চট্টগ্রাম নগরীর বন্দরটিলায় শিশু আয়াত খুনের মামলায় আবির’র দুদিনের রিমান্ড

ইপিজেড থানা প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট এলাকায় ৫ বছর বয়সী শিশু “আলীনা ইসলাম আয়াত” খুনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবির আলীর দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

গতকাল (২৬নভেম্বর) শনিবার বিকালে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর করা আবেদনের শুনানি শেষে মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেন এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তবে পিবিআই এখনো পর্যন্ত আয়াতের মরদেহের এক টুকরো খন্ডিত অংশেরও সন্ধান পায়নি।
শিশু আয়াত হত্যায় গ্রেপ্তার আবির আলী (১৯), ইপিজেড থানাধীন ৩৯নং ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা সে আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়।

দীর্ঘদিন ধরে আয়াতদের বাসার ভাড়াটিয়া আবিরের পরিবার। শিশু আয়াতকে খুনের মামলায় তার সম্পৃক্ততার তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর গত ২৪ নভেম্বর রাতে তাকে সীতাকুন্ড থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মনোজ কুমার দে জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে আবির আলী হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শিশুটির বাবা ইপিজেড থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

উক্ত মামলায় আবিরকে দেখিয়ে খুনের বিস্তারিত জানতে তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ড আদেশের পর তাকে আদালত থেকেই পিবিআই হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ৩৯ নং ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার পাঁচ বছর বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন।

১০ দিনের মাথায় পিবিআই আবির আলীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন করে। পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আজহারুলের ছেলে আবির আলী। পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত ‘চাচ্চু’ বলে সম্বোধন করত।

গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে বাসার অদূরে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়। সেখানে তখন কেউ ছিল না, আয়াত সেখানে চেঁচামেচি শুরু করলে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়।

এরপর আয়াতের মরদেহ ব্যাগে ভরে নিয়ে যান নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেইট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের ভাড়া বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকতেন। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যেখানে, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল।

আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের তাকের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নামিয়ে ধারালো কাটার ও বটি দিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।

পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগর সংলগ্ন খালে ফেলে দেয়। রাতে মরদেহের বাকি তিন টুকরো আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় সুইস গেইটের প্রবেশ মুখে ফেলা হয়।

কিন্তু মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সিম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।আয়াতের খেলার সাথীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে সন্দেহের পর তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করার পর লাশের টুকরোসহ বিভিন্ন আলামত ফেলে দেয়ার স্থানগুলো সরেজমিনে পিবিআই কর্মকর্তাদের দেখিয়ে দেন আবির আলী।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ