জিনের বাদশা পরিচয়ে ২৮,৩৬,০০০/- টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার-৩
আরজুন নাহারঃ
মোঃ আবুল হাছান সহিদ সৌদি আরব প্রবাসী। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর সৌদি আরবে থেকে ডিসেম্বর/১৮ সালে বাংলাদেশে আসে। সৌদি আরব মক্কা শরীফের পাশে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা করতেন। সৌদি আরবে তিনি ০৫টি আবাসিক হোটেল পরিচালনা করতেন। আবাসিক হোটেল ব্যবসাটি সৌদি আরবের স্থানীয় আদনান সাঈদ আল সাদী নামক (কপিল) এর নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হত। সৌদি আরবের নিয়ম মোতাবেক সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদীর নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলে তার ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা উক্ত ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতেন। সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী মোঃ আবুল হাছান সহিদ কে ছুটি কাটানোর জন্য বাংলাদেশে পাঠায়। তিনি বাংলাদেশে ছুটি শেষে পুনরায় সৌদি আরবে ফেরৎ যেতে চাইলে দেখেন যে, তার ভিসাটিতে সৌদি আরবে প্রবেশ নিষিদ্ধ সীলমোহর দেওয়া। তিনি আর সৌদি আরবে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে বুঝতে পারেন, সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২) পরিকল্পিত ভাবে তার ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা এবং হোটেল সমূহ আত্নসাৎ করার জন্য তাকে সৌদি আরব প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়াছে। তিনি প্রতারণার শিকার হন ব্যবসায়ের সমস্ত টাকা হারিয়ে এক প্রকারের নিঃস্ব হয়ে জীবন যাপন করতে থাকে। গত ফেব্রুয়ারী/২০১৯ সালে কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলিস্থ স্বর্ণের দোকানে তার স্ত্রীর স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য গেলে স্বর্ণের দোকানের কর্মচারী তথা ৩নং আসামীর সাথে দেখা হয়। ০৩ নং আসামী স্বর্ণ বিক্রয়ের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরে বর্ণিত ঘটনা খুলে বলেন। ০৩নং আসামী ঘটনা শুনার পর উক্ত বিষয়ের সমাধান করার একটা উপায় আছে বলে তার মোবাইল নম্বরটি নেয়।

২০/০৩/২০২১ ৩নং আসামী মোবাইলে ফোন করে মোঃ আবুল হাছান সহিদ কে কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘীর পাড়স্থ হোটেল আল ফাতাহ এর ৩য় ৩লায় নিয়ে যায়। সেখানে ১নং আসামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ১নং আসামী নিজেকে একজন পীর ও জ্বীন পালে বলে জানায়। ধর্মীয় আধ্যাত্নিক শক্তি এবং জ্বীনের মাধ্যমে ১নং আসামী সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী (৪২) কে বাংলাদেশে এনে দিতে পারবে এবং বাংলাদেশে এসে তার সম্পূর্ণ টাকা ফেরৎ দিয়ে যাবে বলে জানায়। ১নং আসামী তার সমস্ত কথা শুনার পর উক্ত টাকা এবং সৌদি নাগরিককে বাংলাদেশে ফেরত আনতে হলে শুরুতে ২,০০০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা এবং ৩ ভরি স্বর্ণ ও আমেরিকান এক হাজার টাকার ডলার দিতে হবে। ১নং আসামী কোতোয়ালী থানাধীন লালদিঘী শাহী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুয়ে শপথ করায়। তিনি উক্ত বিষয়টি কারো কাছে বললে তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে এবং তার পালিত জ্বীন তাকে গলা চিপে হত্যা করবে বলে জানায়। এমনকি তার সন্তানদের উপর বড় ধরনের বিপদ আসবে বলে জানায়। ১নং আসামী বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করতে হবে বলে প্রথমে ২,০০০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা এবং ৩ ভরি স্বর্ণ নেয়। পরবর্তীতে উক্ত সৌদি নাগরিককে এনে দিবে বলে গত মার্চ-সেপ্টেম্বর/২০২১ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২নং আসামীর নগদ ও বিকাশ নাম্বারে সর্বমোট- ২৮,৩৬,০০০/-(আটাশ লক্ষ ছয়ত্রিশ হাজার) টাকা নেয়। ১, ২ ও ৩নং আসামীগণ একই উদ্দেশ্যে পরষ্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে প্রতারণাপূর্বক অর্থ আত্নসাৎ ও হুমকি প্রদান করায় মোঃ আবুল হাছান সহিদ তাদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৪০৬/৪২০/৩৪/৫০৬ ধারায় ০১টি মামলা রুজু হয়। উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই/মোঃ মেহেদী হাসান বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে অভিযান পরিচালনা করে ২২/০৯/২০২১ কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি এলাকা থেকে এজাহারনামীয় আসামী আবু তৈয়ব (৫৮)’কে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে এবং ঘটনার কথা স্বীকার সহ ১, ২ ও ৩নং পলাতক আসামীর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। গ্রেফতারকৃত ৪নং আসামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলা তদন্তকারী অফিসার সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানা হোয়াক্যাং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ২৩/০৯/২০২১ রাত ১২ঃ৩০ মিনিটে ১ ও ২নং আসামীকে গ্রেফতার করে। অপর একজন আসামী কৌশলে পালিয়ে যায়। ১ ও ২নং আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ সহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ১নং আসামী নিজেকে জীনের বাদশা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ৪নং আসামীর কাছ থেকে নেওয়া তথ্য মতে ১নং আসামী ভুক্তভোগীর কাছে তাদের সমস্যার কথা উপস্থাপন করলে ভুক্তভোগীরা বিশ্বাস করতে শুরু করে। একপর্যায়ে ১নং আসামীর কথা বিশ্বাস করে ভুক্তভোগীরা তাদের টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার দিয়ে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমাধানের চেষ্টা করে এবং জীন তাড়ানোর চেষ্টা করে। ১নং আসামী ভুক্তভোগীদের সমস্যা গুলো তাদের নিকট উপস্থাপন করে জীন চালানের কথা বলে তাদের নিকট মোটা অংকের টাকা দাবী করে।গ্রেফতারকৃতদের নাম ও ঠিকানা মোঃ আব্দুল মান্নান (৫৮), পিতা-মৃত আব্দুল আজিজ, মাতা-মৃত লালমতি বেগম। মোঃ জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩), পিতা-মোঃ আব্দুল মান্নান, মাতা-কহিনুর বেগম। আবু তৈয়ব (৫৮), পিতা-মৃত আব্দুল হাশেম প্রঃ হাশেম, মাতা-জরিনা বেগম, স্থায়ী-আরব সিকদার বাড়ী, জাফরাবাদ, ৬নং ওয়ার্ড, পোঃ-বৈলতলী, থানা-চন্দনাইশ, জেলা-চট্টগ্রাম, বর্তমানে-বাসা নং-৫৯, চাঁন্দগাও আবাসিক, বি-ব্লক, ৪নং ওয়ার্ড, থানা-চাঁন্দগাও, জেলা-চট্টগ্রাম।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ