বাঁশখালীর ছনুয়ার শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার

মনজুর আলম,ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ

চট্টগ্রাম বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের আলোচিত নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিককে গ্রেফতারের পর থানায় এসে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন একাধিক ভুক্তভোগী। কেউ কেউ ঘটনার কৌতুহল বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বাঁশখালী ১২ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের স্বর্ণের পাহাড়। ৩ থেকে ৪ দলের চক্র আছে। সবাই ১২ ছনুয়া ইউনিয়নের নাগরিক। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে আত্মীয়তার মধ্য দিয়ে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বপ্নের স্বর্ণে দিবে বলে নিয়ে আসেন অত্র এলাকায়। তাদের উপরে জুলুম নির্যাতন জোরপূর্ব টাকা হাতিয়ে নেয়।টাকা না দিতে চাইলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। নিরুপায় হয়ে আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন কৌশলে টাকা দেয়।

১২ নম্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে জলদস্যুর কাজে নিয়োজিত ছিল এই স্বর্ণ চক্র দলটি, রেজাউল হক চৌধুরী জানার সত্ত্বেও নীরব থাকতেন। কারণ ইউনিয়নের অভিভাবক হচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান। একজন ইউপি চেয়ারম্যান সৎ ও নিষ্ঠাবান হলে ইউনিয়নে এত অপকর্ম করা সম্ভব হয় না। অত্র এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান সহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতারক সত্যের সাথে জড়িত আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ প্রতারকদের মাথার ছায়া।প্রতারণার মাধ্যমে রাতা রাতি কোটিপতি।

বর্তমান চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চৌধুরীকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল দিলে কল রিসিভ করে নাই। স্বর্ণ মানিকের প্রতারণার স্বীকার হয়েছে নারী ও গণমাধ্যম কর্মীসহ অন্তত শতাধিক মানুষ।

২০১১ সাল থেকে জনগণের মাঝে বিভিন্নভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে লোভ দেখিয়ে, স্বর্ণ দিবে বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আচ্ছে। স্বর্ণ মানিকের সাথে আরো ২০, ৩০ জনের সক্রিয় ও চক্র দল আছে। সবাই ১২ নাং ছনুয়া ইউনিয়নের নাগরিক। মানিক তার নিজ বাসভবনে অপকর্ম করে আসছে। ১২ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের এত অপকর্ম চুরি ডাকাতি চিন্তায় জলদস্যু সহ মাদকের সাথে জড়িত আছেন অনেক ব্যক্তি। এত অনিয়ম জানার সত্ত্বেও ১২ নম্বর ইউনিয়নের প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ ও সাবেক আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নীরব থাকত। কেন নীরব থাকতেন এই প্রশ্ন রেখে গেলাম সাধারণ জনগণের কাছে।

এই চক্রদল দেরকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তবে বর্তমান বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদের নির্দেশনায় থানার চৌকস দারোগা হাবিবের নেতৃত্বে পুলিশ বোরকা পড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বুঝে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এসময় গ্রেফতার এড়াতে পালাতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন মানিক। আবার সে দুই পুলিশ সদস্যকে আহত করে। তাকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তা দেখে প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকে বাঁশখালী থানায় মামলা করছে। শুধু তাই নয়, তাকে গ্রেফতারের পর তার নিজ গ্রামে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে পুরো এলাকা আতঙ্কমুক্ত হয়েছে।

বাঁশখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওয়ারেন্টের আসামি স্বর্ণ মানিককে ধরতে যায় পুলিশ। এসময় পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে স্বর্ণ মানিক। পুলিশ স্বর্ণ মানিকের ঘর ঘিরে ফেলে। স্বর্ণ মানিক তার বিলাসবহুল বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে তার ঘর তল্লাশি করে একটি বিদেশি রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি, ২টি গুলির খোসা, ২টি দেশিয় তৈরি এলজি, ৪ রাউন্ড কার্তুজ, একটি সুইচ গিয়ার, একটি কিরিচসহ দক্ষিন বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকার ত্রাস ও শীর্ষ সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী আহমদ কবির প্রকাশ নকল স্বর্ণ মানিককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় থানার এসআই হাবিবসহ ৭ পুলিশ সদস্য আহত অবস্থায় আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

বাঁশখালী থানা সূত্রে আরও জানা যায়, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে দুইটি মামলাসহ মোট ১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে বাঁশখালী থানার দুই পুলিশ সদস্য এবং নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্বর্ণ মানিকের প্রতারণা র্দীঘদিন যাবৎ স্বপ্নের স্বর্ণের পাতিল পাওয়ার কথা বলে খাঁটি স্বর্ণ দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করার পর অস্ত্র হাতে দিয়ে ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করত মানিক। এভাবে তার প্রতারণার স্বীকার হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৫০০ মানুষ নিঃস্ব হয়েছে।

তাদের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রামু থানাধীন ঈদগর ঝুমপাড়া ৭নং ওয়ার্ডের প্রবাসী বেলালের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা হাতিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বায়েজিদ থানাধীন বাংলাবাজার ডেবারপার আব্দুল মালেকের পুত্র ফিরোজ উদ্দিন থেকে নিয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

তার প্রতারণার ফাঁদ থেকে রেহাই পায়নি ফিরোজ উদ্দিন নামে এক সাংবাদিক। তার প্রতারণার সঠিক বিচার চেয়ে প্রতিনিয়ত থানায় আসছেন অনেক ভুক্তভোগী। এছাড়া সন্ত্রাসী মানিক ও তার পরিবারের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীরা জানায়, স্বর্ণের প্রলোভনে শত শত পরিবারের সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। সন্ত্রাসী কায়দায় গৃহবন্দী করে মারধর, জোরপূর্বক অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল‌, ধর্ষণসহ নানা অপকর্ম করতেন স্বর্ণ মানিক। তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

এ বিষয়ে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলছেন, নকল স্বর্ণ ব্যবসায়ী মানিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। তবে তার কাছ থেকে প্রতারণার শিকার লোকজন মামলা করলে মামলা আরও সংখ্যা বাড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ