রংপুর সিটিতে নাগরিক সেবা পেতে হটলাইন চালু
রংপুর সিটিতে নাগরিক সেবা পেতে হটলাইন চালু
রিয়াজুল হক সাগরঃ
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) ছয় কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে কোনো জনসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। অনুপস্থিত থাকা সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্থলে সংরক্ষিত ওয়ার্ড (নারী) কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে জনসেবা কার্যক্রমসহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন প্রশাসকের দায়িত্বপ্রাপ্ত রংপুর বিভাগীয় কমিশনার। তাঁকে প্যানেল মেয়রসহ অন্যান্য কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যাতে কোনোভাবে নাগরিক সেবা ব্যাহত না হয় এবং সেবাপ্রাপ্তি সহজীকরণে হটলাইন নম্বরও চালু করেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রসিকের প্রধান সম্পত্তি কর্মকতা (সিনিয়র সহকারী সচিব) মৌসুমী আফরিদা, বর্তমান প্যানেল মেয়র ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহাবুবার রহমান মঞ্জু, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু হাসান চঞ্চল, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজু, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিটন পারভেজ, সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসনা বানু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্র্বতী সরকার গঠন হয়। এরপর রংপুর সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন থেকে মেয়রদের অপসারণ করে সরকার। মেয়রের অবর্তমানে সরকারি নির্দেশে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন। তার দিকনির্দেশনা ও তদারকিকে সিটির নাগরিকদের জনসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সেবা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যা তথ্যগত দিক থেকে ভুল বলে আমরা মনে করি। কারণ সিটির ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলে ৪৪ জন কাউন্সিলর রয়েছে, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পৃক্ত ৬-৭ সাধারণ কাউন্সিলর অনুপস্থিত রয়েছেন। তারা বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছে। কিন্তু তাদের অনুপস্থিতিতে নাগরিক সেবা কোনোভাবেই ব্যহত হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে এখন কাউন্সিলররা অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত সেবা কার্যক্রমে উপস্থিতি থাকছেন। তিনি আরও বলেন, সদ্য সাবেক মেয়র (অপসারণ) মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, যা দুঃখজনক। তিনি (সাবেক মেয়র) পলাতক এবং তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মামলা হয়নি। কারণ তিনি পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে বিজয়ের দিন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। খাবার, পানি, ওষুধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেছেন। তাকে সরকারি নির্দেশে মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করা হলে তিনি নিয়ম মেনেই প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এবং প্রশাসককে সহযোগিতার মাধ্যমে সিটির চলমান উন্নয়ন তরান্বিত করাসহ নাগরিক সেবা কার্যক্রম সর্বাত্মকভাবে সচল রাখতে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সকল কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বানও করেছিলেন সাবেক মেয়র। মাহমুদুর রহমান টিটু বলেন, আমরা নগরবাসীকে প্রত্যাশিত দিতে অতীতের মতো এখনো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। যা কয়েকজন কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নাগরিকদের সেবা পেতে ভোগান্তি না হয় সেজন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পাশাপাশি প্যানেল মেয়রও দেখভাল করছে। ইতোমধ্যে প্রশাসক দায়িত্ব গ্রহণের পর নাগরিক সেবা সহজীকরণসহ মুঠোফোনে তথ্য পেতে হটলাইন নম্বর (রংপুর সিটি কর্পোরেশন) ০১৩৩২৫৬৬৩০১, ০১৩৩২৫৬৬৩০২, ০১৩৩২৫৬৬৩০৩ চালু করা হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ, বিদ্যুৎ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ অন্যান্য সেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে হটলাইন নম্বরে ফোন করতে পারবেন সিটির বাসিন্দারা। আমরা মনে করছি, সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে রংপুর সিটি কর্পোরেশন অতীতের বৈষম্য থেকে বেরিয়ে এসে কাঙ্খিত উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় সেবার মান আরো বাড়াতে পারবে। এ সময় তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনে সাবেক মেয়রের সহযোগিতার জন্য রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা প্রসংশনীয়। কিন্তু একটি মহল বিভ্রান্ত ছড়াতে ওই সময়ে বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। এখন আমরা লক্ষ্য করছি, বর্তমান সিটির প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে নিয়েও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার আবেদন করেছিল একটি শহীদ পরিবার। কিন্তু পরবর্তীতে বাদী এফিডেভিটের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারের নাম বাদ দেয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে। আমরা মনে করি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আগে সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা উচিত। তা না হলে বিভ্রান্তিকর ভুল তথ্য পরিবেশনের কারণে মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও তথ্য বিভ্রাট সৃষ্টি হবে। এদিকে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর মাহাবুবার রহমান মঞ্জু, কাউন্সিলর মাহমুদুর রহমান টিটু।
উল্লেখ্য; ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গা ঢাকা দিয়েছে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থাকা কাউন্সিলররা সরাসরি হামলা চালিয়েছে।