করে আসছে এ ডি এন্টারপ্রাইজ স্টেশনারি মালামালের আড়ালে
মহানগর সংবাদদাতাঃ
চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি, মিছি পুকুর পাড়, এ ডি এন্টারপ্রাইজে স্টেশনারি মালামালের আড়ালে চলছে অবৈধ পলিথিন এর জমজমাট ব্যাবসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে প্রতিদিন শত শত কেজি পলিথিন বিক্রি করছেন, এ ডি এন্টারপ্রাইজ।
প্রশাসনের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এদিকে নগরীর সব দোকান ও বাজারকে পলিথিনমুক্ত করতে প্রথমে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কেবল তর্জন গর্জনই সার। কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরে ২৫ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর চট বা কাপড়ের ব্যাগ ছাড়া কোনো দোকানে পলিথিন পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সময়সীমার পরও পলিথিনের ব্যবহার অব্যাহত থাকলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জোরালো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এনিয়ে নগরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। পলিথিন কারখানা বন্ধ না করে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের ঘোষণাকে নগরবাসী তামাশা হিসাবে দেখছে। পলিথিন কারখানা বন্ধ না করে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করার ঘোষণা অনেকটা “অরণ্যে রোদন”। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে ১৪ মার্চ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্রচারপত্র বিলি করেন। এসময় এক পথসভায় বিক্রেতাদের উদ্দেশে মেয়র বলেছেন, ‘পলিথিন ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি বারবার বলার পরও নগরবাসী আমলে নিচ্ছে না। আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় দিয়েছি। এখন শেষবারের মতো সময় বেঁধে দিচ্ছি। পলিথিন যাদের আছে ২৫মার্চের মধ্যে সরিয়ে নিতে হবে। বিকল্প হিসেবে চটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এরপর যাদের কাছে পলিথিন পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে বাঁচাতে প্রায় ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রায় তিন বছর ধরে কাজও চলমান আছে। কিন্তু বর্ষা এলেই বোঝা যায়, একটুকুও প্রাণ ফিরেনি বন্দরনগর চট্টগ্রামে। এরই মধ্যে নগরের খালগুলো ভরে উঠেছে পলিথিন বর্জ্যে। এ বাস্তবতায় ১৬ জুন চট্টগ্রামে পলিথিন বিরোধী ক্যাম্পেইন চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এ নির্দেশের পর এবার নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরকে পলিথিন বর্জ্যের হাত থেকে বাঁচাতে গত বছরের জুনে চসিকের সম্মেলন কক্ষে ‘পলিথিন মুক্ত চট্টগ্রাম’ বিষয়ক আলাচনায় বসে চসিক, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ নগরের সেবা সংস্থাগুলো। এতে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্ব-স্ব ওয়ার্ডের পলিথিনের কারখানার তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাতে হালে পানি পায়নি। তা কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এর আগে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন কে সভাপতি করে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এই কমিটি পলিথিন বন্ধে শুধুমাত্র আলোচনা সভা ছাড়া কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সচেতনতা বাড়াতে এবং পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা হয়নি নিয়মিত বাজার মনিটরিং। এখন পর্যন্ত স্ব স্ব ওয়ার্ডে পলিথিন কারখানার তালিকাই করা হয়নি।

তাই পলিথিন কারখানা চিহ্নিত করে তা বন্ধ না করে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা কেবল হাক ডা্ক ছাড়া কিছুই না। এদিকে চসিকের পক্ষ থেকে কিছুদিন নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের পলিথিন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে মাইকিং ও লিফলট বিতরণ করে। কিন্তু কার কথা কে শুনে। অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার। এর আগে ১ ডিসেম্বর থেকে নগরের ৩টি প্রধান বাজার চকবাজার, কাজীর দেউড়ি ও কর্ণফুলী মার্কেটকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। পর্যায়ক্রমে নগরবাসীর সহযোগিতায় অন্যান্য কাঁচাবাজার, দোকানপাটগুলো এর আওতায় আনা হবে এবং প্রাথমিকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি, মাইকিং, প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পরবর্তীতে এ নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানাসহ কঠোর আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন। কিন্তু নগরীর আর কোন বাজার পলিথিন ব্যবহার বন্ধের আওতায় আনতে পারেনি। এছাড়া নিয়মিত মনিটরিং ও নজরদারি না থাকা এবং দায়সারা মনোভাবের জন্য পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করা বাজার গুলোতেও বেড়েছে পলিথিনের ব্যবহার। সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন দোকান ও বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজার গুলোতে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। সাদা রঙের পলিথিন ছাড়াও নানা রঙের পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে। মাছ, মাংস সবজি থেকে শুরু করে, চাল, ডাল, তেল, চিনি, চা দোকানের নাস্তা ও খাবার বহনে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। বাজার করতে আসা লোকদের একেজনের হাতে গড়ে ৫/৬ টি পলিথিন ঝুলছে। প্রতিটি পন্যের জন্য আলাদা আলাদা পলিথিন দিচ্ছে দোকানীরা। আগে কাগজের তৈরি ঠোংগার ব্যবহার দেখা গেলেও এখন তেমনটা চোখে পড়ে না। দিন দিন মারাত্মক হারে ব্যবহার বাড়ছে পলিথিনের। এতে করে একদিকে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুকি অন্যদিকে পলিথিনে সয়লাব হচ্ছে নগরীর নালা নর্দমা ও খালগুলো। সেই সাথে চসিকের বর্জ্য অপসারণে গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনা তো আছেই।

নগরবাসী মনে করে, কেবল হাক ডাক ও ঘোষণা নয় পলিথিন বন্ধে চসিককে নিতে হবে জোরালো প্রদক্ষেপ। প্রথমে পলিথিন কারখানা গুলো চিহ্নিত করে সেই গুলো বন্ধ করতে হবে। তারপর পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বাজার গুলোতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।প্রয়োজনে পলিথিন কারখানা গুলোকে পলিথিনের বিকল্প উপাদান তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা করা যেতে পারে। এব্যাপারে চসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। স্ব স্ব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বাজার গুলো নিয়মিত মনিটরিং ও জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে হবে। চসিক এর পক্ষ থেকে বাজার গুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সচেতন মহল মনে করে, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলিথিনের স্তরের কারণে জাহাজ চলাচলে যেমন বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি নদীর গভীরতা রক্ষার জন্য যে ড্রেজিং করার প্রয়োজন তা-ও প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্ণফুলী বাঁচাতে না পারলে চট্টগ্রাম বন্দর অচল হয়ে যাবে এবং এর কুপ্রভাব সারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে। পলিথিন শুধু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে না, এর কারণে মাটির উর্বরতা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে। সে কারণে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব নগর হিসেবে গড়তে, কর্ণফুলী নদীরক্ষার মাধ্যমে বন্দর সচল রাখতে এবং জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ পেতে হলে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প হিসেবে পাট বা কাপড় বা নন ওভেন ফেব্রিক্সের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করে সবাইকে সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি চসিককে নিতে হবে কার্যকর প্রদক্ষেপ।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ