গাউছে মুখতারের কারামত ও মালেক শাহ কতুবী(রহঃ) এর আধ্যাত্মিক জীবন দর্শন
হোসেন বাবলা, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম শহর থেকে এক ভদ্র লোক বিরাট এক সমস্যা নিয়ে কুতুব শরীফ দরবারে যান। দরবারে আসার পর ভদ্র লোককে কোনো ভাবে শহরে আসতে দিচ্ছে না কুতুব শরীফ দরবারের আল্লামা হযরত আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ)। হঠাৎ করে রাত বারটায় এজাযত (অনুমতি) দিলেন তাকে হঠাৎ চলে যাওয়ার জন্য। সে বেচারা চিন্তা করলেন এত রাতে কিভাবে পার হবে কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে। তখন কুতুবদিয়া থেকে পারাপারে রাত্রে কোন নৌযান কিংবা কোন বাহন ছিল না। কিন্তু এ ভদ্রলোক পরিবারকে নিয়ে এত রাতে কুতুবদিয়া ঘাটে আসলেন। তখন দেখা গেল এক নৌকার (নৌযান) মাঝি ঘাটে বসে আছে (সুবহানাল্লাহ)। (মালেক শাহ হুজুর ঘর থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন ঘাটে আরেকজন মাঝি এসেছেন। এজন্য ১২ টার সময় অনুমতি দিয়েছিলেন মাঝি বলতে লাগল চট্টগ্রাম শহরে কে যাবেন আসেন আসেন। ভদ্রলোক নৌকায় উঠলেন এবং সকাল হতে না হতে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছে গেলেন। যে সমস্যা নিয়ে এ ভদ্র লোক কুতুব শরীফ দরবারে গিয়েছিলেন তা তো মুশকিল আসান হয়েছেন বরং ঐ দিন সকালে তার পরিবার ঘটে যাওয়া পর আরো একটি মহাসমস্যা থেকে মুক্তি পেলেন। এ ধরনের অসংখ্যা অলৌকিক ঘটনা কথিত আছে কুতুব শরীফ দরবারের। যা লিখনি দিয়ে শেষ করা যাবে না। অপর এক অলৌকিক ঘটনা, তৎকালীন সময়ে হযরতুল আল্লামা শাহ আবদুল মালেক আল-কুতুবী(রাঃ) এর সান্নিধ্যে নিয়মিত আসতেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বরইতলীর খতিবে আজম নামে খ্যাত ও হযরতুল আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ (রাঃ)। উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে যে, তাকে হযরত শাহ সুফি আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ) খুবই সম্মান করতেন। একবার তাকে শাহ্ আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ) একজোড়া জুতা উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ জুতা হযরত মালেক শাহ (রাঃ) কে কোন ভক্ত উপহার দিয়েছিলেন। এ জুতার নাম্বার ছিল ৫ এবং খতিবে আজমের জুতার নাম্বার ছিল ৮। খতিবে আজমের পায়ে এ জুতা স্বভাবত হবে না মনে করে নিতে অস্বীকৃতি ভাব। এমতাবস্থয় হযরত শাহ আবদুল মালেক (রাঃ) তাঁকে ধমক দিয়ে জোর করে ঐ জুতা জোড়া পরিধান করিয়েছিলেন। দেখা গেল অলৌকিকভাবে এ জুতা বরাবরই হয়ে গেল। আসলে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মানুষের মনের কথা জানতে পারতেন। আল্লাহর কাছে ধ্যানে যা চাইতেন তা সম্ভব করতে পারতেন। এটাই একটা অলৌকিক কেরামত। সুবহানাল্লাহ। অপর অন্য অলৌকিক ঘটনা হলো, চট্টগ্রামের মিরসরাই নিজামপুর কলেজের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম কবির কল্যাণকর কাজের জন্য কুতুব শরীফ দরবারের নামে একটি ছাগল মানত করেছিলেন। অলৌকিকভাবে তার এ কাজ সফল হয়ে যায়। মানত অনুযায়ী ছাগল নিয়ে কুতুবদিয়ার কুতুব শরীফ দরবারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, তার চিন্তা ছিল কিভাবে ছাগলটা ঐ দরবারে নেবে। অধ্যাপক মো. গোলাম কবির ও অধ্যাপক চঞ্চল সরকার মানতের ছাগলটি নিয়ে চকরিয়া বর্তমানে পেকুয়া থানার মগনামা ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন, তাদের ভাষ্য মতে, হঠাৎ করে লুঙ্গী পড়া এক ভদ্র লোক স্বপ্নের কথা বলে তাদের কে জানান, মালেক সাহেব হুজুর আমাকে বলছেন চট্টগ্রাম শহর থেকে দুই জন লোক একটি ছাগল নিয়ে মগনামা ঘাটে এসেছে তুমি তাদেরকে দরবারে নিয়ে এস, সুবহানাল্লাহ। তারপর তারা ছাগলটা সহ ঐ ভদ্রলোকের সাথে কুতুব শরীফ দরবারে পৌঁছে যান। কিছুক্ষণ পর অলৌকিকভাবে লুংগি পড়া লোকটি কোথায় যেন চলে যায় তারা বুঝে উঠার আগেই, সুবহানাল্লাহ। এভাবে হাজারো অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল হযরতের জীবনে যা লিখে শেষ করা যাবে না।

আধ্যাত্মিক জীবনে হযরত মালেক শাহ (রাঃ) হযরত শাহ আবদুল মালেক আল কুতুবী (রাঃ) সম্পূর্ণ জীবনটাই ছিল অলৌকিক ঘটনাবলীতে ভরপুর শুধু তাই নয়, চালচলন ছিল স্বাভাবিক জীবনের মত। জীবনে খাওয়া, দাওয়া, চাওয়া, পাওয়ার তেমন কিছুর লোভ ছিল না, নিজে আল্লাহ তায়ালার জিকিরে মগ্ন থাকতেন বিধায় অনেক বেলা তিনি আহার করতেন না। আহার করলেও কখন করেছে তা কেউ তেমন দেখননি। কিন্তু তার কাছে আসা লোকদেরকে তিনি পেট ভরে খাওয়াতেন। তিনি সীমাহীন দায়ালু ও অতিথিপরায়ন ছিলেন। তামাকের হুক্কা ছিল হযরতুল আল্লামা শাহ আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ) এর প্রিয়। শীতকাল ও গরমকালে একটি হাফ হাতা গেঞ্জি নিয়ে তিনি মহান আল্লাহ তালার ধ্যানে মশগুল থাকতেন। হযরত শাহসুফি আল্লামা আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ) কখন কি করেছেন তা কেউ দেখতেন না। কিন্তু যা বলত তাই ঘটে যেত, সুবহানাল্লাহ। আরাম ভোগ-বিলাস পছন্দ করতেন না। তার বৈঠক খানায় একটা বেতের পাটি, বেতের চেয়ার ছিল মাত্র। হুজারা খানায় আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। শৈশবে দেখা হযরত শাহসুফি আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল কুতুবী (রাঃ) খুব কম পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতেন। এমনকি দিনের বেলায় অনেক সময় কোন খাদ্যও গ্রহণ করতেন না। তার প্রিয় জিনিস ছিল ‘হুক্কা’ খাওয়া। হুক্কা হচ্ছে সিসার একটি পাত্র। যেটার নিচের অংশের পানি উপরের অংশে একটি মাটির কিংবা দস্তার একটি পাত্র থাকে গ্রামীন ভাষায় ‘কলকি’ বলা হয়। পানির উপরিভাগে নল দিয়ে সামান্য সামান্য করে ধোঁয়ার স্বাদ নিতেন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলি, কেউ এটাকে গাজার সাথে মিশিয়ে গুনাহগার হবেন না, হুক্কা আর গাজা এক জিনিস নয়, গাজা খেলে নেশা হয়, কিন্তু হুক্কায় নেশা হয় না। মূলত ক্ষুধা না লাগার জন্য তিনি হুক্কা খেতেন এটা আমার নিজস্ব দাবী, হযরত মালেক শাহ কতুবী রহঃ কেবলা আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত দিনের পর দিন মাসের পর মাস অনেক ক্ষেত্রেই অনাহারে থাকতেন। সাধনায় এমন মশগুল থাকতেন খাদ্য গ্রহণের সময়টা এমনি এমনিতে চলে যেত, তিনি ঘুমাতেন কম। তিনি নিজে ছিলেন ত্যাগী, সারা জীবনই ত্যাগ ও সাধনায় কাটিয়েছেন। বলতে গেলে ওনার জীবনটাই ছিল ‘তাওয়াক্কালতু, আল্লাহ উপর। তিনি ভবিষ্যতের জন্য জমা করার চিন্তা করতেন না। বরং অকারতে দান করে যেতেন। দরবারে আসা মানুষদের আতিথেয়তার খুব বেশি খুশি হতেন। তার সান্নিধ্যে যে যেতে পেরেছে সে কিছু না কিছু পেয়েছেন, সুবাহানাল্লাহ।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ