“অনরা ক্যান আছন” চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায়—শেখ হাসিনা

হোসেন মিন্টুঃ

“অনরা ক্যান আছন” বলে শুরু করেন, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার ভাষণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম (৪ ডিসেম্বর) ২০২২, “পলোগ্রাউন্ড মাঠে” চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“অনরা ক্যান আছন, বেয়াগুন গম আছন নি, তোঁয়ারাল্লায় আঁর পেট পুড়ের, এতেল্লায় ছাইতাম আইসি”। আপনারা কেমন আছেন, সবাই ভালো আছেন তো, আপনাদের জন্য আমার প্রাণ কাঁদে, তাই দেখতে আসছি।

এভাবে চট্টগ্রামের ভাঙা ভাঙা ভাষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় জড়ো হওয়া মানুষকে স্বাগত জানান। বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের ভাষায় যখন কুশল বিনিময় করছিলেন, তখন উপস্থিত নেতা-কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে জবাব দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে নিজেদের আঞ্চলিক ভাষা শুনে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে আজ রোববার চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সকাল থেকে নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছিল। নগরীর ও বাইরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেন। সভার কার্যক্রম শুরু হয় বেলা ১২ঃ১৫ মিনিটের দিকে।

চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠসহ আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল ছিল। আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় নেতা-কর্মীরা এরপর প্রধানমন্ত্রী বেলা ৩টা ৫ মিনিটে সভাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। মঞ্চের জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। ৩টা ৪০ মিনিটে তিনি বক্তব্য দিতে ওঠেন, এ সময় পুনরায় স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের ভাষায় স্বাগত জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। পুরো বক্তব্যের বেশ কিছু অংশজুড়ে ছিল চট্টগ্রামের উন্নয়ন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী টানেল, মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পজোন, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রসঙ্গে বলেন, ‘মহিউদ্দিন ভাই বলেছিলেন কর্ণফুলীতে আর যাতে নতুন সেতু না হয়। এখন কর্ণফুলীতে টানেল হলো। কিন্তু মহিউদ্দিন ভাই তা দেখে যেতে পারলেন না। আল্লাহ তাঁকে বেহেশত নসিব করুক।’

আওয়ামী লীগের জনসভা শুরুর আগেই চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায়। জনসভা প্রাঙ্গণ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায়ও মানুষের ঢল নামে। জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে পলোগ্রাউন্ডের মাঠে আসতে থাকেন। পলোগ্রাউন্ড অভিমুখে নেতা-কর্মীর ঢল লক্ষ করা যায়।

জনসভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রায় ১১ বছর পর চট্টগ্রাম নগরীর দলীয় জনসভায় ভাষণ দেন। সরেজমিনে দেখা যায়, পলোগ্রাউন্ড মাঠ জনতায় পরিপূর্ণ। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেক নেতা-কর্মী সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। পাশের সিআরবি, টাইগারপাস, কদমতলী এলাকায়ও নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা থেকে আসা মোঃ আবু জাফর বলেন, মাঠে প্রচুর মানুষ। সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না তিনি। তাই আপাতত বাইরে অবস্থান নিয়েছেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে জনসভায় এসেছেন জয়নাল আবেদীন। তাঁরা একসঙ্গে ৫০ জন বসে ছিলেন পলোগ্রাউন্ডের সামনের সড়কের পাশে ফুটপাতে। তিনি বলেন, তাঁদের আসতে একটু দেরি হয়েছিল। এসে দেখেন মাঠ মানুষে পূর্ণ হয়ে গেছে, তাই এখন বাইরে বসে আছেন। মাঠের বাইরে থাকা লোকজনও যাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে পান, সে জন্য ৩০০ মাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জনসভা প্রাঙ্গণ ছাড়াও টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, কদমতলী, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম, সিআরবি, কাজীর দেউড়ি, বিআরটিসি, নিউমার্কেট এলাকায় মাইক লাগানো হয়েছিল।

“যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের জনসভায় ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন ৪টি প্রকল্পের, ১১টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ ২৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ৪টি প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, এসব উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম নগরীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আজকের জনসভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। আর আগামী দিনের উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন এ রকম প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, নদী ও সমুদ্রের তীরে বাঁধ, বিদ্যালয় ভবন, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, নারীদের জন্য আবাসন, প্রশিক্ষণ ভবন ইত্যাদি।

উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও রাউজানে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাসিরাবাদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন, নগর ও উপজেলার ১৪টি বিদ্যালয়ের ভবন, মিরসরাই ও লোহাগাড়ায় ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, হর্টিকালচার সেন্টারের প্রশিক্ষণ ও অফিস ভবন ইত্যাদি। এসব নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া চট্টগ্রামে বিপিসি ভবনের নির্মাণকাজ, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনার নির্মাণকাজ, বাঁশখালীতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ