পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা
হোসেন মিন্টুঃ
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ৪নং কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক নানা মেরুকণের ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মধ্যে বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুরত্বসহ নানা কারণে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন ইউনিয়ন পরিষদ এর বর্তমান চেয়ারম্যান আহমদ নুর। সে কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অনেকটা প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। ৪নং কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আরো যারা দলীয় প্রতীক চান তাদের মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ হারুন, ৪নং কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাসেম রাসেল ও মোহাম্মদ তাহেরের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে মাহবুবুল হক বেশ এগিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানা যায়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তৎকালীণ হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সামশুল ইসলামকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বর্তমান চেয়ারম্যান আহমদ নুর। এ সময় তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে ঘোর আপত্তি থাকলেও পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সকলের সহযোগিতায় বিদ্রোহী প্রার্থী সামশুল ইসলমাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়। কিন্ত তিনি নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মাথায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে দুরত্ব বাড়তে থাকে। এ ইউনিয়ন শিল্প এলাকা হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন সময় আধিপত্যের লাড়াইয়ে গত ৪ বছরে সরকার দলীয় আকবর ও বাহাদুর নামের দুইজন প্রাণ হারান। স্থানীয়রা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে সরকারি বরাদ্দ বন্টনে স্থানীয় আওয়ামীলীগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে সমন্ময় করা হয়নি। ইউপি এলাকায় বেশি কিছু গাছ কোন প্রক্রিয়া ছাড়াই কেটে ফেলা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত বাগানবাড়িতে সরকারি লাইট স্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আহমদ নুর জানান, তার সাথে কারো দুরত্ব নেই। দলীয় কর্মসূচিতেও তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এখনো আছে। পরিষদে রেজ্যুলেশন করেই গাছ কাটা হয়েছিল। তার বাগান বাড়িতে সরকারি নয়, কেনা লাইট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ অযথা রাজনৈতিক কারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। দলের সাথে দুরত্ব প্রসঙ্গে বলেন, গতবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী সামশুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। দলের মনোনয়ন আবারো তিনি পাবেন বলে আশা রাখেন। তবে তাকে না দিয়ে একজন ব্যতীত যাকেই দিক তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন। তবে মাহবুবুল হককে মনোনয়ন দেয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ার প্রস্তুতি আছে। র্দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী পরিবারের সাথে যুক্ত আছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন।

তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চান। পশ্চিম পটিয়া থানা ছাত্রলীগ হয়ে গড়ে উঠান হারুন পাশে থেকেছেন এলাকার গরীব দুখী মানুষেরা। এবার জনপ্রতিনিধি হয়ে সেবক হয়ে পাশে থাকতে চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে নৌকা তারই প্রাপ্য ও ন্যায্য অধিকার। দলের দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয়দের পাশে ছিলেন এবং থাকতে চাওয়ার মানসীকতা থেকেই চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান। অতীতে অনেক চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনকালে জমি দখল, জমি বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি করে কোটিপতি হয়েছেন। ইউনিয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও তিনি কোন অপরাধে জাড়ান নি জানিয়ে বলেন, তিনি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে দলের নেতাকর্মী ও মানুষের জন্যই কাজ করবেন। এদিকে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকা মাহবুবুল হক দলের তৃণমুল নেতাকর্মীদের সাথে বেশ সখ্যতা গড়েছেন। সে কারণে দলের মনোনয়নের দৌড়ে তিনি বেশ এগিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার পিতা সোনা মিয়া চৌধুরী ১৯৭৭ সাল থেকে ৮২ সাল ও তার বড়ভাই মোজাম্মেল হক চৌধুরী ৯২ সাল থেকে ৯৮ সালে একই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তার ৯ জন ভাইয়ের মধ্যে মোহাম্মদ হারুন বিএনপির গুরুত্বপর্ণ পদে থেকে রাজনীতি করছেন। এ অজুহাতে অনেকে মাহবুবুল হকের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের বিরোধীতা করেন। মাহাবুল হক গত ২০১৬ সালেও তিনি দলের মনোনয়ন দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাকে না দিলেও তিনি সেসময় দলীয় প্রার্থীকে মেনে নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তার পিতা সোনা মিয়া চেয়ারম্যান ও বড় ভাই মোজাম্মেল হক চৌধুরী দীর্ঘ সময় ধরে কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অপর বড় ভাই ফেরদৌস চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তার পরিবার ইউনিয়ন বাসীর আস্থা অর্জন করেছেন কর্মগুণে। তিনি ৯৩ সাল হতে কালারপোল শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের দায়িত্ব পালনে মাধ্যমে ছাত্রলীগে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও বর্তমান কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত ১২ বছর তিনি কোলাগাঁও ইউনিয়ন বাসীর সুখে দুঃখে মানুষের পাশে ছিলেন। করোনা মহামারি সময় মানুষ যখন মৃত্যু ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি, সে সময় তিনি ইউনিয়বাসীর দুয়ারে দুয়ার মানুষের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন। আগামীতেও মানুষের সেবা করার জন্য আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাসেম রাসেল দীর্ঘদিন প্রবাস জীবণ যাপন শেষে কয়েক মাস পূর্বে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে তিনি তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপনে কাজ শুরু করেন। এরই মাঝে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসিন্ন হলে তিনি দলীয় মনোনয়নে দলের প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে থেকে কাজ করতে আগ্রহী। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে উন্নয়ন কাজ করে এলাকাকে মডেল ইউনিয়নে পরিণত করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ