প্রথম বারের মত এন্ডোস্কপিক ব্রেইন টিউমার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন রংপুর মেডিকেলে
রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এন্ডোস্কপিক ব্রেইন টিউমার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই অস্ত্রোপচার করেছে ছয় সদস্যের একটি চিকিৎসক দল। বৃহস্পতিবার (১৯মে) ঘটনাটি জানাজানি হলেও সাফল্যগাথা এই অস্ত্রোপচারটি গত সোমবার রমেক হাসপাতালেই সম্পন্ন হয়। সেইদিন (১৬মে) রাত সাড়ে দশটায় শুরু হওয়া এ অস্ত্রোপচার আলোর মুখ দেখে রাত তিনটার দিকে। রমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তোফায়েল হোসাইন ভূঁইয়াএই অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রমেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজকুমার রায়, সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীমা সুলতানা ও হাসপাতালের অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের ডা. হাসি। এছাড়া সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইসমে আজম জিকো ছিলেন। আলোচিত এই অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে ডা. ইসমে আজম জিকো বলেন, রমেক হাসপাতালে ৩৫ বছর বয়স্ক এক রোগী ভর্তি হন। তিনি উত্তরবঙ্গের মানুষ। তাঁর সমস্যা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে। তিনি ডান চোখে দেখেন না, বাম চোখে দেখেন, কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে কম। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জনরা চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি (এমআরআই) করে ওই রোগীর চোখের নার্ভের নিচে একটা টিউমার দেখতে পায়। টিউমারটি দিন দিন বাড়তে থাকায় যেখানে চোখের নার্ভের জাংশন হয়, সেখানে প্রেসার দিচ্ছে। জিকো আরও বলেন, টিউমারটি চোখের নার্ভে চাপ দেওয়ার কারণে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছিল। টিউমার শনাক্তের পর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেন। অস্ত্রোপচারটি দুইভাবে করা যায়, কেটে অথবা নাক দিয়ে এন্ডোস্কপি দিয়ে। এর আগে রমেক হাসপাতালে কেটে অনেক সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু কখনো উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নাক দিয়ে এন্ডোস্কপিক করা হয়নি। এন্ডোস্কপিক করতে যত সুযোগ-সুবিধা ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন, সেটা পুরোপুরি রমেকে ছিল না। একারণে সেখানকার নিউরোসার্জনরা প্রয়োজনীয় বাকি সাপোর্টটা ঢাকা থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই সূত্র ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ইসমে আজম জিকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

জিকো বলেন, আমাকে ফোনে বলা হলো ঢাকা থেকে সাপোর্ট দিলে অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে। এবং আমাকে তাঁরা আমার ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি নিয়ে রংপুরে ডেকে নেয়। আমি তাদের সঙ্গে অপারেশনটিতে অংশ নিয়েছি। ওই রোগীর এন্ডোস্কপিক ব্রেইন টিউমার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যম একটি নতুন ইতিহাসও সৃষ্টি হলো। তিনি আরও বলেন, ব্যাপারটা আমি খুব আনন্দ সহকারে নিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। পরে আমরা সাড়ে দশটার দিকে রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দেই। কাজ শেষ করতে তিনটা বেজে যায়। সোয়া তিনটার দিকে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। রোগীর অবস্থা এখন খুবই ভালো। রোগী কথা-বার্তা ও হাঁটা-চলা করতে পারছেন, খেতেও পারছেন। তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে। জানতে চাইলে অস্ত্রোপচার দলের অন্যতম সদস্য রমেক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীমা সুলতানা বলেন, এই অপারেশনটি সম্পন্ন করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। এমন একটি অপারেশন প্রথমবারের মতো রংপুরে করতে পেরেছি। আমাদের এখানে অনেক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা রয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে অপারেশনটি শেষ করতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত। সরকার আমাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে ভবিষ্যতেও এমন অপারেশন আরও করা সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ