১ মহররম হিজরি নববর্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি
হোসেন মিন্টুঃ
মুক্ত নগ্ন আকাশ সংস্কৃতি ও মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ, নেটকেন্দ্রিক পর্নোগ্রাফিতে আচ্ছন্ন যুব সমাজের ভ্রষ্টতা ও নৈতিক অধোগামিতা ঠেকাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ১ মহররম হিজরি নববর্ষের দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে হিজরি নববর্ষ ১৪৪৪ কে বরণ করা হয়েছে। হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে ১৩তম হিজরি নববর্ষ বরণে নানা কর্মসূচি নেয়া হয়। আজ ৩১ জুলাই (১মহররম) রবিবার নগরীর মুরাদপুরস্থ আপন গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারে দিনব্যাপী হিজরি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামদ, না’তে রাসূল (দ), গজল, মরমী, মাইজভান্ডারী ও উজ্জীবনধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে হিজরি নতুন বছরকে বরণ করে নেন বিভিন্ন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের শায়ের ও খুদে শিল্পীরা। এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান পীরে তরিকত আল্লামা মুহাম্মদ গোলামুর রহমান আশরফ শাহ। প্রধান অতিথি ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। উদ্বোধক ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআত বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আল্লামা কাযী মুঈন উদ্দিন আশরাফী। প্রধান আলোচক ছিলেন এডভোকেট মোসাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা-ওএসি সভাপতি আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনসারী, রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ আল্লামা তৈয়ব আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিকী। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, হিজরি সন ও তারিখ মেনে মুসলমানদের সার্বিক জীবনধারা চলে আসছে। ইসলামী নানা দিবস ও আচার উৎসব হিজরি সন ও তারিখ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তাই, হিজরি সনের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। বক্তারা বলেন, দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির দিকে চললেও জনগণের নৈতিক মান ও মূল্যবোধ আজ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পুত্রের হাতে মা-বাবা খুন হচ্ছে। শিক্ষক মার খাচ্ছে ছাত্রের হাতে। যৌতুকের দাবিতে স্বামীর হাতে খুনের শিকার হচ্ছে নারীরা। মানুষের নৈতিকতার পারদ আজ নিন্মমুখী। অন্যদিকে যুব তরুণরা মাদক ও পর্নোগ্রাফিতে মজে থেকে নিজেদের অসীম সম্ভাবনার ছেদ টানছে। এ দুঃসহ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। যুব তরুণদেরকে আদর্শিকভাবে উজ্জীবিত করতে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারকেও বহুমাত্রিক কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধান অতিথি আলহাজ্ব সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, হিজরি সনের সঙ্গে মিশে আছে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা। তাই, হিজরি নববর্ষ পালনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তিনি যুব তরুণদেরকে নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন। উদ্বোধক আল্লামা কাযী মুঈন উদ্দিন আশরাফী বলেন, আরব আমিরাতসহ বহু মুসলিম দেশে ১ মহররম সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের আমাদের এই প্রিয় স্বদেশে হিজরি নববর্ষে ছুটি না থাকা দুঃখজনক। তিনি ১ মহররম সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আশরফ শাহ বলেন, মুসলমান হিসেবে আমাদের রয়েছে নিজস্ব সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। তাই ইসলামী ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এগিয়ে আসতে সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ কবি সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবী ও আলেম সমাজের ভূমিকা কামনা করেন তিনি। হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ আবু আজম ও প্রচার সচিব মুহাম্মদ আমান উল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হিজরি বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অতিথি ও আলোচক ছিলেন স উ ম আব্দুস সামাদ, কাজী মুহাম্মদ সোলাইমান চৌধুরী, শাহ নূর মুহাম্মদ আলকাদেরী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রজভী, অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ ইসমাইল নোমানী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তালেব বেলাল, ড. মাসুম চৌধুরী, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, এডভোকেট মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন আজহারী, মাওলানা আব্দুল আজিজ আনোয়ারী, শাহজাদা সৈয়দ শফিউল আজম ইছাপুরী, অধ্যাপক মীর আবদুর রহিম মুনিরী, নাছির উদ্দীন মাহমুদ, আ ন ম তৈয়্যব আলী, মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, অধ্যাপক আবুল মনছুর দৌলতী, এস এম ইয়াছিন হোসাইন হায়দরী, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, মুহাম্মদ আলী হোসাইন, ডি আই এম জাহাঙ্গীর আলম, সৈয়দ জামাল উদ্দিন ফরহাদাবাদী, ডা. এস এম সরওয়ার, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমদ প্রমুখ। মিলাদ কিয়াম শেষে দেশ-জাতির শান্তি-সমৃদ্ধি-কল্যাণ, মুসলিম উন্মাহর ঐক্য ও সংহতি এবং বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণসহ বৈশ্বিক শান্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। হাজারো জনতা হিজরি নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ