চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক ফোরাম’র চেয়ারম্যানের প্রস্তাবনা
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক ফোরাম’র চেয়ারম্যানের প্রস্তাবনা
চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসঃ
জলাবদ্ধতা নিরসনে নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার এক বিবৃতি তে বলেছেন, অনতিবিলম্বে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন বর্ষায় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা/জলজট স্থায়ীরূপ ধারণ করেছে, প্রতি বছরই নগরবাসীকে এ সমস্যার সম্মূখীন হতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প নেয়া হলেও কার্যকর কোনো ফল এখনও আসেনি। যার ফলে বর্ষার মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় নগরবাসীকে নাকাল হতে হচ্ছে। ‘বর্ষায় শহরও আশপাশের মানুষের জন্য অভিশাপ হিসেবে আসে। মাঝারি ধরনের বর্ষায়ও হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায়, সড়কসহ একাধিক এলাকা।এতে চট্টগ্রামের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বছর। চট্টগ্রাম শহরকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেতে মুক্তি দিতে কার্যযকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চট্টগ্রামে রাস্তা উঁচু করে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। উপরন্তু সাধারণ মানুষের তিলে তিলে গড়া বাড়িগুলোকে অকেজো করে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে নীচতলা। বাধ্য হয়ে এগুলো পুন: নির্মাণ সংস্কার করতে গিয়ে আবারও বাড়ির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাড়াটিয়ারা বিরাট ক্ষতির মাসুল গুনছে। নগরীতে ৭০টি খাল ছিল ১৯৬৯ সালের এক জরিপ অনুযায়ী। বেশ কিছু খাল হয়ে গেছে বিলীন বা ভরাট , অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে খাল ড্রেনগুলোর অনেক অংশের উভয় পাড়ে।অপরিকল্পিত নগরায়ন জলাবদ্ধতার ঝুঁকির অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো গড়ে তোলায় আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকালিয়া, মোহরা, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইসহ নগরীর নিম্নাঞ্চল শুষ্ক মৌসুমেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৫ সালের সংশোধিত মাষ্টার প্লান “জলাবদ্ধতা নিরসনের ড্রেনেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২০ বছর কোন উদ্যোগ সিটি কর্পোরেশন বা সিডিএ নেয়নি। ২০১৫ সালে আমরা সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে নাগরিক ফোরাম গঠন করে আন্দোলনের পর সরকারের টনক নড়ে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৯৯৫ সালের সংশোধিত মাষ্টার প্লানের আলোকে মেগাপ্রকল্প নেয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য, কিন্তু আজ ২০২৩ সালে মাঝামাঝি এসেও আমরা দেখছি প্রকল্পের কাজ
সম্পন্ন হয়নি”।
এই প্রেপ্রেক্ষাপটে জনগণের দাবী “জলাবদ্ধতা নিরসন কল্পে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে”। “অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করতে হবে”। “সিটি করপোশেন ও সিডিএ একে অপরের ইপর দোষ চাপানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে”। “রাস্তার পাশের ড্রেনগুলোকে সংস্কার করতে হবে, পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে, পরিষ্কার রাখতে জনগণকে বাধ্য করতে হবে”। “রাস্তা উচু করা সমস্যার সমাধান নয়, রাস্তা উঁচু করার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া বন্ধ করতে হবে”। “খাল খনন ও পুনরুদ্ধার করতে হবে। খালের দু’পাশ অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে হবে”।
“শহরে উম্মুক্ত জলাশয় সৃজন করতে হবে, খালি জায়গা বিল রক্ষা করতে হবে। একটি শহরের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ এলাকা জলাভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে খুবই নগণ্য শতাংশ জলাভূমি এলাকা”। “কর্ণফুলী নদীর গভীর ড্রেজিং করতে হবে ও এর তীরে অবৈধ দখলমুক্ত করে বনায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো আপোষ চলবে না”। “সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রন্ত কঠোর আইন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে”। “পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ে গাছের কাটিং না লাগিয়ে শিকড়যুক্ত গাছ লাগাতে হবে”। “প্রশাসনকে দূর্নীতিমুক্ত হয়ে জনগণের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ হতে হবে। এবং যোগ্য ও নগরবাসীর উপর দায়িত্বশীল মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করতে হবে”। “প্রশাসনের সর্বস্তরে জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে এবং জনগণকে প্রতি মাসে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করা হয়”।