সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
হোসেন মিন্টুঃ
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র উদ্যোগে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক এক আলোচনা সভা ২৫ জুলাই বিকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ’র সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম. এ. লতিফ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, কাস্টম হাউস’র যুগ্ম-কমিশনার মোঃ তারিক হাসান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম, চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব, বিজিএমইএ’র ১ম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিকেএমইএ’র পরিচালক ফৌজুল ইমরান খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন’র সভাপতি সৈয়দ মোঃ আরিফ, বাফা’র সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র সভাপতি এ. কে. এম. আক্তার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন’র পক্ষে জহির উদ্দিন আহমেদ, জিপিএইচ ইস্পাত’র আলমাস শিমুল, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী এবং চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, প্রাইম মুভার ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোঃ হোসেন এবং আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির মোঃ সুফিউর রহমান টিপু সভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় চেম্বার পরিচালকবৃন্দ অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, আলমগীর পারভেজ, মাহবুবুল হক মিয়া, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও আখতার উদ্দিন মাহমুদসহ বিকডা, রিহ্যাব, মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স এসোসিয়েশন, রেস্তোঁরা মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রæপ, চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ডভ্যান এন্ড মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপ, বন্দর ট্রাক মালিক ও কাভার্ডভ্যান এসোসিয়েশন এর প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও প্রতিনিধিবৃন্দসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এম. এ. লতিফ এমপি বলেন-বঙ্গবন্ধু রাজাকারদের ক্ষমা করেছেন, প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে মানবতা দেখিয়েছেন। কিন্তু রাজাকারের দোসররা বারবার দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এজন্য আমাদের সকলকে নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন-আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর ছিল না, ছিল না বন্দরের উল্লেখযোগ্য আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন হচ্ছে তেমনি দেশে তৈরী হচ্ছে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামোগত সুবিধা যা নস্যাতে সবসময় সক্রিয় রয়েছে ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি। দেশের সম্প্রতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্রæত স্থিতিশীল করার জন্য প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন-এই মুহূর্তে আমাদের সকলকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি সকল ধরণের ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানার সমস্যা সমাধান ও যন্ত্রপাতি কার্যকর রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী পদক্ষেপ কামনা করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন-সম্প্রতি যে ঘটনা হয়েছে তা দেশের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ও নজীরবিহীন। আধুনিক ও সমৃদ্ধ আজকের বাংলাদেশের স্বপ্ন যারা ২০০৯ সালে দেখেনি তারাই তান্ডব চালিয়েছে দেশের বিভিন্ন জনবান্ধব স্থাপনায়। তিনি বলেন-দেশের অর্থনীতির জন্য চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর এবং দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এজন্য চট্টগ্রামে যাতে কোন ধরণের নাশকতা না হয় এবং অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক থাকে সেজন্য আমরা ব্যবসায়ী-সহ সকলের সাথে কাজ করছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন-যারা এইসব ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে তারা রাজাকারের উত্তরসূরী। আমরা সকলেই তাদের জানি। কিন্তু তাদেরকে উন্মোচন করছিনা। আমরা যদি তাদের উন্মোচন না করি এবং আইনের আওতায় না আনি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি এই সকল অপচেষ্টা শুরুতেই যেন স্বমূলে নির্মুল করতে পারেন সেজন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন ও নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বদ্ধ পরিকর।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন-বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতে কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে না পারে সেজন্য আমরা তৎপর ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। একই সাথে উৎপাদন যাতে থেমে না থাকে সেজন্য আমরা চট্টগ্রামের কারখানাগুলো দ্রুত চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তিনি দেশের ব্যবসায়ী-সহ আপামর জনসাধারণকে যারা এইসব ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে তাদের স¦রূপ জনগণের কাছে উন্মোচন করার আহবান জানান।
চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন-সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও অবকাঠামো স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ভাঙ্গচুরসহ দেশব্যাপী অরাজকতা ও নৈরাজ্যপূর্ণ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে রাষ্ট্রীয় সম্পদের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অর্থনীতির প্রাণ দেশের শিল্প উৎপাদন এবং সামগ্রিক আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। দেশ বিরোধী চক্র অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং রপ্তানি খাতকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল। দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, দূরদর্শীতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কারণে নজীরবিহীনভাবে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ওমর হাজ্জাজ ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে সকল প্রকার নৈরাজ্য, অরাজকতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং সকল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে তাঁর সাথে থাকার ঘোষণা দেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি স্বাভাবিক রাখতে বন্দর, কাস্টমস, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানান চেম্বার সভাপতি। পাশাপাশি এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে পোর্ট ডিউজসহ বিভিন্ন ফি মওকুফের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান ওমর হাজ্জাজ।
চেম্বার সহ-সভাপতি রাইসা মাহবুব নাশকতার কারণে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও ব্যাংকিং খাতের ক্ষতিগ্রস্ত সেবা প্রদান পদ্ধতিকে দ্রুততার সাথে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আনার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।