চমেক হাসপাতালের ঔষধ নিয়ে চমকা বানিজ্য
মহানগর সংবাদদাতাঃ
বিগত কয়েকবছর ধরে চমেক হাসপাতাল নিয়ে এমনিতে রোগিদের অভিযোগের অন্ত নেই ! এর মধ্যে এখন গত ২/৩ মাস যাবত রোগিদের জন্য সরকারী বরাদ্ধকৃত বিনামূল্যের ঔষধ ফার্মেসিতে বিক্রির হিড়িক। নগরীর ইপিজেড-পতেঙ্গা থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক অপারেশন রোগী জরুরী বিভাগের ১৬নং ওয়ার্ডে ভর্তির পর ঐ রোগির বরাদ্ধৃকত ঔষধ গুলো বাইরে থেকে কিনে নিতে বলে দায়িত্বরত সিনিয়র চিকিৎসক ওসিনিয়র নার্স। রোগীর দাবি, মাত্র একটি ঔষধ দিলেও চিকিৎসকের দেয়া প্রেসক্রিপশনের বাকি ঔষধ না দিয়ে বাইরে থেকে ক্রয় করতে বলেন। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীদের সরকারি ঔষধ না পাওয়ার এমন ঘটনা নিত্যদিনের।সরকারিভাবে ঔষধ সরবরাহ থাকলেও রোগীদের ভাগ্যে তা না জোটার বিষয় নিয়ে এবার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

গতকাল বৃহস্পতিবার(১০মার্চ) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টার অভিযানেও ঔষধ সরবরাহের গড়মিলের তথ্যও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদক বলছে, এ বিষয়ে আরও অধিকতর অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। দুদক জানায়, সরকারিভাবে ঔষধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগীদের তা বিতরণ করা হয় না, এমন অভিযোগ পায় দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬ এ। এ প্রেক্ষিতেই চমেক হাসপাতালে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য যায় দুদক। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ, সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক ও কনস্টেবল মো. ইমরান হোসাইন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানকালে দুদক টিম-হাসপাতালের প্রধান ঔষধ স্টোর ও যন্ত্রপাতি স্টোর এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে ঔষধ সরবরাহের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহণ করেন। পরে সাংবাদিকদের দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ফার্মেসিতে গিয়ে ঔষধের রেজিস্ট্রারে গড়মিল পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত নথিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব নথি আরও যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন আছে। যাচাই বাছাই শেষে এ সংক্রান্ত বিষয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, ‘স্টোর থেকে দৈনিক চাহিদার বাইরে আরও অতিরিক্ত ঔষধ হাওলাত বাবদ নিলেও তা পরবর্তীতে খাতায় যুক্ত করা হয় কি-না তা নিয়ে প্রাথমিক গড়মিল লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু এ নিয়ে সংশ্লিস্টদের যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যতজনকে ঔষধ দেয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ঔষধ নিয়ে আসা হয় স্টোর থেকে। যদিও হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ, এ বিষয়ে তাদের লোকবল স্বল্পতার কারণে সঠিক সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রার খাতায় তুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দুদক টিম রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, রোগীরাও জানিয়েছেন যেসব ঔষধ সাপ্লাই আছে, তা তারা ঠিক মতো পাচ্ছে। আর যেসব ঔষধ সাপ্লাই ছিল না, এমন কিছু ঔষধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। এদিক থেকে দুদক টিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে বহির্বিভাগের ফার্মেসিতে একটি ক্যালসিয়াম ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। কিন্তু দেখা গেছে-আউটডোরে একদিন ঔষধ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে ২০০ পিস। কিন্তু সেদিন ঔষধের চাহিদা ছিল ৩০০ পিস। তখন স্টোর থেকে অতিরিক্ত ১০০ পিস আনা হয়। পরে ওই ১০০ পিস পরের দিনের চাহিদার সঙ্গে এডজাস্ট করা হয়। এ ক্ষেত্রে আগের দিনের সরবরাহের হিসাব পরের দিন লেখা হয়। মূলত এখানে গরমিল পেয়েছে দুদক। এটা মূলত সিস্টেমের কারণে, এ নিয়ে দুদক টিম বলেছেন হিসেব আরও স্বচ্ছ হলে ভালো হতো। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি বা অপচয় হওয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। চুরির ঘটনার পর থেকেই এখন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরাসরি ওয়ার্ড ইনচার্জ এসেই ঔষধ গ্রহণ করতে হবে, কোন স্টাফ দিয়ে ঔষধ দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, গত ৭ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ঔষধ পাচারকালে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় চমেক হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাটি নিয়ে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। রোগিরা প্রশাসন কে সরাসরি সঠিক তথ্য দেন যে, হাসপাতালের বেশী ঔষধ ক্রয় করে হাত বদল হয়ে তা চলে যাচ্ছে ফার্মেসীর মালিক-কর্মচারীদের হাতে। এই যেন, রাম রাজত্ব চলছে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে। চমেক হাসপাতাল টি দিন দিন যেন সেবা বানিজ্যর বৃহত পণ্যশালা হিসেবে গণ্য হয়ে উঠছেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ