ফুটপাত হকার মুক্ত করার আগে মানবিক কারণে পুণর্ভাষন নিশ্চিত অপরিহার্য্য—মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী

হোসেন মিন্টুঃ

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি’২০২৪ চট্টগ্রাম নাগরিক ভোগান্তি লাঘব, আইন শৃঙ্খলা ও নিয়মনীতির সুরক্ষা, সড়ক পার্শ্বস্ত বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বেচাকেনায় বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাচ্ছন্দ আনায়নে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত এবং মূল সড়কের উপর বড় অংশে স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা, যত্রতত্র হকারদের জোরপূর্বক দখলদারিত্ব উচ্ছেদের প্রয়োজন ও অপরিহার্য্যতা যেমন রয়েছে ঠিক একইভাবে উচ্ছেদকৃত হকারদের রুটি রুজির সংস্থান ও পুণর্ভাসনের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার বিষয়টিও মানবিক ও অত্যন্ত জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। গত রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নির্দেশে চসিক নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে নগরীর নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ফুটপাতগুলোকে অবৈধ দখল মুক্ত করায় ভুক্তভোগী উচ্ছেদকৃত হকারদের একাধিক সমিতির নেতৃবৃন্দ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী দামপাড়াস্থ বাসভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই মন্তব্য করেন। এসময় হকার নেতৃবৃন্দ তাঁকে অবহিত করেন যে, ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল মুক্ত করার জন্য মেয়র যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন আমরা তার বিরোধীতা করিনা। তবে উচ্ছেদের আগে হকারদের পুণর্ভাসন করাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই বিষয়টিকে যদি আমলে না নেওয়া হয় তাহলে তা তো হকারদের পেটে লাথি মারার শামিল। হকারের ভোগান্তি লাঘবে মেয়র ফুটপাত হকার মুক্ত করার যে উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন তা জনস্বার্থে প্রশংসিত হলেও অভিযানের আগে হকার পুনর্ভাসনের জন্য স্বল্প মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত এবং তা আমাদের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারলে তা যদি হকারদের গ্রহণযোগ্য হয় তারা নিজে থেকেই ফুটপাত দখলমুক্ত করে দেবেন। এক্ষেত্রে কোন সাংঘর্ষিক পরিস্থি সৃষ্টি হওয়ার আশংখ্যা থাকে না। তারা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে আরো আবেদন জানান যে, আসন্ন মাহে রমজান সমাগত এই রমজান মাসে পরিবার পরিজন নিয়ে রোজা রাখা ও সিয়াম সাধনা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের আগেই ফুটপাত থেকে উচ্ছেদকৃত হকাররা একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাবন করছে। এই সময় উচ্ছেদকৃত হকারদের অন্তত ঈদ পর্যন্ত তারা যেন ফুটপাতে ব্যবসাপাতি করতে পারেন সেই সুযোগটি প্রধান করা একটি মানবিক দায়িত্ব ও কত্বব্য পালন করে মাননীয় মেয়র মহানুবতার পরিচয় দেন সেজন্য মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী হকার নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনবান্দব সরকার। এই সরকার ধনী গরীব নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা করে। বিশেষ করে গরীব মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা এবং কর্মস্থানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়। আজকে যারা চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফুটপাতে যে সকল হকার ব্যবসাপাতি করে রুটি রুজির সংস্থান করছেন তারা সমাজের অংশ এবং রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক। বেকারত্ব ও কর্ম সংস্থানের অভাবেই তারা ফুটপাতে ব্যবসাপাতি করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছে। এটাও ঠিক হকারদের কারণে ফুটপাতগুলো পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলে সামান্য বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খালাও বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই হকারদের নিয়মনীতি শৃঙ্খালা ও আইনকানুন মেনে তাদের ব্যবসাপাতি করতে হবে এবং ফুটপাতের পাশেই যে সকল দোকান পাঠ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের স্বার্থটিও বিবেচনা করতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে, ফুটপাতে নিকট অতিথ থেকেই ফুটপাতেই হকাররা ব্যবসাপাতি করে যাচ্ছে। সাবেক মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ.জ.ম নাছির উদ্দীন যখন মেয়র ছিলেন তখন তারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং পুনর্ভাসন সাপেক্ষে হকার উচ্ছেদের বিষয়টি মাথায় রেখেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ প্রদান এবং অন্যান্য দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন এবং তাদের ব্যবসাপাতির জন্য হালকা ও স্থানান্তরযোগ্য অস্থায়ী স্থাপনা কিভাবে হবে তারও একটি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাই যেহেতু নিরসন হয়নি সেহেতু হকারদেরকে ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করার আগে তাদেরকে যদি কোথায় কিভাবে কোন পদ্ধতিতে পুণর্ভাসন করা হবে সেই চকটি যদি মেয়র খোলামেলা করে দিতে পারতেন তাহলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং হকার উচ্ছেদ অভিযান কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হতো না এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই বিয়ষটির একটি স্থায়ী সমাধান হতো। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খালা বাহিনীকে নগরীর ফুটপাতগুলো অবৈধ দখলমুক্ত ও হকার উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত হকারদের পুনঃভাষনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের পরিবার পরিজনের রুটি রুজি সংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদানের আহবান জানান। তিনি ফুটপাত দখল মুক্ত ও হকার উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে বিদ্দমান পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে কোনধরনের সাংঘর্ষিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সে জন্য সর্তক ও শান্ত থাকার আহবান জানান। এছাড়াও তিনি বিদ্দমান পরিস্থিতিতে হকার উচ্ছেদ অভিযানকালে ও পরবর্তী উদ্ভুদ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে যে সকল হকার গ্রেফতার হয়েছে তাদের মুক্তি এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানান। চট্টগ্রাম হকার্স লীগের সভাপতি প্রবীন কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে ও ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন লেদুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সৌজন্যে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পরিষদের সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আলহাজ্ব সফর আলী, চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মীর হোসেন মিলন, চট্টগ্রাম সিটি হকার্স লীগের সভাপতি হারুন আর রশিদ, সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ভুঁইয়া, নুরুল আমিন মিয়া, হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ রনি, তারেক হায়দার, আবু সিদ্দিক প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ