রংপুরের মিঠাপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

রংপুরের মিঠাপুকুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও, শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে প্রতিবাদ সমাবেশ, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়টির মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অভিভাবক আবদুল মজিদ মিয়া। এসময় বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বাবর আলী, দাতা সদস্য মোজাফফর হোসেন, মোকছেদুল হক, মিজানুর রহমান, ফিরোজ মন্ডল, কদম আলী, রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক সাজেদুর রহমান প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান গত ১৪ জুন অবসরে যান। তারপরও তিনি জোর করে দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন না। অথচ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, দিনাজপুরের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত চিঠিতে সহকারী প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক পদ আঁকড়ে ধরে আছেন।

রহস্যজনক কারণে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইয়াছিন আলীও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। এ ছাড়াও, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ওই কক্ষে থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হচ্ছে। পাঠদানও হচ্ছে না ঠিকমত। এ কারণে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেঘলা আক্তার, ইসরাত জাহান, সুরাইয়া আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক আতিয়ার স্যার অবসরে গিয়েও চলে যাচ্ছেন না। সহকারী প্রধান শিক্ষক স্যারকে দায়িত্বও বুঝে দিচ্ছেন না। এতে, বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারছি না।

একই কথা বলেন, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার নিতি, নুসরাত জাহান, তাবাসসুম আক্তার, লাম ইয়া খাতুন, অষ্টম শ্রেণির রনজিনা রায় রিংকি, নাফিসা ইয়াসমিন, মিরাত জাহানও। অভিভাবক আবদুল মজিদ মিয়া ও মিজানুর রহমান বলেন, অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমানের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে তাঁর চলে যাওয়া উচিত। নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধানকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক।

সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুল হাসান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোর করে পদ ধরে রেখেছেন। তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না। সব ফাইলপত্র প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রেখে তালা দিয়ে রেখেছেন। কোনো রকমে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।

এদিকে, প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, আমি ৫ বছর অতিরক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। এখন সচিবালয়ে অনুমোদন হলেই হয়ে যাবে। একটি কুচক্রী মহল আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছে না। তারা বিদ্যালয়ে যেতে দেয়না।’

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইয়াছিন আলী বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক আমার অনুমতি না নিয়ে অভিভাবকদের ডেকে সভা করেছে, এটা করতে পারেনা। প্রধান শিক্ষকের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছেন। সেই আবেদন মন্ত্রনালয়ে অনুমোদন হলে তিনি অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। অনুমোদন না হলে চলে যাবেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সহকারী প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য শিক্ষাবোর্ড চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক আমার দপ্তর থেকেও ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ও অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে। ইউএনও ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, আমার কাছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এসেছিলেন, তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন।

দৈনিক নব দেশ বার্তা / শিক্ষা 

নিউজটি শেয়ার করুনঃ