সমবায় সমিতির নামে মানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাট কে নিবে এর দায়ভার—শিশুবন্ধু মুহাম্মদ আলী
সমবায় সমিতির নামে মানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাট কে নিবে এর দায়ভার—শিশুবন্ধু মুহাম্মদ আলী
আরজুন নাহারঃ
সমবায় সমিতির নামে হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছে দেশের কিছু কুচক্রীমহল।
তাদের লক্ষ্যই হলো কয়েক বছর ভালোভাবে সময়বায় সমিতির পরিচালনা করে গ্রাহক বৃদ্ধি করে যখন কোটি কোটি টাকা জমা হবে ঠিক সেই মুহূর্তেই তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে টাকা আত্মসাত করে দেশ থেকে পালিয়ে যাবে।
এভাবেই অসংখ্য সমবায় সমিতি দেশের মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এই ধরনের প্রতারণার স্বীকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নিন্ম শ্রেনী ও বিভিন্ন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকবৃন্দ।
চট্টগ্রাম সবচেয়ে জনবহুল এবং ঘনবসতি এলাকা হল চট্টগ্রাম বন্দর, সিইপিজেড ও পতেঙ্গা। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক সমাগম। আর তাই প্রতারক চক্র এই অঞ্চল এবং এখানের নিন্ম আয়ের মানুষ গুলোকে টার্গেট করে গড়ে তোলে সমবায় সমিতি।
অধিক মুনফার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। অনেক কষ্ট করে শ্রমজীবী মানুষগুলো তাদের সারা জীবনের অর্থ সঞ্চয় বা অধিক মুনফার লোভে সমবায় সমিতির কাছে জমা রাখে। কিন্তু দেখা যায় টাকা জমা রাখার সময় সমবায় সমিতিগুলো অনেক প্রলোভন দেখিয়ে টাকা জমা রাখতে বাধ্য করলেও টাকার মেয়াদ শেষ হলে সেই টাকা পেতে চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়।
ইতিমধ্যে দেখা গেছে চট্টগ্রাম সিইপিজেড মোড় রূপসা মাল্টিপারপাস ও প্রাইম স্টার নামক দুটি সমবায় সমিতির প্রায় ৫-১০ হাজার গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে শ্রমজীবী মানুষ গুলোকে পথে বসিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
অনেক কষ্টে গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করে অধিক মুনাফার লোভে পরে সমবায় সমিতিতে টাকা জমা করে আজ তাদের চোখে শুধু কষ্টের পানি ঝড়ছে। এই টাকার জন্য অনেক পরিবার আজ নিঃস্ব। শুধু সমবায় সমিতিগুলোই যে প্রতারণা করে তাই নয়। ইতিপূর্বে গ্রামীণ ব্যাংক, ডেসটিনি, যুবক এরাও কোটি কোটি টাকা লোপাট করে মানুষ কে পথে বসিয়ে গেছে।
এমন কি অনলাইনেও ব্যবসার নামে প্রতারক চক্র সক্রীয় হয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো এই সমস্ত সমবায় সমিতি গুলো বাংলাদেশ সরকারের সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়ে কিভাবে প্রতারণা করে দেশের মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করে? প্রতি মাসে বা প্রতিবছর তো এই সমবায় সমিতিগুলোর কার্যক্রম কিংবা অর্থ অডিট করে থাকে।
তাহলে সমবায় গুলো কিভাবে রাতের আধারে হাওয়া হয়ে যেতে পারে। প্রশ্ন থেকে যায় সমবায় অধিদপ্তরের কাছে। সমবায় সমিতি গুলো মানুষের টাকা লোপাট করে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে অথচ এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর বা সরকারের তেমন কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে দিন দিন কি এভাবেই মানুষ প্রতারণার স্বীকার হয়ে পথে বসে যাবে? এর দায় ভার কি কারও নেই? অবশ্যই সরকার এই ধরনের সমিতিগুলো যারা মানুষের টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে গেছে তাদের খুজে বের করে আইনের আওতায় এনে তাদের সকল প্রকার সম্পত্তি কিংবা অর্থ যেখানে পাচার করছে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে চাইলে গ্রাহকের কাছে তাদের টাকা তুলে দিয়ে যদি এই প্রতারক চক্র কে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রতারণা করতে কেউ সাহস পাবেন না।
সরকারের নিরব ভূমিকার কারণেই এরা এত সক্রিয়। তাই এখনি এদের বিরুদ্ধে সরকারের জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমানে বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের অর্থনৈতিক, আর্থসামাজিক উন্নয়নের বেগাত এবং বেকারত্ব বেড়ে চলছে। এর মধ্যে সমবায় এর নামে কোটি কোটি দেশের টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করে দেশের মানুষ কে পথে বসিয়ে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বেগাত ঘটাচ্ছে।
শুধু তাই নয় এর কারণে মানুষ যখন নিঃশ্ব হয়ে যাবে তখন তারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যা আগামীর বাংলাদেশের জন্য হুমকি সরূপ। দেশের আনাচে কানাচে অনেক সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। এখনি যদি এদের লাগাম টানা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে অবস্থা খুব ভয়ানক হবে।