কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তোলপার

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর প্রতিনিধিঃ

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা সদরে উপজেলা সমবায় থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেওয়া ফ্রেন্স কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ (রেজিষ্ট্রেশন নং ১৫৪/সংশোধিত -১২) – এর বিরুদ্ধে সদস্যদের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

হঠাৎ করে তাদের ফ্রেন্ড কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ভিশন ও ওয়ালটন শোরুম বন্ধ করে গা ঢাকা দেওয়ায় সকল সদস্যরা পড়েছে বিপাকে। তাদের সঞ্চয়ের টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করছেন। কিন্তু কোন সুরাহা পাচ্ছেন না। অনেক সদস্য এসে সব বন্ধ পেয়ে রাগে আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছেন।

স্থানীয় ও ফ্রেন্স কো-অপারেটিভ কর্মচারী সূত্রে জানা যায়, ফ্রেন্স কো-অপারেটিভ লিঃ এর কর্নধার আফজাল হোসেন ও মোঃ ইদ্রিস আলী দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। তাঁদের ফ্রেন্স কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর সদস্যরা অত্যন্ত গরীব ও অসহায়। তাদের কষ্টের ঘাম মাটিতে ফেলে পরিশ্রম করা টাকা জমিয়ে জমিয়ে রাখা সন্চয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অসহায় দরিদ্র পরিবারের কান্না যেন থামছেই না।

ফ্রেন্ডস কো-অপারেটিভ লিঃ এর অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন ফ্রেন্ডস কো-অপারেটিব ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর স্বত্বাধিকারী দুজন হলেও মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী এসব টাকা আত্মসাতের মুল হোতা। তিনি কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা সরিয়ে দায় চাপানোর চেষ্টা করছে গা ডাকা দেওয়া আফজাল হোসেনের উপর। আজ হোক কাল হোক দেখতে পারবেন সর্বোচ্চ লাভবান ইদ্রিস আলী।

ফ্রেন্ডস কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর ফিল্ড কর্মীরা জানান, আমরা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠান ভেবে সততার সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু সদস্যদের অনেক কষ্টে জমানো সঞ্চয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা না দিয়ে একজন গা ঢাকা দিয়েছেন। আর একজন এখনো এলাকায় আছেন তিনি বলেছে টাকার ব্যবস্থা করে জানুয়ারীর দশ তারিখের মধ্যে দেওয়ার প্রতিস্রুতি দিয়েছেন। বর্তমানে আমরা বাড়ী থেকে সদস্যদের চাপে বের হতে পারছি না। তারা আরো বলেন, এসব টাকা পয়সার হিসাব ও টাকা সবই ইদ্রিস নিতেন।

ফ্রেন্ডস কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ থেকে মালিক পক্ষ হিসেবে তারা দুজনে বেতন নিতেন এক হাজার করে অর্থাৎ মাসে ৬০হাজার টাকা নিতেন দুজনে। শুধু তাই না তাদের স্ত্রীরা ও প্রতিদিন ৪০০টাকা করে দুজনে প্রতিদিন ৮০০টাকা নিতেন। এক মাসে মোট ৭৮হাজার টাকা শুধু বেতনই নিতেন তারা। অন্যদিকে কর্মচারী ও অফিস খরচ তো আছেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, শুধু ফ্রেন্ড কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ সদস্যদের টাকাই শেষ না। শিক্ষক সমিতি (ক্লাব), রংপুর ওয়ালটন প্লাজা,

বাসস্ট্যান্ডে স্বচ্ছ সমিতি, ব্রাক সহ আর্থিক লেনদেন করা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থেকে দুই কোটিরও বেশি টাকা নিয়েছে থানা রোডে অবস্থিত ফ্রেন্ডস কো অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর কর্নধার আফজাল হোসেন ও ইদ্রিস আলী। ইদ্রিস আলীর রাজকীয় বাড়ী, ঘর ভরা ফার্নিচার সহ গাড়ি বাড়ি ও রাজকীয় চলাফেরা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে এলাকার মানুষকে। এখনো অনুতপ্ত না হয়ে হুংকারে আতংকিত অনেকেই।

ফ্রেন্ডস কো-অপারেটিভ এর একাউন্টিং আমজাদ হোসেন বলেন, অফিসের সমস্ত হিসাব ও বেশিরভাগ টাকা ইদ্রিস নিতেন এবং খরচ দেখাতেন। এখন তো একজন নেই আর যিনি আছেন তিনি কি করবেন জানিনা, আমি অসুস্থ। আমার স্ত্রীর রাখা সাত লক্ষ’র ও বেশি টাকার কি হবে এই ভেবে এখন দিশেহারা, অন্যদিকে সদস্যদের চাপে শংকিত।

বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সমিতি থেকে নেওয়া প্রায় টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস ও শোরুম বন্ধ করে দেওয়ায় পাওনাদারদের মাথায় হাত। তারা অফিসে কাউকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে যেন দেখার কেউ নেই। এমতাঅবস্থায় উপজেলার সবচেয়ে আলোচিত খবরে হতবাক সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। তারা এই ঘটনার তিব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।

এখন একমাত্র প্রশাসনই পারে তদন্ত কমিটি গঠন করে এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এবং সকল সদস্যদের জমানো টাকা ফেরত দিতে। ফ্রেন্ড কো অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ হলদীবাড়ী গ্রামের সদস্য জমিলা বেগমের(সদস্য নং৩৮৬৪) স্বামী মনোয়ার হোসেন জানান, অনেক কষ্টে জমানো সঞ্চয়ের টাকা ফেরত চাই। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো আমাদের গরীবের টাকা ফেরত দিতে আপনারা ব্যবস্থা নিন।

অন্নদানগর শো-রুমের ম্যানেজার শুভ জানান, চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছি। দুই মালিকের পার্টনারশিপের প্রতিষ্ঠানে সততার সঙ্গে চাকরি করেও তাদের কারনে আজ আমার এলাকার মানুষের রোষানলে পড়তে হচ্ছে।

রংপুর ওয়ালটন প্লাজার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বর্তমানে নীলফামারীতে কর্মরত (+880 1746 975232)এই নম্বর থেকে মুঠো ফোনে বলেন, এর আগেও একবার ব্যবস্থা নিয়ে টাকা আদায় করেছি। এখনো ৪০ লক্ষ টাকা পাবো। তবে নিউ বিজনেস সেন্টারে দুজনের পার্টনারশিপের ব্যবসা হলেও অত্যন্ত ধুরন্দর ইদ্রিস আলী। তিনি আরো জানান বর্তমানে রংপুরে দায়িত্বরত ম্যানেজার এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

স্থানীয় সচেতন মহলের প্রশ্ন, সমবায় থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেওয়া ওই অফিসে কখনো অডিট করা হয়নি। নাকি সুবিধার কারনে নামে মাত্র অডিট করেছেন। এব্যাপারে ফ্রেন্ড কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন এর কর্নধার একজন ইদ্রিস আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি টাকার ব্যবস্থা করে জানুয়ারির দশ তারিখের মধ্যে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী মুঠোফোন জানান, আমার কাছে অনেকেই এসেছিলেন যারা টাকা পাবেন। তিনি আরো বলেন, তাদের বাড়ী তো এখানেই সদস্যদের টাকা নিয়ে কতদিন পালিয়ে থাকবেন। তবে কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হাসান জানান, আফজাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর কেউ লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই অফিসিয়ালী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা তারিন বলেন, কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ