অভিযুক্ত স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলী বহাল তবিয়তে

লোহাগাড়া উপজেলা প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিগত ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর তারিখে ব্যবসায়ীদেরকে লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার নামে বিনা রশিদে টাকা উঠানোর সময় জনতা কর্তৃক হাতেনাতে আটক হওয়া লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শের আলী দীর্ঘ বছর ধরে একই স্থানে বহাল তবিয়তে রয়েছে।

বিনা রশিদে টাকা উঠানোর ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য সে সময়ে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিভিল সার্জন কর্তৃক একই সালের ১৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হলেও রহস্যজনক কারণে শের আলীর ফাইলটি এখনো চাপা পড়ে আছে।

অভিযুক্ত এই স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের খুঁটির জোর কোথায়?।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শের আলী ২০১৬ সালে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক পদে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন। একই সালের ১ অক্টোবর বাঁশখালীর বাহাড়ছড়াস্থ বশির উল্লাহ মিয়াজী বাজারে ব্যবসায়ীদেরকে লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার নামে বিনা রশিদে টাকা উঠানোর সময় জনতা শের আলীকে হাতেনাতে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তৎকালীন বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহাঙ্গীর আলমকে আহবায়ক, মেডিকেল অফিসার ডা. তুষিত কুমার বড়ুয়াকে সদস্য সচিব ও মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুর রহিমকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

পরদিন ২ অক্টোবর কমিটির নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত ১৯৪৮৪(১৩) স্মারকের আদেশে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলীকে সন্ধীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে তার বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে পত্র প্রেরণ করা হয়।

এদিকে বদলীর আদেশ পাওয়ার পর স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলী ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর তারিখে সন্ধীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। সেখানে দুই মাস চাকুরী করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তদবীরের মাধ্যমে সে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর পুনঃরায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই পদে যোগদান করেন।

স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলী টানা ৬ বছর ধরে একইস্থানে কর্মরত রয়েছে। এর আগেও তিনি স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হিসেবে টানা ৫ বছর লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে যোগদান করেন মোহাম্মদ শের আলী। স্যানিটারী ইন্সপেক্টর হিসেবে তার যোগদানের তারিখ ২০০৪ সালের ৭ জুলাই। তার বাড়ি বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার গজালিয়া টি.টি.এন্ড.ডি.সি এলাকায়। তার পিতা-মাতার নাম মোহাম্মদ আজগর আলী ও আয়েশা বেগম। এদিকে নিজ বেতনে কর্মরত স্যানিটারী ইন্সপেক্টরদের কাছে অঘোষিত সমিতির নামে মাসিক চাঁদা দাবী ও চাঁদা দিতে কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগে বেনামী দরখাস্ত দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শের আলীর বিরুদ্ধে।

তার এহেন কর্মকান্ডে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হতে চলেছে। এ ব্যাপারে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শের আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী ও লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নয়, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মস্থলে থাকার বিধান থাকলেও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলীর বাসা কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায়। তিনি একদিকে অনিয়মিত ও অন্যদিকে চকরিয়া থেকে কর্মস্থলে যাওয়া-আসা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে চকরিয়ার বাসা থেকে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মস্থলে যাওয়া-আসার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। বাঁশখালীতে ব্যবসায়ীদেরকে লাইসেন্স পাইয়ে দেয়ার নামে বিনা রশিদে টাকা উঠানোর সময় জনতা কর্তৃক হাতেনাতে আটক হওয়া লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শের আলীর বিরুদ্ধে অচিরেই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলে মনে করছেন তদন্ত কমিটি।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ