সারাদেশে দাফন-সৎকারে ৮১৮৭ জন কে সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দেশে মহামারী করোনার দু,বছরে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রামে ৫০৪২ জনসহ সারাদেশে কাফন, দাফন, সৎকার সহায়তা দিয়েছে ৮১৮৭ জন মৃত মানুষের। এরমধ্যে ৫৪জন হিন্দু, ৮জন বৌদ্ধ, ১জন মারমা উপজাতি এবং ১জন খ্রিস্টানসহ মোট ৬৪ জন অমুসলিমকে দেওয়া হয় সৎকার সহায়তা। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ৫৯জন, অজ্ঞাত লাশ ছিল ৫৪জন, কারাবন্দি কয়েদি ৫জন এবং নও মুসলিম ছিলেন ১৪জন। দাফন কাফন ও সৎকারের বাইরে সংগঠনটির মানবিক টিমের পক্ষ থেকে ৭টি এম্বুলেন্সে ৯৩১১ রোগী পরিবহন ছাড়াও অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয় ৩৮,২০৯ শ্বাসকষ্ট রোগীকে। মাত্র ১০০টাকা সরকারী ফিতে ভ্রাম্যমান কোভিড-১৯ টেস্ট সুবিধা পান ৫৮৯৩ জন ২১,২৯২ জন মানুষকে ফ্রি ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, দুই দফা লক ডাউনে মোট আড়াই লাখ পরিবারকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় এই সময়ে। গত মাসে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া অডিটরিয়ামে গাউসিয়া কমিটির সহায়তায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৩হাজারের অধিক ছাত্র-ছাত্রীকে করোনা টিকা প্রদান করা হয়। বর্তমানে প্রান্তিক ভাসমান মানুষের মাঝে করোনার গণটিকা কার্যক্রমে সহয়তা প্রদান করে চলেছে।গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের এসব সেবার জন্য ভুক্তভোগী সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোন রকম খরচ বা ফি নেওয়া হয়নি। ৯মার্চ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে করোনা মহামারির দুই বছর পুর্তিতে আয়োজিত মানবতার সেবায় গাউসিয়া কমিটির অবদান-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে করোনায় মৃতের কাফন-দাফন, রোগী সেবা কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র যুগ্ম মহাসচিব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার উপরোক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির মহাসচিব আলহাজ্ব শাহাজাদ ইবনে দিদার, যুগ্ম মহসচিব আলহাজ্ব মাহবুবুল হক খান, চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি ছাবের আহমদ, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক হাবিব উল্লাহ মাষ্টার, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেল প্রধান অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, করোনা মৃতের কাফন-দাফন এবং রোগী সেবা কর্মসূচির সদস্য আহসান হাবীব চৌধুরী হাসান, সদস্য এরশাদ খতিবী প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এড. বখতিয়ার মহামারী করোনাকালে গাউসিয়া কমিটির মানবিক সেবা ক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ৮মার্চ ২০২০ তারিখে। তাই, বাংলাদেশের করোনাকাল গতকাল ৮মার্চ ২০২২ দুই বছর পূর্ণ করেছে। এই দুই বছরে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ যে ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং মানবিক অবদানের স্বাক্ষর রেখেছে তা দেশের ভুক্তভোগী সর্বসাধারণরা কমবেশি অবগত। এক রোগী সনাক্ত হবার কারণে আশ পাশের বাড়ি-ঘর সহ উক্ত এলাকায় যে কঠিন লক ডাউন এবং কোয়ারান্টাইন মানুষ দেখেছিল সে সময়ে, তার সাথে সাথে আরো বড় আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছিল করোনায় মৃতের গোসল-কাফন-গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ দাফন নিয়ে। গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ এমন একটা ভীতিকর পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে আশ্বস্থ করতে এবং ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াতে সবার আগে মাঠেনেমেছিল। ১৫মার্চ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের পরামর্শক্রমে, ২৯মার্চ সিভিল সার্জন, বিভাগীয় কমিশনার, মেয়র সহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে সাক্ষাৎ করে আমরা ঘোষণা করেছিলাম যে, কেউ করোনায় মারা গেলে তাদের গোসল-কাফন এবং দাফন করবে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মানবিক টিম। আমরা এপ্রিল ২০২০ প্রথম সপ্তাহেই এই কাজ করতে আগ্রহী সাতশত কর্মীর তালিকা শহরের পুলিশ এবং উপজেলা সমূহের নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাতে অর্পণ করেছিলাম। প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে, ১৩এপ্রিল ২০২০ পটিয়ার হাইদগাঁও গ্রামের করোনায়মৃত শিশুর দাফন কাজ দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের ঘোষণার বাস্তবায়ন। ১মে ২০২০ করোনায় মৃত মোহরার নুরুল আফসার খাঁনের জানাজা-দাফনের দায়িত্ব পালনকরতে এগিয়ে যান স্বয়ং গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ারমোহাম্মদ কমিশনার এবং করোনায় মৃতের দাফন সৎকার কর্মসূচীর উদ্যোক্তা ও প্রধানসমন্বয়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। সেদিন জানাজা পড়াতে মসজিদের ইমামদের কেউ না থাকাতে মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার কে ইমামের দায়িত্বও পালন করতে হয় জীবনেপ্রথম বার। এদিনের ঘটনা প্রচারিত হবার পর থেকে করোনায় মৃতের দাফন কাজে ভিন্ন এক প্রেরণায় এগিয়ে আসতে থাকে সংগঠনের সাধারণ কর্মীরাও। জুন ২০২০ থেকে, আমাদের এই মানবিক অভিযানে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক এম্বুলেন্স সহায়তা। ফলে, বেড়ে যায় কাজের আরো গতি ও পরিধি। এ মাস থেকে শুরু হয় আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে শ্বাসকষ্টের রোগীদের সহায়তা। এরপর, যুক্ত করি, ভ্রাম্যমাণ বিশেষ গাড়িতে কোভিড টেস্টের জন্য নমূনা সংগ্রহের কাজ। করেছি চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান। রোগীদের জন্য ছিল আমাদের ফ্রী এম্বুলেন্স সেবা। সংবাদ সন্মেলনে বখতিয়ার গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড/ ইউনিয়ন-ইউনিটসহ নিবেদিতপ্রাণ মানবিক কর্মীরা রাত দিন পরিশ্রম করে চরম দুঃসময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ান মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে যারা মানবতার জয়গান গেয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জনান। পাশাপাশি যে সব সামর্থবান ব্যক্তি ও দানবীর আমাদের এ মানবিক সেবা কার্যক্রমে অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন সহায়ক সরঞ্জাম, আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন-তাদেরসহ গণমাধ্যমের সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাই। এসময় মোছাহেব উদ্দিন বখতিযার বলেন, করোনা মহামারীতে গাউসিয়া কমিটির নিবেদিত প্রাণকর্মীরা ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেকোন দুর্যোগে তাৎক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগুন নিভিয়েছে, এমনকি সমুদ্রে ভেসে আসা লাশ উদ্ধারেও পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সাথী হয়ে দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এই পর্যন্ত ৫৪জন অজ্ঞাত এবং পঁচা গলা বিকৃত লাশের সম্মানের সাথে গোসল কাফন দাফন করেছে পুলিশের অনুরোধে। তাই, সরকার ও সংশিষ্ট প্রশাসন গাউসিয়া কমিটিবাংলাদেশ’র এই মানবিক কর্মীদের এখন থেকে যে কোন সরকারি কাজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে বলে ঘোষণা দেন। গাউসিয়া কমিটিকে জাতীয় ভাবেসম্মাননা জ্ঞাপন করলে কাজের উৎসাহ আরো বড়বে বলে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে দাবীনামা পেশ করা হয়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে মৃতের জন্য স্থায়ী গোসল-কাফন ঘর তৈরী করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে মৃত মানুষকে সম্মানের সাথে গোসলের সুবিধা রাখা, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের নতুন আবিষ্কার “মৃতেরভ্রাম্যমান গোসলখানা” অবলম্বনে সরকারিভাবে এবং বেসরকারি বড় হাসপাতাল গুলোতে ভ্রাম্যমাণ গোসলখানা তৈরী’র পদক্ষেপ নেওয়া, বড় হাসপাতালগুলোতে অন্তত দীর্ঘদিন লাশসংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকা, একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্যআনজুমান-এ রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটিবাংলাদেশকে জমি বরাদ্দসহ সরকারের সার্বিক সহায়তা কামনা করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ