মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষাও দিতে হবে—ডা. দীপু মনি

হোসেন মিন্টুঃ

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা নিছক এখন ধর্মীয় শিক্ষা নয়। দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কারিগরি, বৃত্তিমূলক, ব্যবহারিক, জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ প্রযুক্তিমুখী শিক্ষার ওপর আমরা বেশ জোর দিচ্ছি। যাতে কর্মজীবনে এসে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে। মাদ্রাসা শিক্ষার স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়ে নয়, বরং এই শিক্ষাধারার স্বকীয়তা অক্ষুণ রেখেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় পারদর্শী করে গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।

গত ২৬ আগস্ট শনিবার দুপুরে হাটহাজারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মূঈনীয় কামিল মাদ্রাসা মাঠে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদ্রাসা শিক্ষক সমাবেশে ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাতবার্ষিকী, ১৫ই আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও ‘মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূমিকা এবং শিক্ষকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদ্রাসা শিক্ষক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এম.পি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ইসলামের সেবায় অনেক যুগান্তকারী কাজ করে গেছেন। দেশটাকে স্বাধীন করেছেন। অথচ জাতির কি দুর্ভাগ্য তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করলো ঘাতক পিশাচরা। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি যাবতীয় প্রতিকূলতা ও অপপ্রচার-ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে কঠিন ধৈর্য ধরে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের আলেম সমাজের শতবছরের দাবি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশে জেলা-উপজেলায় ৬শতাধিক মডেল মসজিদও করে দিচ্ছে সরকার। লাখ লাখ ভূমিহীন ঘরদোরহারা মানুষকে বাড়িঘর বানিয়ে দিচ্ছে বর্তমান সরকার। যা সারা বিশ্বের জন্য মডেল। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে সমতা আনার এবং কোনো বৈষম্য থাকলে তা ধীরে ধীরে সমাধানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। যারা ইসলামের নামে বোমাবাজি ও সন্ত্রাসে জড়িত তারাই আজ ইসলামের বড় খেদমতগার সেজে বসেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামের জন্য কিছুই করেনি তারা জঘন্য অপপ্রচারে লিপ্ত। তিনি ইসলামের সাম্য, সম্প্রীতি ও মানবিকতার দিকগুলো এবং বর্তমান সরকারের গণমুখী ইসলামবান্ধব পদক্ষেপগুলো দেশবাসীর সামনে আলেম সমাজকে তুলে ধরার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে যে কাজ শুরু করেছিলেন বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। কারো দান অনুদানে মাদ্রাসাগুলো এখন আর চলে না। বরং মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে দ্বীনি মূল্যবোধ প্রসারের লক্ষ্যে এখন রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগও হচ্ছে আশাতীতভাবে। বর্তমান সরকার ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে সারা দেশে ১৮শ মাদ্রাসার ভবন তৈরি করে দিচ্ছে। তবুও দুর্ভাগ্য আওয়ামী লীগকে বলা হয় ইসলাম বিদ্বেষী। হক্কানি দেশপ্রেমিক আলেম সমাজকে এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব কাজ করে যাচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষার চলমান অগ্রগতির ধারা এগিয়ে নিতে এবং বর্তমান সরকারের সাফল্য ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আলেম সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তিনি দূরদূরান্ত থেকে সম্মেলনে ছুটে আসা সমবেত মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (অর্থ) মো: আবুল বাসার ও মাওলানা কাজী শফিউল আজমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ আবদুর রশিদ, অধ্যক্ষ আল্লামা হাসান মাসুদ, অধ্যক্ষ আল্লামা জসিম উদ্দিন আজহারী, অধ্যক্ষ আল্লামা হারুনুর রশিদ আশরাফী, অধ্যক্ষ আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ আল্লামা ইব্রাহিম শামিম, অধ্যক্ষ আল্লামা হাবিবুর রহমান, অধ্যক্ষ আল্লামা আবু ছালেহ মুহাম্মদ সেলিম উল্লাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা মুসলিম ভূইয়া, অধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল হান্নান, অধ্যক্ষ ড. আল্লামা নেছার উদ্দিন, অধ্যক্ষ আল্লামা আহমদুল্লাহ, অধ্যক্ষ আল্লামা নুরুল আবছার ফারুকী, অধ্যক্ষ আল্লামা কাজী আবু ছালেহ, অধ্যক্ষ আল্লামা নুরুল আলম সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল হান্নান, অধ্যক্ষ আল্লামা হোসেন আহমদ, অধ্যক্ষ আল্লামা কাজী নুরুল হক, উপাধ্যক্ষ আল্লামা জুলফিকার আলী চৌধুরী, ড. আল্লামা ইসমাইল নোমানি, অধ্যক্ষ আল্লামা রফিক উদ্দিন উসমানী, অধ্যক্ষ আল্লামা শফিউল কাদের, অধ্যক্ষ আল্লামা মোশাররফ, উপাধ্যক্ষ আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ। শিক্ষক সমাবেশে মাদ্রাসা শিক্ষার বর্তমান অবস্থা এবং আরো অধিক উন্নয়নে সরকারের কী করণীয় সে ব্যাপারে নিজেদের খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষবৃন্দ। প্রায় ৩ সহস্রাধিক মাদ্রাসা শিক্ষক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

পরে দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতাসহ ২১ আগস্টের শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আল কাদেরী।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ