রংপুর অটোর নগরীতে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা
রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুরে অটোর কারণে শহরে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা-রংপুরে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে রিকশা ও অটোরিকশা। এতে যানজটের কবলে পড়ে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। এ ছাড়াও, লাইসেন্সবিহীন এক শ্রেণির অদক্ষ চালকের হাতে চলা ব্যাটারিচালিত অটোর কারণেও শহরে দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। অভিযোগ রয়েছে, এসব চালকের বেশিরভাগই সড়কে যান চলাচলের নিয়মনীতি মেনে চলেন না। এসব অটো রংপুর মহানগর, পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জসহ জেলার অন্য সড়কগুলোতে বেপরোয়া চলাচল করে। ফলে প্রায়ই ঘটে অটোর সাথে অন্যান্য যানের দুর্ঘটনা। রসিক বলছেন, রেজিস্ট্রেশনের চেয়েও চারগুণ অটো চলছে নগরীতে। অবৈধ অটোরিকশাগুলো সড়কে নিষিদ্ধ করাসহ নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। গত এক সপ্তাহে রংপুর জেলার বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোর সঙ্গে ছোট বড় প্রায় ৩৫টি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নজিরের হাট, দমদমা, হাজিরহাটসহ ৫টি জায়গায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণহানি হয়েছে দুইজনের। আহত ও পঙ্গত্বের পর্যায়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রায় ২০ জনের অধিক। রংপুরের সচেতন মহল ও নাগরিক সমাজ বলছেন, নিবন্ধনহীন অদক্ষ ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়কে দৌরাত্ম্যের কারণে দিন দিন নগরীতে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখন এসব অদক্ষ ও নিবন্ধনহীন অটোচালকদের প্রশিক্ষিত করাসহ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ পর্যায়ে যাবে, পাশাপাশি যানজটের কবলে নাকাল হবে নগরবাসী। দুর্ঘটনায় আহত আমিনুল ইসলাম নামের এক সংবাদকর্মী বলেন, শুক্রবার (২১ এপ্রিল) ছুটির দিনে এক আত্মীয়র বাসায় ইফতার করতে মোটরসাইকেলে যেতেই নগরীর ধান গবেষণা এলাকায় চলতে থাকা একটি ব্যাটারিচালিত অটো উল্টো দিকে যাত্রীকে তুলতে হুট করে ডানদিকে মোর নেওয়াতেই তার বাইকটিকে ধাক্কা দেয় এতে মুহূর্তেই ট্রাকের নিচে ছিটকে যায় মোটরসাইকেলটি এবং ঘটনাস্থলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গুরুতর আহত হন সেই সংবাদকর্মী। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তথ্য মতে, এই সিটি থেকে নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ২৪০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। দুর্ঘটনাপ্রবণ ও বিপদজনক এসব হালকা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্র উল্টো। বৈধ-অবৈধ মিলে এখন ৪০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটো ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে নগরীতে। অথচ বাস্তব চিত্রে নগরীর পায়রা চত্বরের পাশে হারাগাছ সড়কের মধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পায়রা চত্বর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ, অটোরিকশায় গেলে সময় লাগছে আধা ঘণ্টা। এই সড়কের মতো রংপুর নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের ১২টি স্থানে ৩০টির বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে, এর সবগুলোই অবৈধ।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দেখা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। যাত্রী দেখলেই চালকেরা যেখানে-সেখানে রিকশা বা অটোরিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। নগরের কাচারিবাজার মোড় থেকে পুলিশ লাইনস স্কুল মোড়, টাউন হল চত্বর মোড় (লক্ষ্মী টকিজের সামনে) সিটি করপোরেশন ও সিটি বাজারের মোড়, সুপার মার্কেট মোড়, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় পর্যন্ত সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরোটা সময়ই যানজট থাকে।
রংপুর সিটি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে আসা মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘চার্জার রিকশায় বসে থেকে যেন হাঁপিয়ে উঠেছি। যানজটে আটকা পড়ে থাকা কলেজ রোড বিকন মোড়ের বাসিন্দা ফারুক মিয়া বলেন, ‘পুরো বাজার ঘুরে শাক-সবজিসহ অন্য পণ্যসামগ্রী কিনতে এক ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে। কিন্তু এখন দেখছি বাজার করতে যত সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় রাস্তায় চলে যাচ্ছে। নগরীর পায়রা চত্বরে বৈধ কাগজপত্র না থাকার কথা স্বীকার করে চার্জার রিকশাচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘রংপুর শহরে ভালোই উপার্জন হয়। কিন্তু একবার রিকশা নিয়ে যানজটে পড়লে অনেক সময় নষ্ট হয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত বৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার ২৪০ এবং বৈধ চার্জার রিকশার সংখ্যা ৩ হাজার। কিন্তু নগরজুড়ে বর্তমানে ১৫-২০ হাজারের মতো ব্যাটারিচালিত অটো ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে। রাস্তায় এসব যান চলাচল করার কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণে আনাসহ অদক্ষ চালকের কারণে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে কোনো রিকশা ও অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি যানজটের কারণে যেন মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। আর এসব বিষয়ে কাজ সাকসেসফুলভাবে করতে পারলেই সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ