মধ্যেরধারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাজুক পরিস্থিতি
আবদুল মামুন,সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৮৫নং মধ্যেরধারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাজুক পরিস্থিতি। চরম অনিহার ও দূরবির্শা পরিবেশে এখানে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন এবং শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন। অল্প বৃষ্টি হলেই প্রতিটি শ্রেণী কক্ষের মধ্যে অনবরত পানি পড়ে এবং মেঝেতে হাটু পরিমাণ পানি জমে যায়। যার জন্যে এখানে শিক্ষার্থীদের কে কোন পাঠদানের পরিবেশ নেই।শিক্ষকদের অফিস রুমের ভেতরেও পানি পড়ে এবং মেঝেতেও পানি জমে যায় এবং স্কুলের চারপাশের বেড়াগুলা ঝরে পড়ে গেছে যার জন্যে অফিস রুমের কোন নিরাপত্তা নেই। যেকোন সময়ে অত্র বিদ্যালয়ে চুরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে স্কুলটি তৈরী করা হয়েছিল বাঁশ এবং নিম্মমানের টিন, বেড়া দিয়ে। অত্র বিদ্যালয়ের একাধিক ক্ষুদে শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা বলেন, পরিবেশ যখন খারাপ হয় তখন আমরা বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠায় না। কারণ স্কুল এমন একটা পরিস্থিতে আছে এখানে বাচ্চাদেরকে পড়ানোর মত কোন পরিবেশ নেই। কোন দূর্ঘটনা যখন ঘটে তখন প্রশাসনের টনক নড়ে। অফিস রুমেরও এমন একটা পরিস্থিতি শিক্ষকরা এখানেও বসতে পারে না। সামান্য বৃষ্টি হলে রুমের মধ্যে পানি পড়ে এবং মেঝেতেও হাটু পরিমাণ পানি জমে যায়। আমরা শিক্ষার্থীদের অভিবাবক হিসাবে প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি স্কুল কর্তৃপক্ষ যাতে করে ওনাদের অফিসের লোক পাঠিয়ে স্কুলটাকে পরির্দশন করে এবং দ্রুত যাতে স্কুলটা মেরামত করে দেয় সে জন্যে অনুরোধ করছি। এবিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল হাছান বলেন, আমার স্কুলটা যখন নতুন ভবন করার জন্যে স্কুল স্থান্তরিত করা হয় কন্ট্রাক্টরের লোকজন আমাদেরকে কমিটমেন্ট দিয়েছিল এই স্কুল ২বছর মেয়াদী হবে। যখন স্কুল তৈরীর কাজ নিম্মমানের সরঞ্জাম দিয়ে করতে চেয়েছিল তখন আমরা ভেটো দিয়েছিলাম। আমাদের চেয়ারম্যানকেও এবিষয়ে অবহিত করেছিলাম এবং আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা বলেছিল এই স্কুলের মেয়াদ হবে ২বছর। স্কুলের কোন ক্ষতি হলে আমরা মাঝে মাঝে মেরামত করে দিবো। কিন্তু এখন যখন স্কুলের অবস্থা খুব খারাপ এখানে পাঠদানের কোন পরিবেশ নেই এই বিষয় গুলো স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা বিষয়টি কর্ণপাতও করেনি। এখন স্কুলের এমন অবস্থা এখানে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদানের কোন পরিবেশ নেই।এইসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিবাবকরা আমাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে তখন আমরা তাদের কে এটার কোন সঠিক জবাব দিতে পারিনা। এখানে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নেই। এ কারণে আমরা পালাক্রমে বাচ্চাদেরকে ক্লাস করাই। আমাদের এখানে বাচ্চাদের এবং শিক্ষকদের জন্যে টয়লেটের ব্যবস্থা করার কথা ছিল সেটাও করেনি। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে স্কুলটা বর্তমানে অবস্থিত এই জায়গাটাও একজন সাধারণ পাবলিকের। সে তার বাড়িতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি পরিবার নিয়ে বসবাস করে। তাদের একটি মাত্র টয়লেট আছে সেখানে এতগুলো বাচ্চা কিভাবে ব্যবহার করতে পারে? তারা সেখানে যেতে বাঁধা দেয়। বিভিন্ন সময়ে বাচ্চাদের যখন প্রাকৃতিক ডাক আসে তখন তাদেরকে বাড়ীতে যাওয়ার জন্য ছুটি দিয়ে দিতে হয়। আমাদের এই পাঠদানের অসুবিধার কারণে অনেক বাচ্চা এই বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। যার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলাউদ্দীন বলেন, আমার স্কুলের বর্তমান অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এখানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করার মত কোন পরিবেশ নেই। সামান্য বৃষ্টি হলে অফিস রুম থেকে শুরু করে প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ে এবং মেঝেতে হাটু পরিমাণ পানি জমে যায়। যার জন্যে পানির মধ্যে বসে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে হয় এবং শিক্ষকদের কেও পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের কোন নিরাপত্তা নেই। এর একটি মাত্র কারণ হল স্কুল তৈরীর কাজে বাঁশ এবং নিম্মমানের টিন, বেড়া ব্যবহার করা হয়েছিল। যখন এসব নিম্মমানের সরঞ্জামাদি দিয়ে স্কুলটি তৈরী করা হচ্ছিল তখন আমরা বাঁধা দিয়ে ছিলাম যাতে স্কুল তৈরীর কাজে এসব নিম্মমানের সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করে। কিন্তু তখন তারা বলেছিল এই স্কুলটা সল্পমেয়াদীর জন্যে। এখন যখন স্কুলের নতুন ভবনের কাজ তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে এখনও কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি এদিকে অস্থায়ীভাবে স্কুল যেটা করা হয়েছিল সেটাতে নিম্মমানের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করায় সেটার চারপাশের বেড়া ঝরে পড়ে গেছে এবং স্কুলের উপরের টিন গুলো নষ্ট হয়ে গেছে যার জন্যে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। যার ফলে লেখাপড়ার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে স্কুলটি।স্কলের এই বর্তমান পরিস্তিতি সম্পর্কে নতুন ভবনের টেন্ডার পেয়েছেন যিনি ওনার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কে একাধিক বার বলার পরও তারা এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেইনি। তাই আমি অত্র স্কুলের সভাপতি হিসাবে যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি অতি তাড়াড়াড়ি যেন আমার স্কুল টা মেরামত করে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্যে লেখাপড়া করার মত পরিবেশ তৈরী করে দেয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাস নিজামী বলেন, আমাদের মধ্যেরধারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ৩বছর অতিক্রান্ত চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে আমাদের এই কাজটি যথাযতভাবে হয়নি। হয়নি বললেও ঠিক হবে না কিছুই হয়নি তখনও। এক বছর আগে সম্ভবতই আমাদের এ মধ্যেরধারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য একটা অস্থায়ী বিদ্যালয় করা হয়েছিল। যেটা টিন আর বেড়া দিয়ে করা হয়েছে। এই অবস্থায় এখন স্কুলটা যে পর্যায়ে আছে একটা নাজুক পরিস্তিতে রয়েছে।এরকম একটা পরিবেশে কোন ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করতে পারবে আমার বিশ্বাস হয় না। ঐ বিদ্যালয়ের পরিবেশ খুবই খারাপ। এই কচিকচি ছেলেমেয়েরা লেখা পড়া করার মত কোন পরিবেশ ঐখানে নেই। এই পরিবেশকে অনতিবিলম্বে উন্নত করার জন্যে আমি কন্ট্রাক্টরের যে সাইট ম্যানেজার যিনি আছেন তার সাথে কথা বলেছি এখানে শিক্ষার্থীদের কে পাঠদান দেওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্যে। বিশেষ করে যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে কিংবা স্কুলের টিন, বেড়া, দরজা, জানালা এসব মেরামত করে দেওয়ার জন্যে এবং চৌচাগারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যে। সেখানে এই পরিবেশ গুলো যাতে সমন্নুত রেখে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান যাতে উন্নত হয় সেরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যে আমি যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি। এবিষয়ে জানতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ