সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সী-বীচে পর্যটকদের সীমাহীন দুর্ভোগ-দেখার কেউ নেই
আবদুল মামুন,সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম শহর হতে ৩০ কিলোমিটার উত্তরে সীতাকুণ্ড উপজেলার ৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। এক সময়ের অখ্যাত এই সমুদ্র সৈকত ছিল একমাত্র স্থানীয়দের কৃষি কাজ আর গরু মহিষ চারণের ক্ষেত্র। বিভিন্ন সময়ের বন্যার প্রেক্ষিতে বেড়িবাঁধ দিয়ে এ সী-বীচ কে যাতায়ত উপযোগী করেছে সরকার। সময়ের বিবর্তনে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আর অত্যাধুনিক ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোনের বদৌলতে দেশ বিদেশে বিগত কয়েক বছরে হঠাৎই বিখ্যাত হয়ে গেছে এ সমুদ্র সৈকত। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ক্রমান্বয়ে পর্যটকরা আশা শুরু করেছে এখানে। পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ব্যক্তিগত গাড়ী এবং অনেকেই সীতাকুণ্ড বাজার হতে সি এন জি টেক্সি যোগে এখানে আসে। উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সি এন জি টেক্সি হাইওয়ে তে নিষিদ্ধ হওয়ায় সীতাকুণ্ড বাজারে অসংখ্য সি এন জি টেক্সি পাওয়া যায় যেগুলো সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, গুলিয়াখালী, ভাটেরখীল, সৈয়দপুর, ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রামে আসা যাওয়া করে।যেহেতু গুলিয়াখালী সী-বীচ একটা সরকার ঘোষিত পর্যটন এলাকা তাই সব সময় প্রচুর পর্যটক থাকাতে বিভিন্ন স্থানের সি এন জি টেক্সি /টেম্পু/লেগুনা এখানে ভাড়া পাওয়ার আশায় থাকতে চায়। কিন্তু স্থানীয় সি এন জি ড্রাইভারেরা একটা সিন্ডিকেট করে এ সিন্ডিকেটের বাইরের কোন যানবাহন কে এখান থেকে লোকালভাবে যাত্রী নেওয়ার জন্য অবস্থান করতে দেয় না। অন্যদিকে শুধুমাত্র এই সিন্ডিকেটের ট্যাক্সি গুলোই এখানে অবস্থান করে। এরা এই সিন্ডিকেট কে নাম দিয়েছে গুলিয়াখালী সি এন জি চালক সমিতি। জানা যায়, এ সমিতির কাছে জিম্মী এলাকাবাসী, জিম্মী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা, জিম্মী স্থানীয় রোগী, অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ মানুষেরা। সীতাকুণ্ড বাজার হতে গুলিয়াখালী বীচের আনুমানিক দূরর্ত্ব ৪-৫ কিলোমিটারের মত। যেখানে ন্যায়সংগত ভাড়া হয়ত ১০০ টাকা। কিন্তু এরা সর্বনিম্ন ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া নেয়। এ সিন্ডিকেটের বাইরের কোন সিএনজি ট্যাক্সি কোন রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে এখানে গেলেও তাকে আর কোন ভাড়া নিয়ে আসতে দেয় না এ সিন্ডিকেট।ফলে পর্যটকদের আসার সময় চরম ভোগান্তি শুরু হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় পর্যটকরা বীচ থেকে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে ফিরে আসার জন্য সিএনজি চালক সমিতি নামধারী এ অপশক্তির সদস্যদের কে ৩০০/৪০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। আশ্চর্য ব্যাপার হল, স্থানীয় জনসাধারণ পর্যন্ত তাদের কাছে জিম্মী।সীতাকুণ্ড বাজার হতে ৩ কি:মি পশ্চিমে গুলিয়াখালী গ্রাম। গ্রামে ট্যাক্সি ভাড়া ৫০ টাকা। পর্যটক বেড়ে যাওয়ার পর হতে স্থানীয় লোকজনদের থেকেও এরা ইচ্ছামত ভাড়া নিচ্ছে। জরুরী কারণে রোগী বা বয়স্কদের চরম অসুবিধা হচ্ছে, গুলিয়াখালী বীচের নিকটবর্তী এলাকায় অসংখ্য গরীব কৃষকদের গরু ছাগল চারণেও চরম ভোগান্তি হচ্ছে এ সিন্ডিকেটের কারণে।কারণ তারা খুুব বেপরোয়া গতি তে গাড়ী চালায় যার ফলে মারাত্মকভাবে সড়কে দূূূূর্ঘটনা হওয়ার উচ্চঝুুঁকি রয়েছে।এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাইনবোর্ড দেখে অনেক পর্যটক আশান্বিত হলেও এসব দুর্ভোগ দূরীকরণে জেলা প্রশাসনের কোন ব্যবস্থায় নজরে পড়েনি। এলাকাবাসী এবং পর্যটকদের দাবী গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এবং গুলিয়াখালীর স্থানীয় বাজারে যাতে দেশের সর্বস্তরের যে কোন সিএনজি ট্যাক্সি /টেম্পু /লেগুনা যাত্রী নিতে পারে জেলা প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করে দিবে। এতে গাড়ী পাওয়া সহজলভ্য হবে, ভাড়া কমবে, যাত্রী হয়রানি কমবে।

একটি জাতীয় পর্যটন এলাকা কখনো স্থানীয় একটি সিএনজি চালক সমিতির নামে অপশক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না। চট্টগ্রাম শহরের ব্যায়বহুল এলাকা ফয়েজলেকে একটি প্রাইভেট কার বা নোহার পার্কিং ফি রাখা হয় ৫০ টাকা।আর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এলাকায় পার্কিং ফি সর্বনিম্ন ৫০ হতে শুরু করে ১০০/১৫০/২০০ যেদিন যার থেকে যা পাওয়া যায় তা নেয় এরা। দেখার কেউ নেই, বলারও কেউ নেই। যেদিন গাড়ী বেশি সেদিন ১০০-২০০ টাকা, গাড়ী কম হলে ৫০-১০০ টাকা। স্থানীয় দোকান গুলোতেও নানান ভাবে হয়রানির শিকার হয় পর্যটকরা।এবং যারা দূর-দুরান্ত থেকে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ী যোগে বীচ এ আসে তাদের গাড়ী গুলা মূল বীচ এলাকায় নিতে পারে না এর কারণ হলো মাটি দিয়ে খালের উপর দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করে মূল বীচ এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে যাতে করে পর্যটকরা গাড়ী নিয়ে সহজে বীচ এ চলে যেতে পারে।কিন্তু যারা গাড়ী পার্কিং এর টাকা নেই তারা এই বাঁধ টা কেটে দেয়, যাতে করে পর্যটকরা গাড়ী গুলো মূল বীচ এ নিয়ে যেতে না পারে এবং বাধ্য হয়ে তাদের কাছে যেন গাড়ী গুলো পার্কিং দেয় এর সুবাধে এই সিন্ডিকেটের লোকেরা পর্যটকদের জিম্মী করে তাদের কাছ থেকে গাড়ী পার্কিং এর বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করে। তাই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিকট বিনীত আবেদন পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবে, এ পর্যটন এলাকা হতে চালক সমিতি তথা এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সিন্ডিকেট পুরোপুরি ভেঙ্গে এই সৈকত এলাকায় সব ধরণের পরিবহণের পার্কিং এর জন্য সমান সুযোগ করে দেওয়া হোক। সীতাকুণ্ড বাজার হতে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা এবং সীতাকুণ্ড বাজার হতে গুলিয়াখালী গ্রামের বাজার তথা সিএনজি স্টোপিজ পর্যন্ত ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করে এর বেশি দাবী কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সরকারী ভাবে গাড়ী পার্কিং এর জায়গা তৈরি করে ন্যায়সংগত পার্কিং রেট করা হোক। একটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হোক। এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করা হোক।চালকদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিন। পর্যটকদের জিম্মী দশা হতে উদ্ধার করুন। স্থানীয় দের নিরাপদ অঞ্চল নির্মাণ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ