ব্যবসায়ীদের দূর্ব্যবহারের অভিযোগ গণমানুষের হল ত্যাগ না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছাত্ররা
হোসেন মিন্টুঃ
ব্যস্ত নিউ মার্কেট এলাকায় দিনভর সংঘাত, কার কী দায়? রাতে এক দফা মারামারির পর ছাত্র ও দোকানকর্মী দুই পক্ষকে হটিয়ে দিয়েছিল পুলিশ; কিন্তু সকালে বাঁধে আবার সংঘর্ষ এবং তা ছিল ব্যাপক; আর তাতে অর্ধশত আহত হওয়ার পাশাপাশি একজনের প্রাণও গেল। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা নিউ মার্কেটের সামনে মঙ্গলবার দিনভর এই সংঘর্ষে মিরপুর সড়কের ওই অংশে গাড়ি চলাচল ছিল বন্ধ, তার প্রভাবে অন্য সব সড়ক ছিল তীব্র যানজট। রোজার মধ্যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পথে নামা সবাইকে। ঈদের আগে যখন জমজমাট বেচার-কেনার সময়, তখন এই সংঘর্ষের কারণে বড় ক্ষতি গোনার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার কলেজ ছাত্রাবাস বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদেরও থাকার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চললেও “কুল ডাউনের” আশা দেখিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কিন্তু তাতে সংঘাত থামেনি।কলেজ অধ্যক্ষ দাবি করছেন, দোকানকর্মীদের উসকানিতেই সংঘাত বিস্তৃত হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চললেও তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তারা ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছেন। দ্বিমুখী সংঘর্ষ যেন ত্রিমুখী সংঘর্ষে রূপ না নেয়, সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করছিলেন তারা। এই সংঘাতের সূত্রপাত হয় সোমবার মধ্যরাতে। নিউ মার্কেটে’র ৪ নম্বর ফটকের সামনের খাবারের দোকান ক্যাপিটাল হোস্টেলের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের কয়েক শিক্ষার্থীর তর্কার্তকি থেকে। নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, “ওই খাবারের দোকানের লোকজনের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাকবিতণ্ডের পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবদ্ধ হয়ে এসে হামলা চালায়।
“রাতে ছাত্ররা অগ্নিসংযোগেরও চেষ্টা করে, কয়েকটি দোকানে লুটতরাজ চালায়। পুলিশ ঠিক সময়ে না এলে তারা মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিতে পারত।”
সাখাওয়াত হোসেন নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, “চতুর্থ বর্ষ আর মাস্টার্সের তিনজন শিক্ষার্থী রাতে খেতে যায়। দাম যা আসছে, তার চেয়ে একটু কম দিতে চেয়েছিল তারা। এসময় ঝগড়ার এক পর্যায়ে দোকানে থাকা ধারালো ছুরি নিয়ে শিক্ষার্থীদের গুরুতর জখম করে দোকানিরা।” ওই খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে শিক্ষার্থীরা সদলবলে গিয়ে ওই দোকান ভাংচুর করলে দোকানকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। ভোররাত পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টা সংঘর্ষের পর ব্যবসায়ী ও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে দেয়। সকালে বিপুল পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আগের রাতের ঘটনার প্রতিবাদে সড়কে মানববন্ধন করতে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তখন নিউ মার্কেটের আশপাশের বিপণি বিতানগুলোর দোকানকর্মী ও হকাররা তেড়ে এলে আবার বাঁধে সংঘর্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়, বৃষ্টির দুই পক্ষের ইট ছোড়াছুড়ির মধ্যে লাঠিসোঁটা এবং রামদার মতো ধারাল অস্ত্র হাতেও দেখা যায় সংঘর্ষকারী বেশ কয়েকজনকে। আগের রাতে দোকানকর্মীদের দিক থেকে গুলি করা হয় বলেও ছাত্রদের অভিযোগ, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দিক থেকে বোমা ছোড়ার অভিযোগও আসে দোকানকর্মীদের দিক থেকে। এই অবস্থা ইফতারের পর পর্যন্তও চলে। এরপর সংঘর্ষ থামলেও রাতেও পরিস্থিতি ছিল থমথমে। নিউ মার্কেটের সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় দেওয়া আগুনে নুরজাহান সুপার মার্কেটের নিচতলার একটি দোকানের সব মালামাল পুড়ে যায়। “পরস্পর দোষারোপ” সংঘর্ষের ঘটনার জন্যে ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছে। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন রাতে দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, তারা মীমাংসার চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীদের কারণে সেটা সম্ভবপর হচ্ছে না। “আমাদের ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিল সকালে, কিন্তু ব্যবসায়ীরাই তাদের ওপর আক্রমণ করে। এতেই সংঘর্ষ বেধে যায়। তাদের কারণেই এর সমাধান হচ্ছে না।” আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।সংঘর্ষের জের ধরে পরিস্থিতি সামাল দিতে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিকালে অধ্যক্ষকে অবরোধ করে রেখেছিল। পরে রাতে মুক্ত হন তিনি। ঢাকা নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহীন আহমেদ দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, “ছাত্ররা কলেজের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ পর পর বেরিয়ে আক্রমণ করে আবার ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সেকারণে সংঘর্ষটা দিনভর প্রলম্বিত হয়েছে।” বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনিও আলোচনার মাধ্যমে ঘটনার সমাধান চান, সেজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, “তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই দিন ধরে এধরনের সংঘর্ষ খুবই উদ্বেগজনক।এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে। “আমি রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সব পক্ষকে নিয়ে আবার বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রস্তাব দেব।” এ সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে অন্য কারও ইন্ধন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার উপর জোর দেন তিনি। “নিউ মার্কেটের সেই ফটকের সামনে আবর্জনার স্তূপ” নিউ মার্কেট এলাকার ফুটপাতের হকাররা ছিল তাদের পণ্য নিয়ে শঙ্কায়। হকাররা দায়ী? নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শাহিন বলেন, রাতের সংঘর্ষের পর সকাল থেকে তারা দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু ফুটপাতের হকাররা এখানে সক্রিয় ছিলেন। সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত অন্তত ৭৫টি বিপণি বিতান রয়েছে বলে দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। আর এসব বিপণির সামনে ফুটপাতজুড়ে ব্যবসা করে হকাররা। শাহিন আরো বলেন, “ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা (হকার) তাদের মালামাল রক্ষার স্বার্থে সেখানে অবস্থান করেছিল। এধরনের ব্যবসায়ীরাই দিনভর সংঘর্ষে অংশ নিয়েছে।” দুপুরে সংঘর্ষের সময় পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ আক্রমণাত্মক দেখাচ্ছিল ইদ্রিস নামে ২৫ বছর বয়সী এক যুবককে। হকার হিসেবে পরিচয় দেওয়া এই যুবক দুই বার পুলিশের হাতে মার খাওয়ার পরও নিউ মার্কেট ফুটব্রিজের পূর্বপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। না সরার কারণ জানতে চাইলে ইদ্রিস প্রায় একশ যুবককে দেখিয়ে বলেন, “আমরা যেতে পারবো না। কারণ আমাদের ‘জীবন’ রাস্তায়।” ফুটপাত পলিথিনে মোড়ানো তাদের দোকান দেখিয়ে বলেন, “এখানে আমাদের পুঁজি। যদি চলে যাই, তাহলে লুট হয়ে যাবে। খাব কী? তাই দোকান পাহারা দিচ্ছি।” নিউ মার্কেট এলাকা থমথমে, শিক্ষার্থীরা রাস্তায়।

নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। কী করছিল পুলিশ? আগের রাতের সংঘর্ষের জেরে সকালে পরিস্থিতি আবার উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা ছিল।সেক্ষেত্রে পুলিশ কেন আগাম পদক্ষেপ নেয়নি, সেই প্রশ্ন করছেন অনেকেই। দুপুরে সংঘর্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া পুলিশের জন্য সহজ ছিল না বলে যুক্তি দেখান ঘটনাস্থলে আসা কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, “পুলিশ ইন করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষটা শুরু হবে। যেহেতু শুরু থেকেই পুলিশ মাঝে অবস্থান করতে পারেনি তাই টেকনিক্যাল কারণে আলোচনা করে সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করেছে।” ঘটনাস্থলে উপস্থিত ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, পুলিশ চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। “জায়গা ভেদে পলিশ অ্যাকশনে যায়। আশা করি, সবাই নিয়ম মেনে চলবে। কলেজ বন্ধ বা হল ত্যাগের নির্দেশনা মানবে।” দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুলিশ ছিল, তবে পোশাকে পুলিশ এসেছে পরে, এটা স্ট্যাটিজিক কারণে।” দুপুরে পুলিশের একটি দল নীলক্ষেত নিউ মার্কেট ঘেঁষা সড়ক দিয়ে এপিসি ও জলকামান নিয়ে ঢোকে, আরেকটি দল নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটের পাশে অবস্থান নেয়।
এসময় নিউ মার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেট পর্যন্ত হাজার হাজার দোকান কর্মচারী সড়কদ্বীপের বেড়ার লোহার রড ভেঙে হাতে নিয়ে অবস্থান করছিল। পুলিশ এসেছে দেখেও রড হাতে দোকান মালিক ও কার্মচারীরা ভয় না পেয়ে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হতে চাচ্ছিল। পুলিশ বার বার তাদের সড়ক ছাড়তে বললেও ছাড়ছিল না তারা। পুলিশ ধাওয়া দিলেও তারা পুনরায় ফিরে আসছিল। আর ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ছিল। নিউ মার্কেটের দোকান কর্মচারী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সকাল থেকে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দুপুরে নীলক্ষেতের দিক থেকে অগ্রসর হয় পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা সাজ্জাদ বলেন, “তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রায় চার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আবার তারা ক্যাম্পাসের বাইরে আসলে উত্তেজনা দেখা দেয়।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না কেন-প্রশ্নে তিনি বলেন, “নিবৃত্ত হচ্ছে আবার পুনর্জীবিত হচ্ছে। তারা (দুই পক্ষ) কথা বার্তা দিয়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।” “কেউ কথা শুনছে না”-এমন কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামও।এখনও পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না-এই প্রশ্নে মঙ্গলবার রাতে তিনি বলেন, “গুলি করেতো আর মানুষ মারতে পারব না। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা যাতে আর না বাড়ে, তাদের যারা নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষক, ছাত্র নেতারা, ব্যবসায়ীদের, সবাইকে লাগানো হয়েছে।” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ব্যর্থতা রয়েছে কিনা-প্রশ্ন করা হলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ব্যর্থতার কী আছে? সবাই মিলে চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন, ছাত্রনেতারা চেষ্টা করছেন, ব্যবসায়ী নেতারা চেষ্টা করছেন। “তারা (সংঘর্ষকারীরা) কথা শুনছেন না। উচ্ছৃঙ্খল কেউ যদি কথা না শুনে, এখন সমঝোতা ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। শক্তি প্রয়োগ করে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে কোন সমাধান হবে না।” রাতে নীলক্ষেত থেকে চন্দ্রিমা মার্কেট পর্যন্ত সড়ক দ্বীপের বাতি ছিল বন্ধ। দুই পাশের মার্কেটগুলোও বন্ধ ছিল। মানুষের আনাগোনা তেমন ছিল না। ফুটব্রিজের নিচে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য, আর রাস্তার পূর্ব পাশে কিছু পুলিশ সদস্যকে দেখা গেছে। ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক দ্বীপগুলোতে বাতি জ্বলছিল। কিছু শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান করছিল। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও কয়েকটি রিকশা চলতে দেখা গেছে। সেখানে কর্তব্যরত ডিএমপির নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ বলেন, কোন সংঘর্ষ এখন হচ্ছে না, সমাধান কী হচ্ছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেখি, অপেক্ষা করি।” নিউ মার্কেটে সংঘর্ষের মধ্যে সাংবাদিকরাও আক্রান্ত, অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষ কিছুটা থামলে সন্তানকে নিয়ে ওই এলাকা অতিক্রম করছেন এক নারী। দিনভর দুর্ভোগ সকালে সংঘর্ষে পুরো নিউ মার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নিলে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। গরমের মধ্যে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে বাধ্য হন অনেকে। পুরান ঢাকায় সকালে এমনিতেই যানজট নাকাল থাকে। নিউ মার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে এদিন। মিরপুর সড়ক বন্ধ থাকায় আজিমপুর থেকে মিরপুরগামী বাস অনেকটা পথ ঘুরে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাতে নীলক্ষেত, এলিফেন্ট রোডসহ আশপাশের সড়কে ব্যাপক চাপ পড়ে বলে অটোরিকশা চালকরা জানান। দুপুরে এলিফেন্ট রোড, বাংলা মোটর, ফার্মগেইট, কারওয়ানবাজার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নীলক্ষেত, আজিমপুর, মীরপুর রোডসহ আশ-পাশের এলাকায় তীব্র যানজটে থেমে থেমে যানবাহন চলতে দেখা যায়। তীব্র গরমের মধ্যে যানজটে বাসের ভেতরেই দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় দূরের গন্তব্যের যাত্রীদের।বিকালেও ফার্মগেইট, বিজয় সরণি, গাবতলী, মিরপুরসহ ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগ এলাকায় গাড়ির প্রচণ্ড চাপ ছিল। হাসপাতালে নাহিদ হাসানের মৃত্যুর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তার স্বজনরা। মন্ত্রীর আশ্বাস, ছাত্রলীগ নেতাদের তৎপরতায় সংঘর্ষের মধ্যেই দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিদের বলেন, দ্রুতই থামানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী। সংঘর্ষ থামছে না কেন-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই এ ঘটনা কুল ডাউন হবে।

যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের আইনের মুখোমুখি হতে হবে।” শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি চাঁদপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকা কলেজে যেহেতু ক্লাসের পরিবেশ নেই তাই আমরা বলেছি, সেখানে আজ থেকেই ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাবে। এখন সব হল বন্ধ হয়ে যাবে, আশা করি, সব ঠিক হয়ে যাবে। উত্তেজনা আর ছড়াবে না।” এরমধ্যে দুপুর দেড়টার দিকে সেখানে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সাড়ে ৩টার দিকে জয় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসার সময় উপ পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমানও ছিলেন তার সঙ্গে।সাজ্জাদ তখন সাংবাদিকদের বলেন, “নিউ মার্কেট ঢাকার অন্যতম ব্যবসায়ী হাব। এই রোজার মধ্যে সংঘর্ষটা দীর্ঘস্থায়ী হোক এটা আমরা কেউ চাই না। ছাত্রলীগও কথা দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।” ছাত্রলীগ সভাপতি জয় বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।” পরিস্থিতি শান্ত করতে উপস্থিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও রেখক ভট্টাচার্য। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এর মধ্যে কলেজ ও ছাত্রাবাস বন্ধের ঘোষণা এলে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এর আগে ছাত্রলীগ সভাপতি জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ঘিরে ধরেন। দীর্ঘদিন ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজ শাখার নেতাকর্মীদের দাবি, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি থাকলে ব্যবসায়ীরা “এত সাহস পেত না”। পরে হল বন্ধের ঘোষণা দিলে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নেন। অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করা শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে গিয়ে লেখক বলেন, “হল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নয়।” ছাত্রাবাস বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিকাল ৩টার দিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ৫ মে পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে বিকালের মধ্যে খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার আগে থেকে অবরুদ্ধ থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মুক্ত হন। এরপর তিনি স্কয়ার হাসপাতালে যান সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে। এদিকে বেলা ১২টার দিকে পুলিশ আসার কিছুক্ষণ আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের একদল শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও বুধবার প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। সংঘর্ষ, ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ হলে থাকার ‘আশ্বাসে’ মুক্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থীকে দেখতে গেলেন স্কয়ারে, সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজের মঙ্গলবারের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ