কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি বন্দি শৌচাগার সংকটে ভোগান্তি
কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি বন্দি শৌচাগার সংকটে ভোগান্তি
নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে ৫৬২ আসামি বন্দি রয়েছেন। যা কারাগারের ধারণক্ষমতার তিনগুণেরর বেশি। রাজনৈতিক ও মাদক মামলার আসামিসহ বিভিন্ন মামলায় বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত এসব আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শফিকুল আলম রবিবার (৫ নভেম্বর) রাতে বন্দির সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, শনিবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ওয়ারেন্টভুক্তসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এর আগে গত ১ ও ২ নভেম্বর বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
কারাগার সূত্র জানায়, জেলা কারাগারে চারটি পুরুষ ও দুটি নারী ওয়ার্ড মিলে বন্দি ধারণক্ষমতা ১৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ধারণক্ষমতা ১৪৫ এবং নারী বন্দি ধারণক্ষমতা ১৮। কিন্তু ১৯৮৭ সালে জেলা কারাগার হিসেবে যাত্রা করা এই কারাগারে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকেন। বন্দির সংখ্যা বাড়লেও কারাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কারাগারে বন্দি ৫৬২ জন, যা ধারণক্ষমতার তিনগুণের বেশি। এর মধ্যে পুরুষ বন্দি ৫৪২ জন এবং নারী বন্দি ২০ জন।
কারা সদস্য ও জামিন পাওয়া একাধিক আসামির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দি থাকায় ওয়ার্ডগুলোতে বসবাসের মানবিক পরিবেশ সংকটে পড়েছে। বন্দিরা গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে, আবাসনের পাশাপাশি কারাগারে শৌচাগার সংকটে ভোগান্তিতে পড়েন বন্দিরা। প্রতি ওয়ার্ডে এক থেকে দেড়শ বন্দির বিপরীতে শৌচাগার রয়েছে একটি। আর চার ওয়ার্ডের বন্দিদের জন্য দিবা শৌচাগার রয়েছে মাত্র ২০টি। ফলে বন্দিরা মানবিক সংকটেও ভুগছেন।
রবিবার জামিনে মুক্তি পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আসামি বলেন, ‘ভেতরে থাকার খুব কষ্ট। এক রুমে অনেকজনকে রাখে। শুয়ে কাত হওয়ার মতো অবস্থা নেই। সত্য-মিথ্যা সব মামলার আসামিকে কারাগারে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
জামিনে মুক্তি পাওয়া আরেক আসামি বলেন, ‘জেলের ভেতরে থাকার কোনও পরিবেশ নাই। ওয়ার্ডগুলোতে শুইয়া কেউ পাশ ফিরবে এমন অবস্থাও নাই। গাদাগাদি কইরা থাকতে হয়। টয়লেটে যাইতে হইলেও লম্বা সিরিয়াল লাগে।’
এ ব্যাপারে জেল সুপার মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম কারাগারে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি বন্দি থাকে। এজন্য বন্দিদের কষ্ট করেই থাকতে হয়। তবে শীত শুরু হওয়ায় তুলনামূলক কম সমস্যা হচ্ছে। বন্দিদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী বছর ভবন নির্মাণ হবে। তখন বন্দিদের আবাসন সংকট নিরসন হবে।’