মে দিবস মানে রক্তাক্ত এক ইতিহাসের সাক্ষী—মুহাম্মদ আলী
আরজুন নাহারঃ
১ লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকদের ন‍্যায‍্য অধিকার আদায় করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শ্রমিকদের তাজা প্রাণের বিনিময়েই সারা বিশ্বে ১ লা মে শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কিন্তু তারা শ্রমিক দিবস চেয়েছিলো না কি তাদের ন‍্যায‍্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো? নিশ্চয়ই তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই চেয়েছিলো তবে কি ১৮৮৬ সাল হতে এখন প্রায় ৩৭ বছরেও কি শ্রমিকরা তাদের ন‍্যায‍্য অধিকার পাচ্ছে? তাহলে প্রতিবছর কেনোই বা শ্রমিক দিবস পালিত হয়? এর কোন জবাব কি এই শ্রমিক শোষনকারীরা দিতে পারবে? শ্রমিককদের ঘামের ফসলেই সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রেখে বিশ্ব টিকে আছে। শ্রমিকরা সারা বিশ্বের চাকা সচল রাখলেও তাদের ভাগ‍্যের চাকা সচল রাখার জন্য ব‍্যর্থ বিশ্ব। বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় বিশ্বে বাংলাদেশের বাজার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কিন্তু এখনো তাদের ন‍্যায‍্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন সংগ্রাম এমন কি তাদের জীবনের বিনিময়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের বেতন ভাতা বাড়াতে সক্ষম হলেও বৈষম্য ঠিকই রয়ে গেছে। একজন শ্রমিক হিসেবে তাদের প্রধান কিছু অধিকারের মধ্যে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, ন‍্যায‍্য মজুরি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু অধিকাংশ কারখানায়ই শ্রমিকদর নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না। ফলে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ের আন্দোলনের ফলস্বরূপ সরকার দফায় দফায় বেতন ভাতা বাড়ানো হলেও এখনো অনেক কারখানায় মানা হচ্ছে না সরকারের নির্দেশনা। ফলে ন‍্যায‍্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শ্রমিকরা। বিশ্বে করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যেও শ্রমিকরা তাদের জীবন বাজি রেখে কারখানায় কাজ করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল রাখছে। কিন্তু সেই পরিমাণে শ্রমিকদের জীবন মান এখনো অনুন্নত রয়ে গেছে। তার জন‍্য দায়ী শোষণকারী কারখানার মালিক পক্ষও।

উল্লেখ‍্য, যে রানা প্লাজা ধসে শ্রমিক নিহতের পর একটু টনক নরছে। এমতাবস্থায় বিদেশি বায়ারদের চাপে পড়ে কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতি করতে তোরজোর শুরু হয়েছিলো। সরকার কারখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য মালিক পক্ষ কে বার বার নির্দেশনা দেওয়ার পর শুধুমাত্র ইপিজেডে উক্ত নির্দেশনা মানা হলেও মানা হচ্ছে না ইপিজেডের বাহিরের কারখানা গুলোতে। এর মানে হলো শ্রমিক শ্রেনির মধ‍্যে বৈষম্যতা। আজ পর্যন্ত তাদের ন‍্যায‍্য অধিকার তারা ফিরে পেতে আন্দোলন সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে। যদিও বা বাংলাদেশ ব‍্যতিত অন‍্যান‍্য দেশে শ্রমিকদের ন‍্যায‍্য অধিকার পাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র সেই তুলনায় উল্টো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ তাদের কারখানায় আসতে যে তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আন্দোলন করতে হয় আর আমাদের দেশে গাড়ি রাখা তো দূরের কথা এখনো বেতনের জন্য আন্দোলন করতে হয়। যা খুবই দুঃখজনক। শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের প্রতিনিয়ত যে নির্যাতনের স্বীকার বা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এর থেকে উত্তোরণের জন্য মালিক শ্রমিক এবং রাষ্ট্র ভূমিকা পালন করতে হবে। তবেই আগামীর স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ