লক্ষ্মীপুরে সাংবাদিক পলাশ হত্যায় ২জনকে ২০ বছর কারাদণ্ড
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুর তরুণ সাংবাদিক শাহ মনির পলাশ হত্যার ঘটনায় আসামি আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদের ১০দশ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১০দশ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। মঙ্গলবার (২৬জুলাই) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। তবে এই রায়ে সন্তুষ্ট নন মামলার বাদী পলাশের বাবা মনিরুল ইসলামসহ পরিবার। তারা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে পলাশ মারা যান। এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত ছিল না। এজন্য আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত ইউছুফ ও ছায়েদ সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের আক্তারুজ্জামানের ছেলে।পলাশের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেটাকে ইউছুফ ও ছায়েদ হত্যা করেছে। কিন্তু আমি যোগ্য বিচার পাইনি। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আমি উচ্চ আদালতে যাব।। পলাশের ভাবি শিল্পি আক্তার বলেন, ৫ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু রায়ে আমদের মন ভেঙে গেছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। জামিনে বের হয়ে আসামি ছায়েদ গত ৩ বছর ধরে আমাদের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

পলাশের বন্ধু আবদুল কাইয়ুম বলেন, পলাশের মৃত্যু অনেক কষ্টকর ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পলাশের মৃত্যুর সেই বিভিষীকাময় দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। কিন্তু রায় ততটুকু সন্তোষজনক হয়নি। বাদীর আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, এ রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট নয়। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্র জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে পলাশদের বাগানের গাছ কেটে নেওয়ার চেষ্টা করে তার দুই চাচাতো ভাই আবু ইউছুফ ও আবু ছায়েদ। এনিয়ে ঝগড়ার শব্দ শুনে পলাশের ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হয়ে দেখে তার বাবা মনিরকে ইট নিক্ষেপ করছে চাচাতো ভাইয়েরা। একপর্যায়ে তিনি ইটের আঘাতে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাটি দেখেই দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে মাটি থেকে তুলছিলো পলাশ। হঠাৎ পেছন থেকে রড দিয়ে পলাশের মাথায় আঘাত করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটে পড়েন। তাৎক্ষণিক তিনি অচেতন হয়ে যান। এরপরও তার বুকে রড ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে চাচাতো ভাইয়েরা। আঘাতে পলাশের মাথা না ফেটে ভেতরে রক্ত জমাট বেধে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় রেফার করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি রক্ত বমি করলে তাকে নোয়াখালী হাসপাতালেও নেওয়া হয়। সেখান থেকেও চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঢাকা যাওয়ার পথে তিনি বেশ কয়েকবার রক্ত বমি করেন। অবশেষে পলাশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করতে রাত হয়ে যায়। চিকিৎসক না থাকায় পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় অপারেশনের সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই সময়টুকু তিনি পাননি। এরআগে ভোরেই তিনি মারা যান। একইদিন সন্ধ্যায় পলাশের বাবা বাদি হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আবদুল আলিম আদালতে ইউছুফ ও ছায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও ১০ জন সাক্ষির সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেয়।প্রসঙ্গত, নিহত পলাশ সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মাছিমনগর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলামের ছেলে। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ২৫ বছর। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলেন। তরুণ এই সাংবাদিক ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ