“সকলের জন্য সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে”

হোসেন মিন্টুঃ

“আদিবাসীদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল তাদের মাতৃভাষার সমস্যা। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু বাংলাদেশে ৫০ টির অধিক ভাষাভাষী আছে যার মধ্যে আদিবাসীরা অন্যতম। তাদের একটি মাতৃভাষা আছে। এসডিজিতে আমরা কাউকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারব না। আমাদের সকলের জন্য সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।”

জেএসইউএস কাযনির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি কবি, কথা সাহিত্যিক, সাংবাদিক বিপুল বড়ুয়ার সভাপতিতে যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (জেএসইউএস) ও গণসাক্ষরতা অভিযানের যৌথ উদ্যোগে আদিবাসী শিশুদের শিক্ষাঃ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রাম জেলার মাননীয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব মো: সাদি উর রহিম জাদিদ উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন ।

“আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” এ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গতকাল ৮ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি. নগরীর প্রেস ক্লাবস্থ ‘ক্লাব কলেজিয়েট’ হলে জেএসইউএস সহকারী পরিচালক মো: আরিফুল ইসলাম ও প্রোগ্রাম অফিসার খেনি মারমার যৌথ সঞ্চালনায়¡ আয়োজিত সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় “আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট কবি, আদিবাসী গবেষক, দৈনিক
সুপ্রভাত বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পাদক মো: হাফিজ রশিদ খান। অনুষ্ঠানে “আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” এ বিষয়ক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-কার্যক্রম ব্যবস্থাপক মো: আব্দুর রউফ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বিভিন্ন গোত্রভিত্তিক আদিবাসী, সুশীল সমাজ, শিক্ষক, গবেষক, এনজিও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৩৩ নং ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, বায়েজীদ থানা মাধ্যামিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দীন, ।

অনুষ্ঠানে “আদিবাসী শিশুদের শিক্ষা: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠকালে বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক মো: হাফিজ রশিদ খান তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান আদিবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলার সমাহারে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম। প্রকৃতপক্ষে, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি ‘মিনি’ বা ক্ষুদ্র সংস্করণের বাংলাদেশ। এখানে স্বীকৃত এগারোটি আদিবাসী জাতির সমন্বয়ে দশটি ভাষা প্রচলিত। সঙ্গে আছেন মহান একুশের রক্তরাঙা বাংলাভাষী সন্তানেরাও।

আদিবাসী জাতিগুলোর নামে বা তাঁদের ভাষার নামে এই এগারো জাতির পরিচয় যেমন: মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো, খুমি, বম, খিয়াং, চাক, লুসাই, তঞ্চঙ্গ্যা ও পাংখোয়া। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পিটিআই সুপারইনডেন্ট রুমা দাশ, বিবিএফ প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া, বলুয়ারদিঘী চসিক এর প্রধান শিক্ষক এম মাকসুদুল ইসলাম, আদিবাসী শিক্ষক মাতু মারমা, সিএমসি সভাপতি আশুতোষ ত্রিপুরা, পিয়ার লিডার সম্রাট চৌধুরী, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার, আদিবাসী ছাত্রী উচত্রং মারমা ও দিগন্তী চাকমা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মো: আরিফুল ইসলাম, সহকারি পরিচালক-এসডিপি, জেএসইউএস।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মানবধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও এসএমসি সদস্য আনিস আহমেদ খোকন, জেএসইউএস প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: মুনজিলুর রহমান, প্রোগ্রাম অফিসার-এসডিপি মোহাম্মদ মঈনুল আরেফীন, প্রোগ্রাম সুপারভাইজার নাসরিন আক্তার, জাফরিন চৌধুরী, মধু পুরোহিত সহ প্রমুখ। সভায় বক্তাগণ নানা বিষয়ে সুপারিশমালা পেশ করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে গণসাক্ষরতা অভিযানের জ্যেষ্ঠ উপ মহাব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিনের পরিচালনায় আদিবাসী নাগরিক, সাংবাদিক, শিক্ষা কর্মকর্তা, এসএমসি সদস্য, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষকদের নিয়ে একটি এফজিডি করা হয়।

জেএসইউএস সহ সভাপতি বিপুল বড়ুয়া তার সমাপনী বক্তব্যে, ‘গণসাক্ষরতা অভিযান ও জেএসইউএস’র আয়োজিত এ সভা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশমালার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে এ্যডভোকেসি’র একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হবে।” সর্বোপরি এ আয়োজনে সকলের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য তিনি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনমান উন্নয়ন হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে তিনি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ