যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার এড়াতে এ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে হাজির
যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার এড়াতে এ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে হাজির
রিয়াজুল হক সাগর,রংপুরঃ
স্ত্রীর দায়েরকৃত যৌতুকের মামলায় পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে এ্যাম্বুলেন্সে করে স্ট্রেচারে চড়ে ব্যান্ডেজ মোড়ানো শরীর নিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে আগাম জামিন প্রার্থনা করলেন স্বামী আফজালুল হক(৫৩)। রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক এফ এম আহসানুল হকের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন নেওয়ার সময় ভুক্তভোগী আফজালুল হকের ছেলে সাথে ছিলো। এ নিয়ে আদালপাড়ায় কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এদিকে স্বামীর জামিনের খবর শুনে আদালত চত্বর থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে যান আকতারা বেগম। এ সময় মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। আফজালুল হকের বাড়ি রংপুর নগরীর হাজীরহাট জগদীশপুর এলাকায়। জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে গত ১৯ মার্চ স্ত্রীকে চড় দেন স্বামী আফজালুল হক (৫৩)। স্ত্রী আকতারা বেগম (৪৭) এ ঘটনা জানান ভাইদের। বোনকে চড় দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শ্যালক দুলাভাইকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেন। এ ঘটনায় গত ৩১শে মার্চ শ্যালকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আফজালুল হক। কিন্তু ওই মামলা ও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে শ্যালকেরা বোন আকতারাকে দিয়ে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। পুলিশ বার বার বাসায় তাকে গ্রেফতার করতে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রোববার এ্যাম্বুলেন্সে করে স্ট্রেচারে চড়ে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসেন আফজালুল হক। স্ত্রী আকতারা বেগমের দায়ের করা এপ্রিলের গত ৫ তারিখের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩১ বছর যাবত সংসার জীবনে নানা সময়ে যৌতুকের জন্য চাপ দেন স্বামী আফজালুল হক। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা সালিসও করেন। কিন্তু সর্বশেষ ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন স্বামী। আকতারা ভাইদের কাছ থেকে যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়ায় লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে সম্পূর্ণ মিথ্যে ও সাজানো একটি মামলায় শয্যাশায়ী একজন মানুষ এ্যাম্বুলেন্সে করে স্ট্রেচারে হাজিরা দিতে এসেছেন। আদালত সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তার জামিনের আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আসামি নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন। পরে তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেওয়া হয়। মামলা রেকর্ডের আগে পুলিশের তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন ওই আইনজীবী।এদিকে আদালত চত্বরে আফজালুল হকের স্ত্রী আকতারা বেগম সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি এবং কাজ শেষে দ্রুত চলে যান তিনি।মামলায় জামিনের পর আফজালুল হক বলেন, শ্যালকেরা মামলা থেকে বাঁচার জন্য আমার স্ত্রীকে বাদী করে আমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন। তাই পুলিশ গ্রেফতারের জন্য বারবার বাসায় যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে স্ট্রেচারে চড়ে আদালতে এসে হাজিরা দিলাম। আদালত বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, আমার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তার ন্যায় বিচার চাই।