ছদ্মবেশী অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করে দলকে পরিশুদ্ধ করতে হবে

হোসেন মিন্টুঃ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ৭১’র পরাজিত শক্তি ও অবৈধ সামরিক জান্তা কখনো মেনে নিতে পারেনি। জিয়াউর রহমানও চাননি শেখ হাসিনা দেশে ফিরুক। তাই শেখ হাসিনাকে প্রাণনাশের জন্য আজ পর্যন্ত ২১টি ব্যর্থ হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছে। তাকে হত্যার ধারাবাহিক অপচেষ্টা শুরু করেছিলেন স্বৈরাচারী সেনাশাসক এরশাদ। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে পুলিশ পাখি শিকারের মত নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার তান্ডব চালিয়েছিল। সেইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আদালত ভবনের মুখে শেখ হাসিনা যখন ট্রাকের উপর দাঁড়িয়েছিলেন তখন আমি সহ অনেক নেতাকর্মী তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শেখ হাসিনা হুকুম দিয়েছিলেন তোমরা মানুষ দেখেছো কিন্তু মানুষের গণ অভ্যুত্থান দেখোনি। শেখ হাসিনার কথা সেদিন সত্য হয়েছিল। তাঁরই নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়। তিনি গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আদালত ভবনের মুখে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভের সামনে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবসের ৩৬ তম দিবস পালনোপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, অগণতান্ত্রিকভাবে অবৈধ পন্থায় শেখ হাসিনার সরকারকে ধাক্কা দেওয়া যাবে না এবং যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ে এবং অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি গণহত্যা দিবসে যে বর্বর তান্ডব চালানো হয় তাতে ২৪টি প্রাণ ঝড়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছিলেন। তারপরও তাঁকে বারবার হত্যার প্রচেষ্টা হয়েছে। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার কুসন্তান তারেক জিয়ার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেইদিন আইভী রহমান সহ ২৬টি প্রাণ ঝড়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মী স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়ে এখনো যন্ত্রনায় ভুগছেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগঠিত চট্টগ্রাম গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে সারাদেশের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রামে প্রয়াত জননেতা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে উঠায় চট্টগ্রাম গণহত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এতে ৫ জনের ফাঁসি হয়েছে। অনেকের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো পলাতক। তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এদেশের জনগণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সহ অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো নিরাপদ নয়। এছাড়া ৭১’র পরাজিত শক্তির অনেক প্রেতাত্মা ছদ্মবেশে দলের ভিতরেও ঢুকে পড়েছে। এদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং অবশ্যই দল, দেশ ও জাতিকে পরিশুদ্ধ করা হবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন আজকের দিনে একই সাথে ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসও পালিত হচ্ছে। এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আইয়ুব শাহীর পতন হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়েছিলেন। এই গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই মুক্তিযুদ্ধের সূচনা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পিপি এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এম.পি নোমান আল মাহমুদ, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নির্বাহী সদস্য মহব্বত আলী খান, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান মিন্টু। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য আলহাজ্ব শফর আলী, শেখ মোহাম্মদ ইছহাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মো: হোসেন, নির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ, থানা আওয়ামী লীগের সাহাব উদ্দিন আহমেদ, আনছারুল হক, মো: সালাউদ্দিন, রেজাউল করিম কায়সার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো: জামাল উদ্দিন, মাহবুবুল আলম কোম্পানী, ফারুক আহমেদ, দিদারুল আলম মাসুম, শাহেদুল আজম শাকিল, আবদুর রহিম, সাইফুল আলম বাবু, আনিসুর রহমান ইমন, ইফতেখার আলম জাহেদ প্রমুখ। স্মরণসভা শেষে ২৪ জানুয়ারি গণহত্যার শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে সভামঞ্চ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন তার বিদেশ সফরকালে চট্টগ্রামে অনুপস্থিত থাকাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বদিউল আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ