গুম বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন-স্বাধীন তদন্ত সংস্থা চায় জাতিসংঘ
গুম বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন-স্বাধীন তদন্ত সংস্থা চায় জাতিসংঘ
হাকিকুল ইসলাম খোকন,যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে যেসব বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট। বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাচেলেট বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে যাচ্ছে।
ঢাকায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় এ নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন তিনি। ব্যাচেলেট বলেন, তিনি সরকারকে একটি স্বাধীন ও বিশেষ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলেছেন যাতে করে এ ধরনের ঘটনার শিকার ব্যক্তি, পরিবার ও সিভিল সোসাইটির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করা যায়।
কিভাবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে এ রকম একটি সংস্থা গড়ে তোলা যায় সেজন্যে তার দফতর বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তত। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সংলাপের সুযোগ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। চার দিনের বাংলাদেশ সফরের শেষ দিন বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক নানা ইস্যুতে কথা বলেন। বাশেলেট বলেন, বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
একটি উত্তেজনাকর ও মেরুকরণের দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন অধিকার কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে বলে মনে করেন জাতিয়সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান।তিনি বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এসময় রাজনৈতিক দল, কর্মী, সুশীল সমাজের কর্মীদের সভা-সমাবেশের সুযোগ দেওয়া জরুরি। তাদের অধিকার থেকে যদি বঞ্চিত করা হয় তাহলে সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে। নারী, সংখ্যালঘু, তরুণদের দাবি বা চাওয়া শুনতে হবে। ওই সময়টাতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকবে সেখানে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে মিশেল বাশেলেট বলেন, আমি কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছি। এই সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তবে দুঃখজনক হলেও এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের ফেরার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা হত্যার তদন্ত করতে হবে। এর পেছনে কারা ছিল, বের করতে হবে। রুয়ান্ডার গণহত্যার তদন্ত যেভাবে হয়েছে, এখানেও সেটা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আর্থসামাজিক খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। এ দেশের অনেক খাতে অগ্রগতি হয়েছে। এখানে আমি আসতে পেরে খুশি। জাতিয়সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার আরও বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন পক্ষের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। সে সময় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছি আমি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার এখানে আসার পেছনে কোনও ম্যাজিক নেই।
আমি এখানে আসার জন্য আমন্ত্রিত ছিলাম।গত রোববার বাংলাদেশে আসেন জাতিয়সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট। প্রথম দিনেই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান হিসেবে এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।