রংপুরে পাওনা টাকার জন্য মায়ের কবর খুঁড়ে লাশ তোলার চেষ্টা

রিয়াজুল হক সাগর,রংপুর প্রতিনিধিঃ

পাওনা টাকা ছেলে-মেয়েরা দিতে রাজি না হওয়ায় কবর খুঁড়ে মায়ের লাশ তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে আটক হয়েছে এক নারী। ঘটনাটি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা এলাকায় ঘটেছে।

সোমবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান।

ওসি বলেন, উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল গফুর অসুস্থ থাকায় স্ত্রী শাহেদা বেগম (৫১) দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তিনি সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক ছিলেন। শাহেদা বেগম ঈদের দুই দিন আগে স্ট্রোক করেন। গত বুধবার তিনি মারা গেলে খিয়ারজুম্মা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

এদিকে শাহেদার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবেন দাবি করে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর বাড়িতে যান একই গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের স্ত্রী রাসেনা বেগম। শাহেদার ছেলেমেয়েরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শাহেদার কবর খুঁড়তে যান রাসেনা ও তাঁর স্বামী জোনায়েদ হোসেন। কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান একই এলাকার আব্দুল কাইয়ুম ও রেহেনা বেগম। এ দৃশ্য দেখে তাঁরা চিৎকার দিলে রাসেনা বেগম ও তাঁর স্বামী পালিয়ে যান। খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামের লোকজন কবরস্থানে ছুটে যায়। পরে বেলা দেড়টার দিকে পুলিশ গিয়ে রাসেনাকে আটক করে।

নিহত শাহেদার মেয়ে সাবিনা বেগম অভিযোগ করেন, ‘রাসেনা মায়ের কাছে টাকা পাবেন দাবি করে সকালে আমাদের বাড়ি আসেন। কখনো ৩০ হাজার, কখনো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পান বলে দাবি করেন। আমাদের থাকার জায়গা ছাড়া কোনো সহায় সম্বল নেই। রাসেনা যে টাকা দাবি করছেন তা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের নেই। মা কখনো তাঁর কাছে রাসেনা টাকা পাবেন এমন বলেননি। তাই রাসেনাকে বলি, টাকা পেলে মাফ করে দিতে। কিন্তু তিনি নারাজ হওয়ায় রাগ করে বলি, যার কাছে টাকা পান তাঁর কাছে নেন। এরপর রাসেনা ও তাঁর স্বামী মায়ের কবর খুঁড়তে যান।’

সাবিনা বেগম আরও বলেন, ‘তাঁরা টাকা পাবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। অথচ তাঁরা আমার মায়ের কবর থেকে লাশ বের করতে কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়েছে। এলাকার মানুষেরা কবরস্থানে গিয়ে তা দেখেছে। আমি এর বিচার চাই।’

এ বিষয়ে থানা হাজতে আটক রাসেনা বেগম বলেন, ‘ছয় মাস আগে শাহেদার ছেলে সহিদার রহমানের জামিন করার সময় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন শাহেদা। আমি ৫০ হাজার টাকা গরু বিক্রি করে আর ৭০ হাজার টাকা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে দিয়েছি। টাকা না দিয়ে এখন আমার নামে তারা বদনাম ছড়াচ্ছে।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান সাংবাদিককে বলেন, খবর পেয়ে সরেজমিন গিয়ে কবরের মাটি সরানো অবস্থায় পেয়েছি। সেখানে শত শত উৎসুক লোকজন জড়ো হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং রাশেনাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করার জন্য আনা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ