বৈশ্বিক সংকটকালীন এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা বাংলাদেশের একটি বাড়তি চাপ—মুহাম্মদ আলী

কাউছার রিয়া,ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ

২০২১ সালে সারা বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা ছিলো ৮ কোটির কিছু বেশি। ২০২২ সালে এসে সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংঘাত বিশেষত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে শরণার্থীর সংখ‍্যা বাড়তে থাকে উদ্বেগজনক হারে। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানিয়েছে সারা বিশ্বে শরণার্থীর সংখ‍্যা ছাড়িয়েছে ১০ কোটি। আর এর সঙ্গে একই কারণে অভ‍্যান্তরীণ উদ্বস্ত্ব (আইডিপি) যোগ করলে এ সংখ‍্যা বহুগুণ বাড়বে নিঃসন্দেহে। এক মাত্র ইউক্রেন যুদ্ধের ফলেই প্রায় ৮০ লাখ মানুষ আইডিপি হয়েছে।

সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এই ১০ কোটি বা ততোধিক শরণার্থী তাদের নিজ দেশ থেকে ভিনদেশে ও ভিন্ন আর্থ- সামাজিক পরিবেশে বসবাস করছে। বিশ্বে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য শরণার্থী সংকটকের মধ্যে রয়েছে- সিরিয়ান ৬৬ লাখ, আফগান ২৭ লাখ, দক্ষিণ সুদান ২২ লাখ, মিয়ানমার রোহিঙ্গা ১২ লাখ ও সোমালিয়া ৯ লাখ এর মধ্যে অনেক শরণার্থী শিবিরই দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সংকট ২০১৭ সালে ভয়াবহ রূপ নিলেও মূলত এই সংকট শুরু হয় ১৯৯১ সালের শেষের দিক থেকে।

মিয়ানমারের এই গনহত‍্যা, নারী ও শিশু ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পোড়ানো সহ নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে আসতে থাকে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এভাবে ধাপে ধাপে আসতে আসতে ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। এভাবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে মানবিকতা দেখালেও অন‍্যান‍্য দেশগুলোর তেমন মানবিকতা দেখানো হয় নি। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দেখিয়ে এই রোহিঙ্গাদের জন্য থাকা খাওয়া সহ পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এই রোহিঙ্গাদের প্রত‍্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে ব‍‍্যাপক উদ্যোগ নেওয়ার পরও কার্যত প্রত‍্যাবাসন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়ে উঠা হচ্ছে না। আর তাই দিন দিন এদের সংখ‍্যা বেড়েই চলছে।

একটা গবেষণায় উঠেছে প্রতিবছর প্রায় নতুন করে ১০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে এবং ব‍্যাপক হারে এইডসের মতো মরণব্যাধি ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। যা খুবই ভয়াবহ ও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে যেখানে বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় দেশের মানুষের চাহিদা মিটাতো বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে এই রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা বাংলাদেশের জন‍্য এক বিরাট চাপ তৈরি হচ্ছে। এই রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের মানুষের প্রতি পড়ছে অর্থনৈতিক প্রভাব। শুধু তাই নয় রোহিঙ্গা ক‍্যাম্প থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে তারা, এবং এদের মধ‍্যে উগ্রপন্থী কিছু রোহিঙ্গা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা সহ দেশে সন্ত্রাস, মাদকের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। যা আগামী বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ রূপ নিবে।

এভাবে যদি রোহিঙ্গাদের সংখ‍্যা বৃদ্ধি হতে থাকে তাহলে খুব ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়বে বাংলাদেশ। এর ফলে জলবায়ু সমস্যাও হচ্ছে। যেমন সারা বিশ্ব থেকে সবুজ বনায়ন বা গাছ কমে যাওয়ার কারণে বিশ্ব যেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনে হুমকির মুখে, সেখানে বাংলাদেশে হাজার হাজার গাছপালা এবং পাহাড় পর্বত কেটে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে রোহিঙ্গা ক‍্যাম্প। যা বাংলাদেশের জলবায়ুর বিরাট প্রভাব পড়ছে।

উল্লেখ্য যে এই পদ্ধতি ছাড়া তখন বাংলাদেশের বিকল্প কোন উপায় ছিলো না। কিন্তু এর জন্য মিয়ানমার কে আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করেও কোন সমাধান করা যাই নি। এই রোহিঙ্গাদের প্রত‍্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় মানবিক উদ্যোগ গ্রহন ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে উঠা একেবারেই অসম্ভব। তাই বাংলাদেশের উচিৎ সবসময় রোহিঙ্গাদের প্রত‍্যাবাসনের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি যোগাযোগ রক্ষা করা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ