চট্টগ্রামের ৫ বছরের শিশু আয়াত হত্যা কান্ড বিবেকবান মানুষের অন্তরআত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে

মুহাম্মদ শাহ্‌ আলম,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ

পৃথিবীতে সূচনালগ্ন থেকে মানুষ বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার জন্য পরিবার, গোত্র, পঞ্চায়েত, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বসবাস করে আসছে। আর পৃথিবীতে মানুষ বসবাসরত অবস্থায় মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, প্রেমপ্রীতি, ভালবাসা, ন্যায় নীতি বোধ যেমন গড়ে উঠেছে ঠিক তেমনি হিংসা, লোভ, ক্রোধ, আমিত্ব, আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি নানা কারণে কিছু মানুষ ভয়ংকর নিষ্ঠুর নিসংশ বর্বরোচিত খুন, রাহাজানির মত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

অর্থাৎ পৃথিবীর সেই অনাদি কাল থেকে কিছু মানুষ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সাথে জড়িত হয়ে আছে। এই সমস্ত অপরাধীদের দ্বারা মাঝেমধ্যে এমন কিছু অপরাধ সংগঠিত হয় যা দেখলে বা শুনলে বিবেকসম্পন্ন হৃদয়বান যে কোন মানুষের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠে, গলা শুকিয়ে যায়, হাত পা অবসাদ হয়ে আসে। এমনই একটি লোমহর্ষক বর্বরোচিত ও হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায়।

গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর নয়ারহাট এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় ৫ বছরের শিশুকন্যা আলিনা ইসলাম আয়াত। এর ১০ দিন পর জানা যায়, ৫ বছর বয়সী এই শিশুকন্যা আয়াতকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিক আবির আলী৷

খুনি আবির আলীর পরিবার প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে শিশুকন্যা আয়াতদের বাসার ভাড়াটিয়া ছিল। চট্টগ্রাম মেট্রোর পিবিআই এর বরাত দিয়ে
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আবির আলী নামের ভাড়াটিয়া মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে ঘটনার দিন বিকেলে আয়াতকে অপহরণ করে। পরে আয়াত চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং আকমল আলী সড়কের বাসায় নিয়ে আয়াতের লাশ ছয় টুকরো করে।

তারপর আকমল আলী সুইস গেইট ও সাগরপাড়ে ফেলে দেয়। গ্রেপ্তারের পর আবির আলী সবকিছু স্বীকার করে নেয়।অর্থাৎ ঘাতক আবির আলী টাকার জন্য আয়াতকে অপহরণ করতে চেয়েছিলো, আয়াত মক্তবে যাওয়ার সময় সে আয়াতের মুখ, গলা চেপে ধরলে ওইখানে আয়াত মৃত্যুবরণ করে।

পরবর্তীতে আয়াতের দেহ ঘাতক তাঁর মায়ের বাসায় নিয়ে ৬ টুকরা করে, তারপর ব্যাগে ভরে নদীতে আর সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ঠান্ডা মাথার খুনি আবির শিশু আয়াতকে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ছয় টুকরা করে নদীগর্ভে ফেলে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তাঁকে যেন কোন ভাবেই কেউ সন্দেহ করতে না পারে, সেইজন্য আয়াতের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিখোঁজ আয়াতকে সবচেয়ে বেশি খোঁজাখুজি করেছে বলে আয়াতের পরিবার দাবী করেছে।

যে শিশু মুক্তিপণ খুনখারাপি স্বার্থপরতা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য মত পৃথিবীর জটিল বিষয়াদি সম্পর্কে উপলব্দি করার মত বয়স হয়নি এবং যে বয়সে মুক্ত পাখির মত খেলাধূলা করার কথা সেই সময় অর্থাৎ জীবন সমাজ সংসার সম্পর্কে ধারণার আগেই নির্মমভাবে ধরণী থেকে বিদায় করে দিয়েছে পাষণ্ড ঘাতক।

যদিও আমাদের সমাজে খুন জখম ইত্যাদি অনেকটা নিত্যদিনের ঘটনা, বিভিন্ন কারণে ঘৃণ্য খুনের মত ঘটনা গুলো ঘটে থাকে। কিন্তু যখন শুনি একটা অটোরিকশা ছিনতাই করার জন্য রিক্সার চালককে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে যেই চোরাই রিক্সাটির মূল্য সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা তখন হৃদয় ভেঙ্গে রক্তহরণ হয়।

যখন শুনি সাংবাদিক সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি এই দম্পতি নিজ বাসভবনে আজ্ঞাত দুর্বৃত্ত দ্বারা ছুরিকাঘাতে নিহত হয়, যখন শুনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে এবং প্রকাশ্যভাবে রাজপথে বিশ্বজগৎ দাসকে হত্যা কান্ডের মত ঘটনাগুলো ঘটে তখন সত্যিকার অর্থেই জীবণ সংসার সম্পর্কে ভাবতে কষ্ট লাগে।

মনের মাঝে প্রশ্ন জাগে এই জন্যই কি মাহান আল্লাহ্ পাক দয়া করে আমাদেরকে সৃষ্টি করে সুন্দর মায়াময় এই ধরায় পাঠিয়েছেন? আমরা এই লোমহর্ষক ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আর এই জন্য রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের ক্ষমতা অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ